রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে ওআইসিকে সক্রিয় করতে কাতারের ভূমিকার আহ্বান

দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রধান উপদেষ্টার গোলটেবিল বৈঠক

স্টাফ রিপোর্টার: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন শুরু করার জন্য ওআইসিকে সক্রিয় করতে কাতারকে জোরালো ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবর্তন শুরু করতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য কাতার তাদের কূটনৈতিক প্রভাব কাজে লাগাতে পারে। আন্তর্জাতিক ভূরাজনৈতিক ও ভূকৌশলগত বিদ্যমান প্রেক্ষাপটে, কাতার জোরালোভাবে তাদের সংহতি প্রকাশ করে এই সংকট সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া ওআইসি দেশগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে তহবিল সংগ্রহ জোরদার ও রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের পক্ষে মতপ্রকাশের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। গতকাল বুধবার কাতারের দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে প্রধান উপদেষ্টা এক গোলটেবিল বৈঠকে  অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন। ‘জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীকে ঘিরে সামাজিক ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ : রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ’ শীর্ষক এক উচ্চপর্যায়ের গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ। অধ্যাপক ইউনূস দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, দুর্ভাগ্যবশত, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উদ্ভূত নানা সংঘাতের কারণে আন্তর্জাতিক মনোযোগ ধীরে ধীরে রোহিঙ্গা সংকট থেকে সরে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ১৯ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের দাখিলকৃত ৮,২৯,০৩৬ জনের তালিকার মধ্যে মিয়ানমার সরকার ২,৩৯,০৫৬ জনকে যাচাই করেছে এবং এর মধ্যে ১,৭৬,১৯৮ জনকে মিয়ানমারে বসবাসকারী ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। বাংলাদেশ টেকসই প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন ড. ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা জানান, বাংলাদেশ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে রোহিঙ্গা মুসলিম ও মিয়ানমারের অন্য সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলন আয়োজন করবে। এই সম্মেলনে কাতারের উচ্চপর্যায়ের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ। তিনি কাতার ফাউন্ডেশনকে এই বৈঠকের আয়োজন এবং নীতিগত বিবৃতির বাইরে গিয়ে বাস্তবসম্মত সমাধান, জবাবদিহিতা ও সংহতির বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান। এদিকে দোহায় আর্থনা শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নানামুখী তৎপরতায় রোহিঙ্গা সংকট পুনরায় বৈশ্বিক আলোচনায় ফিরে এসেছে। রোহিঙ্গা সংকট বিশেষ করে বাংলাদেশে যে ১৩ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রিত আছে, একটা মানবিক সংকট। এই সংকট এক সময় বড় ধরনের আঞ্চলিক সংকট তৈরি করতে পারে এবং যা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ বিষয়গুলো বৈশ্বিক আলোচনা থেকে হারিয়ে যেতে বসেছিল। কিন্তু অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের নানা পদক্ষেপের কারণে রোহিঙ্গা ইস্যু বৈশ্বিক আলোচনায় ফিরে এসেছে। কাতারের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ক মন্ত্রী শেখ সাউদ বিন আবদুল রহমান বিন হাসান আল-থানি গতকাল দোহায় আর্থনা সম্মেলনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। বাংলাদেশের প্রস্তাবে রাজি হয়ে সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন সার্ভিস শাখায় ৭২৫ জন বাংলাদেশি সেনাসদস্যকে প্রেষণে নেয়ার সম্মতি প্রদান করায় প্রধান উপদেষ্টা শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির নেতৃত্বাধীন কাতার সরকারকে ধন্যবাদ জানান। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে স্পেসএক্সের গ্লোবাল এনগেজমেন্ট বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লরেন ড্রেয়ার দোহায় সাক্ষাৎ করেছেন। উভয়ে বাংলাদেশে স্পেসএক্স স্যাটেলাইট পরিষেবা শিগিগরই চালু করার ব্যাপারে চূড়ান্ত পর্বের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা করেন। দুই দশক ধরে ইলন মাস্কের সঙ্গে কাজ করা ড্রেয়ার জানান, এই অংশীদারত্বের অগ্রগতি নিয়ে তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন, আমরা প্রায় শেষ রেখায় পৌঁছে গেছি। আমি আমার টিমকে নির্দেশ দিয়েছি যে, মে মাসের মধ্যে প্রযুক্তিগত ক্ষেপণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকতে। সাক্ষাতে অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের মানুষের আগ্রহের কথা জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এটি একটি বড় খবর। মানুষ দিন গুনছে। সময় এলে আমরা তা উদ্যাপন করব বড় পরিসরে। এই অংশীদারত্ব পুরোপুরি শুরু হবে একটি প্রযুক্তিগত রোলআউটের মাধ্যমে এবং কয়েকটি চূড়ান্ত বিষয়ের সমাধান হলে। এছাড়া, ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠিত আরেকটি প্রতিষ্ঠান পেপ্যালও বাংলাদেশে স্পেসএক্সের কার্যক্রমে ডিজিটাল লেনদেনের সহায়ক হিসেবে বিবেচনায় রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টাকে লরেন ড্রেয়ার বলেন, শুরু থেকেই এটি ছিল আমাদের অংশগ্রহণ করা অন্যতম সুসংগঠিত ও কার্যকরী একটি উদ্যোগ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More