স্টাফ রিপোর্টার: উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনের পথে রওনা হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। মঙ্গলবার রাতে কাতারের আমীরের পাঠানো বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্সে করে তিনি লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। কাতারে সংক্ষিপ্ত যাত্রাবিরতি দিয়ে তিনি লন্ডন পৌঁছাবেন। বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তিনি যাবেন লন্ডন ক্লিনিকে। ওই হাসপাতালেই তার প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সফরে দীর্ঘ সাত বছর পর ছেলে তারেক রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হবে বিএনপি চেয়ারপারসনের। ওদিকে চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাত্রায় তাকে আবেগঘন বিদায় জানিয়েছেন দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ। গুলশানের বাসা ফিরোজা থেকে রাত আটটার পর খালেদা জিয়ার গাড়িবহর বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা করে। ফিরোজা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত পুরো সড়কের দুই পাশে হাজার হাজার নেতাকর্মী অবস্থান নিয়ে খালেদা জিয়াকে আবেগঘন বিদায় জানান। তারা খালেদা জিয়ার নামে বিভিন্ন সেøাগান দেন। খালেদা জিয়ার বিদেশ সফরকে কেন্দ্র করে বিকাল থেকেই তার বাসভবন ও আশপাশে বিএনপি এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা ভিড় করেন। ফিরোজা থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়কের পাশে দলীয় নেতাকর্মীরা অবস্থান নেন। সন্ধ্যায় ফিরোজায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের শীর্ষ নেতারা খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বিমানবন্দরের পুরো এলাকা জুড়ে অবস্থান নেন। ওদিকে খালেদা জিয়ার গাড়িবহর ফিরোজা থেকে বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নেতাকর্মীদের স্লোগানে গুলশান এলাকা প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। প্রাইভেটকার এবং মোটরসাইকেলসহ হাজার হাজার নেতাকর্মী বিএনপি চেয়ারপারসনকে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেন। উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে লন্ডনে নিয়ে যেতে কাতারের আমীর শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো ‘বিশেষ এয়ার এম্বুলেন্স’ গত সোমবার রাতে ঢাকায় পৌঁছায়। বিমানবন্দরের ভিআইপি টারমারকে কঠোর নিরাপত্তার ঘেরাটোপে এয়ার এম্বুলেন্সটি রাখা হয়। এই বিশেষ উড়োজাহাজে ৪ জন চিকিৎসক ও প্যারামেডিক্স রয়েছেন। বিমানটিতে সর্বাধুনিক চিকিৎসা সুবিধার যন্ত্রপাতি ও ল্যাবরেটরিও হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে তার মেডিকেল বোর্ডের ৬ জন সদস্যও রয়েছেন। তারা হলেন- মেডিকেল বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদার, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক এফএম সিদ্দিক, অধ্যাপক নরুদ্দিন আহমেদ, ডা. জাফর ইকবাল, অধ্যাপক এজেডএম জাহিদ হোসেন ও ডা. মোহাম্মদ আল মামুন। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে আছেন তার ছোট ছেলে প্রয়াত আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী সৈয়দা শর্মিলা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এনামুল হক চৌধুরী, নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল ও খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব এ বি এম আবদুস সাত্তারসহ ব্যক্তিগত কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী। দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পাঁচ মাস পর চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। প্রাথমিক পরিকল্পনায় তার লন্ডন হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা বলা হলেও এখন লন্ডনের হাসপাতালে আপাতত চিকিৎসা নেবেন। তবে লন্ডন ক্লিনিক সুপারিশ করলে সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার পর যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ডে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় হসপিটালে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা নেয়ার কথা রয়েছে। সবশেষ ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যেই চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। সেবার চোখ ও পায়ের চিকিৎসা নিয়েছিলেন। ৭৯ বছর বয়সী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন। ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে আইসিইউতে রেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিকেল বোর্ডের মাধ্যমে তাকে দীর্ঘ সময়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। তার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ড বার বার তাকে বিদেশ নেয়ার পরামর্শ দিলেও তৎকালীন শেখ হাসিনার সরকার তাকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.