বন্ধ থাকছে গণপরিবহণ ও সরকারি-বেসরকারি অফিস : আগের মতোই স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্পকারখানায় কাজ
স্টাফ রিপোর্টার: করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে চলমান ‘লকডাউনে’ বিধিনিষেধের মেয়াদ আগামী ৫ মে পর্যন্ত বাড়িয়েছে সরকার। নতুন আদেশে ‘জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনা করে’ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শপিংমল ও দোকানপাট খোলার সময় তিন ঘণ্টা বাড়িয়ে সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত করা হয়েছে। আগে ছিল বিকেল ৫টা পর্যন্ত। পাশাপাশি আগের নির্দেশনা মোতাবেক উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালাতে পারবে। তবে গণপরিবহণ ও সরকারি-বেসরকারি অফিস আগের মতোই বন্ধ থাকছে। এছাড়া স্থল, নৌ ও বিমানে যেকোনো ব্যক্তি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের (পণ্য পরিবহণ ব্যতীত) ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে শুধু ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ বাংলাদেশিরা ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুমতিসাপেক্ষে বিশেষ বিবেচনায় দেশে প্রবেশ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।
উল্লিখিত নির্দেশনাসহ চলমান বিধিনিষেধ ৫ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়িয়ে বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এতে বলা হয়, ‘করোনাজনিত রোগ সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় কয়েকটি শর্ত সংযুক্ত করে আগামী ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ৫ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বিধিনিষেধ আরোপের সময় বর্ধিত করা হলো।’ সেখানে সরকারের সাম্প্রতিক কয়েকটি সিদ্ধান্তের কথাও চলমান বিধিনিষেধের তালিকায় যুক্ত করে দেয়া হয়েছে। নতুন আদেশের বিধিনিষেধের মধ্যে রয়েছে: ১. স্থল, নৌ ও বিমানে যেকোনো ব্যক্তি ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের (পণ্য পরিবহণ ব্যতীত) ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তবে, শুধু ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণ বাংলাদেশিরা ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের অনুমতি/অনাপত্তি ছাড়পত্র গ্রহণসাপেক্ষে বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে প্রবেশকারীদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিন সংক্রান্ত বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রণীত বিধিনিষেধ কঠোরভাবে অনুসরণের জনা স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ২. দোকানপাট/শপিংমলসমূহ সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনসাপেক্ষে খোলা রাখা যাবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনের বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শ্রম মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট বাণিজ্য সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট বাজার সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটি প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেবে। নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। ৩. আসন্ন ঈদুল ফিতরের নামাজের বিষয়ে ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনানুযায়ী কার্যক্রম নিতে হবে। ৪. মধ্যপ্রাচ্য, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ও চীন থেকে আগত যাত্রীদের ভ্যাকসিন নেওয়ার সনদসহ নন-কোভিড-১৯ সনদধারী যাত্রীরা নিজ বাড়িতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। সেক্ষেত্রে তাদের সংশ্লিষ্ট থানাকে আগমন ও কোয়ারেন্টিনের বিষয়টি অবহিত করতে হবে।
৫. উল্লিখিত দেশ থেকে আগত শুধু নন-কোভিড-১৯ সনদধারীরা সরকার নির্ধারিত কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থায় থাকবেন। ৩-৫ দিনের মধ্যে চিকিৎসকরা তাদের পরীক্ষা করে সম্মতি দিলে তারা নিজ নিজ বাড়িতে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন। তবে সেক্ষেত্রেও তাদের নিজ নিজ থানাকে অবহিত করতে হবে। ৬. অন্যান্য দেশ থেকে আগত যাত্রীরা সরকার নির্ধারিত হোটেলে নিজ ব্যয়ে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকবেন।
এসব বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সব সিনিয়র সচিব/সচিবদের নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় সরকার জনসমাগম এড়াতে প্রথমে ৫ থেকে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত নানা বিধিনিষেধ আরোপ করে। পরে এ নিষেধাজ্ঞা আরও দুদিন বাড়িয়ে ১৩ এপ্রিল পর্যন্ত করা হয়। তবে সে সময় সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানা, গণপরিবহণ চালু ছিল বলে এই লকডাউন ছিল অনেকটাই অকার্যকর। এরপর ১৪ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে আট দিনের কঠোর লকডাউন শুরু হয়। লকডাউনের মধ্যে দোকান-শপিংমল বন্ধ রাখাসহ ১৩টি নির্দেশনা দেওয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। সেই মেয়াদ শেষ হয় গত ২১ এপ্রিল মধ্যরাতে। তবে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির উন্নতি না-হওয়ায় লকডাউনের মেয়াদ ২৮ এপ্রিল মধ্যরাত পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ সময় সব ধরনের অফিস ও পরিবহণ বন্ধের পাশাপাশি বাজার-মার্কেট, হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। তবে উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালানোর অনুমতি দেয়া হয়। লকডাউনের মধ্যে ব্যাংকে লেনদেন করা যাচ্ছে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। সতর্কতার অংশ হিসাবে সীমিত জনবল দিয়ে বিভিন্ন শাখা চালু রেখেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির পক্ষ থেকে দোকান ও শপিংমল খুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২৫ এপ্রিল থেকে শপিংমল ও দোকানপাট সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা রাখার অনুমতি দেয় সরকার। বুধবার সেই বিধিনিষেধের মেয়াদ ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হলো। এই বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি সেবা দেয়া প্রতিষ্ঠান ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস ও গণপরিবহণ আগের মতোই বন্ধ থাকবে। তবে উৎপাদনমুখী শিল্পকারখানা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ চালাতে পারবে।
সীমিত ব্যাংক লেনদেন: সরকার ঘোষিত ‘কঠোর বিধিনিষেধ’ আরও এক সপ্তাহ বাড়িয়ে ৫ মে পর্যন্ত করা হয়েছে। এ সময়ে ব্যাংকে লেনদেন চলবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। বুধবার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকারের কঠোর বিধিনিষেধের কারণে বর্তমানেও ব্যাংকে লেনদেন হচ্ছে ১০টা থেকে ১টা পর্যন্ত। লেনদেনের এ সময়সীমা আরও এক সপ্তাহ একই থাকবে।
নতুন করে নির্দেশনা দিয়ে সেটিই জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কারণ, এর আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ১৪ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত লেনদেনের সময় ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্ধারণ করেছিল। এরপর তা ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এবার একই সময়সীমায় ব্যাংক চলবে আগামী ৫ মে পর্যন্ত। নির্দেশনায় স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব সাইট সুপারভিশনের মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল ইসলাম। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১-এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয়।
রাজধানীর ব্যাংক শাখাগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যাংকে এখন খুব বেশি গ্রাহকের ভিড় নেই। সব ব্যাংকই অনলাইন ও অ্যাপভিত্তিক লেনদেন সেবা চালু করেছে। এ ছাড়া মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমেও লেনদেন করা যাচ্ছে।
সেবার আওতা বাড়লো আর্থিক প্রতিষ্ঠানের: করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে বিধিনিষেধের আওতা বাড়ানোর কারণে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সেবার আওতাও বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি সার্কুলার জারি করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এতে বলা হয়, সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি ছাড়া অন্য দিনগুলোয় আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগসহ ঢাকায় একটি ও প্রতি জেলায় সর্বোচ্চ একটি করে শাখা খোলা রাখতে হবে। এসব শাখায় লেনদেন হবে সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত। আলোচ্য সময়ে গ্রাহকদের আমানত নগদায়ন, ঋণের কিস্তি জমা নেয়াসহ অন্যান্য জরুরি আর্থিক সেবা দেয়া হবে। এর আগে গত ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ঢাকায় একটি ও ঢাকার বাইরে একটি শাখা খোলা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এখন নতুন করে প্রতি জেলায় একটি করে শাখা খোলার নির্দেশ দেয়া হলো। এ নির্দেশনা আগামী ৫ মে পর্যন্ত বহাল থাকবে। শেয়ারবাজারে লেনদেন : বিধিনিষেধ চলাকালীন সময়ে শেয়ারবাজারে সকাল ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত লেনদেন হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
চুয়াডাঙ্গায় মধ্যরাতে অসহায় ছিন্নমূল মানুষের দ্বারে দ্বারে সেহেরি পৌঁছে দিচ্ছে ছাত্রলীগ
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ