স্টাফ রিপোর্টার: শুধু ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ নয়, দেশের রাজনীতিতেও বড়সড় ঝড় ধেয়ে আসছে। আর তাতে সরকারের পরিণতি ভয়াবহ হবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ‘উত্তাল সমুদ্র থেকে ঘূর্ণিঝড় ধেয়ে আসছে। এ ঝড় শুধু প্রাকৃতিক ঝড় নয়। দেশের রাজনীতিতে ঝড় আসছে। যারা সরকারে আছেন, তাদের বলতে চায়-দেশের মানুষের মনের ও চোখের ভাষা বুঝে ক্ষমতা ছেড়ে দেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন। অন্যথায় আপনাদের পরিণতি হবে ভয়াবহ।’ শনিবার বিকেলে রাজধানীর নয়াপল্টনে ১০ দফা দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আগামীতে পাতানো নির্বাচন প্রতিহত করবে দেশের মানুষ। ভোটাররা ভোট দিতে পারবে না- এমন কোনো নির্বাচন আর করতে দেয়া হবে না। এ সরকারের পদত্যাগই আমাদের একামাত্র দাবি। শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে পারে না, এটা বিদেশিরাও জানেন।’ পাকিস্তানে চলমান রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে সুপ্রিম কোর্ট মুক্তি দিলেন। আর আমাদের আদালত জামিন বাতিল করে জেলে পাঠিয়ে দেন। গায়েবি মামলায় জেলা পাঠানো হয়।’ ফখরুল বলেন, ‘চাল, ডাল, তেল, ডিমের দাম হু হু করে বাড়ছে। রিকশাচালক-শ্রমিক ও খেটে খাওয়া মানুষ অসহায়। দেশের মানুষ বাজারে গিয়ে কান্না করছে। অথচ শেখ হাসিনা বিদেশে ১২৫ জনের বিশাল বহর নিয়ে তিন দেশে সফর করেছেন। এখন যদি দেশের মানুষ জিজ্ঞেস করে-আমাদের জন্য কী নিয়ে এসেছেন? তাদের কাছে কোনো উত্তর নেই।’ সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য সরকারের লোকদের বিদেশে অর্থপাচারই দায়ী। আজকে দেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিম্নবিত্ত হয়ে গেছে।’ লোডশেডিংয়ের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা ভুয়া। তিনি বলেছিলেন, লোডশেডিং নাকি জাদুঘরে পাঠিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখন কি অবস্থা?’ দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘দেশের জনগণ জানে কীভাবে ক্ষমতা ছাড়াতে হবে। সংবিধানের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় টিকে থাকার সুযোগ নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি না মানলে জনগণ এবার রাজপথে জবাব দেবে।’ স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘এ সরকারকে আর দেশে-বিদেশে কেউ চায় না।’ আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পরপরই দেশে বাকশাল কায়েম করেছে। এখন ভোটাধিকার হরণ করছে। সময় থাকতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়ে পদত্যাগ করুন।’ বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন ভোট চুরির প্রকল্পের একটি অংশ। সরকারের যেসব কর্মকর্তা এ ভোট চুরি সহায়ক হবেন, তাদেরকে আগামীতে চিহ্নিত করা হবে।’ সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েও এবার শেষ রক্ষা হবে না।’ ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন দলের চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন, কেন্দ্রীয় যুগ্মমহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান প্রমুখ। এছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও বক্তব্য রাখেন। সমাবেশ থেকে বিএনপি মহাসচিব গায়েবি মামলায় গ্রেফতার, নেতাকর্মীদের নির্যাতনের প্রতিবাদ ও ১০ দফা দাবি আদায়ে সারাদেশে ১৯ মে থেকে ২৭ মে পর্যন্ত জেলা ও মহানগর পর্যায়ে ধারাবাহিকভাবে বিক্ষোভ সমাবেশের ঘোষণা দেন।