স্টাফ রিপোর্টার: দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুহার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনার নতুন সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে ৬ হাজার ৬৭৬ জনের শরীরে। গত ১৫২ দিনের মধ্যে এটিই এক দিনে সর্বোচ্চ সংক্রমণ। এর আগে, গত ১৮ আগস্ট এক দিনে ৭ হাজার ২৪৮ জনের শরীরে করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছিল। এরপর আর এক দিনে এত বেশি সংক্রমণ শনাক্ত হয়নি।
ওমিক্রনসহ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে তাতে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে দেশের হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তির কোনো জায়গা থাকবে না বলে আগাম সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘আমরা টিকা দিয়ে যাচ্ছি। ওমিক্রন ও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তাতে আমরা কিছুটা হলেও চিন্তিত ও আতঙ্কিত। আমরা চাই না, সংক্রমণ এভাবে বৃদ্ধি পাক। গত বছর ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সংক্রমণের হার ২৯-৩০ শতাংশে উঠেছিলে। এখন ধাপে ধাপে বাড়ছে, এভাবে বাড়লে ৩০ শতাংশে পৌঁছুতে সময় লাগবে না। হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যাও বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী এক-দেড় মাসের মধ্যে হাসপাতালে রোগী ভর্তির কোনো জায়গা থাকবে না। তখন চিকিৎসা দেয়া দুরূহ হয়ে পড়বে।’ স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ঢাকায় এখন যারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের ৬৯ শতাংশই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে সংক্রমিত। আমরা ঢাকায় যে নমুনা পরীক্ষা করেছি, জেনোম সিকোয়েন্স করেছি, তাতে দেখা গেছে ওমিক্রন (আক্রান্তের) এখন ৬৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। যেটা আগে ১৩ শতাংশ ছিল। আমরা গত ১০ দিনের মধ্যেই এই তথ্য পেয়েছি। আমরা মনে করি ঢাকার বাইরেও একই হার হবে।’
গতকাল দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ১০ জনের। আর গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছাড়িয়েছে ২০ শতাংশ। গত ১৬ আগস্টের পর এই প্রথম নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ২০ শতাংশ ছাড়াল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির স্বাক্ষরিত কভিড-১৯ সংক্রান্ত নিয়মিত বিজ্ঞপ্তিতে গত ২৪ ঘণ্টার করোনা সংক্রমণের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তির তথ্য বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৮৫৫টি ল্যাবে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে আরটি-পিসিআর ল্যাব ১৫৩টি, জিন এক্সপার্ট ল্যাব ৫৭টি ও র্যা্পডি অ্যান্টিজেন টেস্ট ল্যাব ৬৪৫টি। এসব ল্যাবে পরীক্ষার জন্য সারা দেশের বিভিন্ন বুথ থেকে ৩২ হাজার ৪৩১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। এদিন মোট নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ৩১ হাজার ৯৮০টি। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে অ্যান্টিজেন টেস্টসহ নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা দাঁড়াল ১ কোটি ১৮ লাখ ৯৩ হাজার ৪০৫টিতে। এর মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে ৮১ লাখ ৭৭ হাজার ২৫৭টি, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ৩৭ লাখ ১৬ হাজার ১৪৮টি। এখন পর্যন্ত দেশে মোট করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হলো ১৬ লাখ ২৪ হাজার ৩৮৭ জনের শরীরে। আগের দিন দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় এই হার আরও এক দফায় বেড়েছে প্রায় ৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণের হার ছিল ২০ দশমিক ৮৮ শতাংশ। আর এখন পর্যন্ত মোট নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের দিন দেশে করোনা সংক্রমণ নিয়ে আটজন মারা গেলেও গত ২৪ ঘণ্টায় এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ জন। এ নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে মোট মৃত্যু হলো ২৮ হাজার ১৫৪ জনের। সংক্রমণ বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃতদের মধ্যে চারজন পুরুষ, ছয়জন নারী। এর মধ্যে সাতজন সরকারি ও তিনজন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ২৪ ঘণ্টায় যে ১০ জন করোনা সংক্রমণ নিয়ে মারা গেছেন তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ তিনজনের বয়স ৬১ থেকে ৭০ বছর। দুজন করে মারা গেছেন ৩১ থেকে ৪০, ৭১ থেকে ৮০ ও ৮১ থেকে ৯০ বছর বয়সীদের মধ্যে। বাকি একজনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছর। মৃত ১০ জনের মধ্যে সাতজনই ঢাকা বিভাগের। আরও দুজন মারা গেছেন চট্টগ্রামে। আর একজনের মৃত্যু হয়েছে বরিশাল বিভাগে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ