মুজিব জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে নরেন্দ্র মোদি
দু’দেশের অগ্রযাত্রা পুরো অঞ্চলের উন্নয়নে জরুরি
স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যৌথ অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ের কথা জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তিনি বলেন, আমাদের উভয় দেশেই গণতন্ত্রের শক্তি রয়েছে। এগিয়ে যাওয়ার সুস্পষ্ট দূরদর্শিতা রয়েছে। ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ অগ্রযাত্রা এই পুরো অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য সমান জরুরি। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে আয়োজিত ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নরেন্দ্র মোদি বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর আর ভারতের স্বাধীনতার ৭৫ বছর একসঙ্গে পড়েছে। এটি আনন্দময় কাকতালীয় ঘটনা। আমাদের উভয় দেশেরই জন্য একবিংশ শতাব্দীর আগামী ২৫ বছর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ঐতিহ্য ও উন্নয়নের অংশীদার। আমরা লক্ষ্যও ভাগাভাগি করি, চ্যালেঞ্জগুলোও ভাগাভাগি করি। আমাদের মনে রাখতে হবে- বাণিজ্য ও শিল্পে আমাদের জন্য যেমন একই ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি সন্ত্রাসবাদের মতো সমান বিপদও রয়েছে। এই জাতীয় অমানবিক ঘটনাবলির পরিকল্পনাকারী ও বাস্তবে রূপদানকারী শক্তিগুলো এখনো সক্রিয়। আমাদের অবশ্যই তাদের থেকে সাবধানে থাকতে হবে। এদের মোকাবেলা করার জন্য সংগঠিতও হতে হবে। তিনি আরও বলেন, দুটি দেশের সরকারই এই সংবেদনশীলতা উপলব্ধি করছে আর সেদিকেই অর্থবহ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা প্রমাণ করেছি যে, পারস্পরিক বিশ্বাস ও সহযোগিতা থাকলে সব সমস্যারই সমাধান করা যায়। আমাদের স্থলসীমান্ত চুক্তি এর সাক্ষী। করোনার এই দুঃসময়েও দুটি দেশের মধ্যে সুন্দর সম্পর্ক বজায় রয়েছে। আমরা সার্ক কোভিড তহবিল গঠনে সহযোগিতা করেছি। নিজেদের মানবসম্পদের প্রশিক্ষণে সহায়তা করেছি। ভারত খুবই আনন্দিত যে, ভারতের তৈরি টিকাগুলো বাংলাদেশের ভাইবোনদের কাজে লাগছে। এ সময় ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক জোরদারে দু’দেশেরই তরুণদের মধ্যে আরও উন্নত যোগাযোগ সমান প্রয়োজনীয় বলেও মন্তব্য করেন নরেন্দ্র মোদি। একই সঙ্গে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ৫০ বছর উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশের ৫০ তরুণ উদ্যোক্তাকে ভারতে আসার আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, তারা ভারতে এসে আমাদের স্টার্ট-আপ আর ইকোসিস্টেম উদ্ভাবনে যোগ দিক। পুঁজিপতি উদ্যোক্তাদের সঙ্গে দেখা করুন। আমরাও তাদের কাছ থেকে শিখবো, তারাও শেখার সুযোগ পাবেন। পাশাপাশি আমি বাংলাদেশি যুবকদের জন্য সুবর্ণজয়ন্তী বৃত্তি ঘোষণা করছি। ‘বাংলাদেশ ইতিহাসে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবেই টিকে থাকবে, বাংলাকে দাবিয়ে রাখতে পারে, এমন কোনো শক্তি নেই’- বঙ্গবন্ধুর এই বক্তব্য তুলে ধরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরোধিতাকারীদের জন্য একটি সতর্কবার্তা ছিল এবং বাংলাদেশের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাসও ছিল। আমি আনন্দিত যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ বিশ্বে তার সক্ষমতা প্রদর্শন করছে। যারা বাংলাদেশ গঠনে আপত্তি করছেলিনে, যারা এখানকার মানুষকে নীচু চোখে দেখতেন, যারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দিহান ছিলেন, বাংলাদেশ তাদের ভুল প্রমাণ করছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ দুই দেশের সম্পর্ক আরও জোরদার করছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এই গৌরবময় মুহূর্ত ও উৎসবে অংশ নিতে আপনারা ভারতকে আন্তরিক আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এ উপলক্ষ্যে ১৩০ কোটিরও বেশি ভারতীয় ভাইবোন তাদের ভালোবাসা এবং শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বাংলাদেশের জন্য। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বপ্নের সোনার বাংলার জন্য তিনি প্রাণ উৎসর্গ করেছেন। ভারতীয়দের জন্য এটি গর্বের বিষয় যে, আমরা তাকে ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কারে’ সম্মানিত করার সুযোগ পেয়েছি।
বাংলাদেশের জন্য যারা অত্যাচার সহ্য করেছেন, রক্ত দিয়েছেন এবং জীবনের ঝুঁকি নিয়েছেন তাদের প্রতি সম্মান জানান নরেন্দ্র মোদি। এ সময় তিনি শহিদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, শিক্ষাবিদ রফিকউদ্দিন আহমেদ, ভাষাশহিদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বার এবং শফিউরকে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, আমি মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের ভাইবোনদের পাশে থাকা ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাহসী সৈন্যদেরও প্রণাম জানাই। যারা মুক্তিযুদ্ধে রক্ত দিয়েছিলেন, আত্মত্যাগ করেছিলেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে ভূমিকা রেখেছিলেন। ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ, জেনারেল অরোরা, জেনারেল জ্যাকব, ল্যান্স নায়েক অ্যালবার্ট এক্কা, গ্রুপ ক্যাপ্টেন চন্দন সিং, ক্যাপ্টেন মোহন নারায়ণ রাও সামস্তসহ এমন অনেক বীর রয়েছেন যাদের নেতৃত্ব ও সাহসের কাহিনি আমাদের অনুপ্রেরণা জোগায়। বাংলাদেশ সরকার এই বীরদের স্মরণে আশুগঞ্জে একটি স্মৃতিসৌধ উৎসর্গ করেছে। এজন্য ধন্যবাদ জানাই।