শর্ত সাপেক্ষে জেলার ভেতরে গণপরিবহণ চলাচল শুরু
চলমান বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে আদেশ
স্টাফ রিপোর্টার: জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহণ চলাচলের সুযোগ দিয়ে চলমান ‘লকডাউন’ বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গতকাল বুধবার এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। তবে আগের মতোই লঞ্চ ও ট্রেন এবং দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকছে। এদিকে ঢাকা সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতি এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্বাস্থ্যবিধি মেনে জেলার ভেতরে বাস চলাচল করতে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানিয়েছে। প্রতি দুই আসনে একজন করে যাত্রী বহন করা হবে। লকডাউনে ‘জিপি’ নামে চাঁদা আদায় না করতেও অনুরোধ জানানো হয়। এবার লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানোর সঙ্গে নতুন ৬টি শর্ত যুক্ত করা হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিস আদেশে। ঈদে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে বাড়ি না যান সেজন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি বেসরকারি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ কর্মস্থলে (অধিক্ষেত্র) অবস্থান করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। জনসমাবেশ হয় এমন সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। তবে আগের মতোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা থাকবে শপিংমল, মার্কেট ও উৎপাদনমুখী কল-কারখানা। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে শপিংমল ও মার্কেটগুলোতে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন অভিযান চালাবে। মাস্ক না পরলে, স্বাস্থ্যবিধি না মানা হলে সংশ্লিষ্ট মার্কেট বন্ধ করে দেয়া হবে। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অফিস আদেশে নতুন যেসব শর্ত যুক্ত করা হয়েছে সেগুলো হলো-১. সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঈদের ছুটিতে আবশ্যিকভাবে নিজ নিজ কর্মস্থলে (অধিক্ষেত্রে) অবস্থান করবেন। ২. দোকানপাট/শপিংমল আগের মতো সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। সব দোকানপাট ও শপিংমলে স্বাস্থ্যবিধি যথাযথভাবে প্রতিপালন নিশ্চিত করতে হবে। অন্যথায় দোকানপাট শপিংমল তাৎক্ষণিকভাবে বন্ধ করে দেয়া হবে। ৩. আন্তঃজেলা গণপরিবহণ বন্ধ থাকবে। তবে বুধবারের (৫ মে) পর যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন সাপেক্ষে জেলার অভ্যন্তরে গণপরিবহণ চলাচল করতে পারবে। উল্লেখ্য, ট্রেন ও লঞ্চ চলাচল আগের মতোই বন্ধ থাকবে। ৪. মাস্ক ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। ৫. জনসমাবেশ হয় এ ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ রাখতে হবে। এবং ৬. কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সিটি করপোরেশন, জেলা সদর, পৌরসভা এলাকায় বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন/পৌরসভা মাইকিংসহ ব্যাপক প্রচার-প্রচারণার ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া জেলার মধ্যে বাস চলাচল এবং আন্তঃজেলা বাস চলাচল বন্ধ রাখার বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিতে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবের কাছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এছাড়া চলমান লকডাইনের অন্যান্য বিধিনিষেধ বহাল থাকবে।
গত ২৮ এপ্রিল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক আদেশে ৬ দফা নির্দেশনা দিয়ে লকডাউনের মেয়াদ ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ওই আদেশে ‘জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে’ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল ও দোকানপাট খোলার সময় তিন ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত করা হয়। আদেশে নতুন কতগুলো বিধিনিষেধ যুক্ত করা হয়। এছাড়া বিধিনিষেধের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে-কোনো ব্যক্তি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবে না (পণ্য পরিবহণ ছাড়া)। শুধু ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ বাংলাদেশিরা ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুমতি/অনাপত্তি ছাড়পত্র গ্রহণ সাপেক্ষে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রবেশকারীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও চীন থেকে আগত যাত্রীদের ভ্যাকসিন নেয়ার সনদসহ নন-কোভিড-১৯ সনদধারী যাত্রীরা নিজ বাড়িতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। সেক্ষেত্রে তাদের সংশ্লিষ্ট থানাকে আগমন ও কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি অবহিত করতে হবে। উল্লিখিত দেশ থেকে আগত শুধু নন-কোভিড-১৯ সনদধারীরা সরকার নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থায় থাকবেন। ৩-৫ দিনের মধ্যে চিকিৎসকরা তাদের পরীক্ষা করে সম্মতি দিলে তারা স্ব স্ব বাড়িতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। তবে সেক্ষেত্রেও তাদের স্ব স্ব থানাকে অবহিত করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য দেশ থেকে আগত যাত্রীরা সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ ব্যয়ে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার জনসমাগম এড়াতে প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে এ নিষেধাজ্ঞা আরও দুই দিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তবে সে সময় সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, গণপরিবহণ চালু ছিল বলে এই লকডাউন ছিল অনেকটাই অকার্যকর। এরপর ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আট দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। লকডাউনের মধ্যে দোকান-শপিংমল বন্ধ রাখাসহ ১৩টি নির্দেশনা দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। সেই মেয়াদ শেষ হয় গত ২১ এপ্রিল মধ্যরাতে। তবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয়নি। তাই লকডাউনের মেয়াদ ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময় সব ধরনের অফিস ও পরিবহণ বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তবে উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়ার দাবি জানানো হলে ‘জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে’ ২৫ এপ্রিল থেকে শপিংমল ও দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেয় সরকার। এই বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস ও গণপরিবহণ আগের মতোই বন্ধ থাকবে। তবে উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালাতে পারবে। সেই চলমান লকডাউন এবার আগামী ১৬ মে পর্যন্ত বাড়ানো হলো।