রোজার মাসে কেউ যেনো খাদ্য মজুতদারি করতে না পারে
ঢাকায় বঙ্গবন্ধুর জন্মবাষির্কী উপলক্ষে আ.লীগের আলোচনাসভায় প্রধানমন্ত্রী
স্টাফ রিপোর্টার: রোজার মাসে মানুষের যাতে কোনো কষ্ট না হয়, সে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সরকার নিয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে কেউ যাতে খাদ্য পণ্য মজুতদারি বা কালোবাজারি করতে না পারে সে জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি। গতকাল রোববার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবাষির্কী উপলক্ষ্যে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনাসভায় দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। তিনি এ আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ দেশের মানুষের জন্য কাজ করি। জাতির পিতা আমাদের দেশ দিয়ে গেছেন সেই দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমাদের লক্ষ্য। সামনে রমজান মাস, মানুষের যাতে কষ্ট না হয় যা যা প্রয়োজন আমরা কিন্তু তার ব্যবস্থা করেছি। সঙ্গে সঙ্গে এটাও আমাদের সবার নজর রাখতে হবে কেউ যেন ওসব খাবার মজুতদারি করতে না পারে, কালোবাজারি করতে না পারে তার জন্য সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপির সময় পাঁচ পাঁচ বার বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চাম্পিয়ন হয়। দুর্নীতিই তাদের নীতি এবং লুটপাট করে নিয়ে যায়। বাংলাদেশকে সম্পূর্ণ একটা ধ্বংস স্তুপে মধ্যে নিয়ে আসে। আবারও ভোট চুরি করে ১ কোটি ২৩ লাখ ভোয়া ভোট করে ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিলো কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সেটা মেনে নেয়নি। যার ফলে আন্দোলন এবং এর পরে জরুরি অবস্থা এদের অপকর্মের কারণেই। এর দুই বছর পর নির্বাচনে আমরা ক্ষমতায় আসি। ২৯ বছর তো ওই শক্তিগুলোই ক্ষমতায় ছিলো কি দিয়েছে তারা। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলেই এদেশের উন্নতি হয়। আজ বিএনপির নেতারা একটানা বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছে দেশটাকে নাকি আমরা ফোকলা বানিয়ে দিয়েছি, দেশটা নাকি শেষ করে দিয়েছি। দেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন কথাটা হচ্ছে চোখ থাকতে কেউ অন্ধ হলে তাকে কিছু দেখানো যায় না। ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়েছিলাম আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছি। সমগ্র বাংলাদেশে ওয়াইফাই কানেকশন, ইন্টারনেট ব্যবহার করছে। প্রায় ৮ কোটি মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, ১৩ কোটি মোবইল সিম ব্যবহার করে। এই সুযোগটা তারা ব্যবহার করছে, কিছুই করি নাই। আমাদের দেয়া বেসরকারি টেলিভিশন সেটাও ব্যবহার করছে। আমাদের দেয়া ডিজিটাল বাংলাদেশ, সেটাও ব্যবহার করছে। আর তারপরেও বলছে আমরা কিছুই করি নাই। আালোচনা সভায় শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, আমি আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বলবো আমরা যে মানুষের জন্য কাজ করি এটা মানুষের ঘরে ঘরে গিয়ে বলতে হবে। কারণ তাদের এই মিথ্যা, একটা মিথ্যা বার বার বলে বলে সেই মিথ্যাটাকেই তারা সত্য করতে চায়। কিন্তু তাদের কাছে মানুষ কি পেয়েছে, খাবারের জন্য হাহাকার। বিদ্যুৎ চাইতে গিয়ে গুলি খেয়ে মানুষ মারা গিয়েছে। কনসাটে ১০ জনের মতো মানুষ মেরে ফেলে দিয়েছে। শ্রমিক ন্যায্য মজুরি চেয়েছিলো বলে ২৭ জন শ্রমিককে রমজান মাসে গুলি করে হত্যা করেছিলো খালেদা জিয়া। ১৮ জন কৃষক সার চেয়েছিলো বলে হত্যা করেছিলো। তাদের তো এই রেকর্ড, তারা এই কাজগুলোই করে গেছে। আর আজকে কারও চাইতে হয় না, বিদ্যুৎ আমরা পৌঁছে দিয়েছি। আমরা মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। সুপেয় পানি সুবিধা, স্যানিটারি ল্যাট্রিনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত, খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা, চিকিৎসা সেবা, কনিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে ৩০ প্রকার ওষুধ আমরা দিচ্ছি। এখন আমরা সেখানে ইনসুলিনও বিনা পয়সায় দিয়ে যাবো, সে কাজটা আমরা শুরু করে দিয়েছি। মানুষের কল্যাণে যা যা করার আওয়ামী লীগ সেটাই করে। আর মানুষ ভালো থাকলে ওই বিএনপি-জামাতিদের মনে কষ্ট হয়-আমার যা মনে হয়। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এই মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছেন। আর তিনি এই দেশ স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন, তার বাংলাদেশে কোনো মানুষ অন্ন কষ্ট পাবে না, গৃহহীন থাকবে না। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত থাকবে না। প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমান উন্নত হবে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ কিভাবে উন্নত করবো যেটা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি, ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। শিক্ষা-দীক্ষায় প্রযুক্তি জ্ঞানে একটি স্মার্ট জনগোষ্ঠি সৃষ্টি হবে এবং এই দেশে এগিয়ে যাবে। হাজার ষড়যন্ত্র চক্রান্ত করে এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। এই বোমাবাজি, গুলি, গ্রেনেড হামলাকারি, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারি, মানুষের অর্থ পাচারকারী, এতিমের অর্থ আত্মসাৎকারী এরা কোনো দিনও এদেশের ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বাংলাদেশের মানুষ কখনও তাদের মেনে নেবে না। বাংলাদেশ জাতির পিতা শেখ মুজিবের বাংলাদেশ। সেই বাংলাদেশ যেভাবে তিনি চেয়েছিলেন সেভাবেই বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে বাঙালি চলবে, বাংলাদেশ তার সম্মান নিয়ে চলবে। জাতির পিতার জন্মদিনে এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, সেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের কাজ করতে হবে দেশের মানুষের কল্যাণে। আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জাতীয় সংসদের উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আফজাল হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি বজলুর রহমান, দক্ষিণের সভাপতি আবু আহদে মন্নাফী প্রমুখ। আলোচনাসভা পরিচালনা করেন প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ।