মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে বাবার মতো জীবন দিতেও প্রস্তুত আছি
রংপুর আওয়ামী লীগের বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাবা-মা-ভাই সব হারিয়েছি। বাংলাদেশের মানুষ, বাংলাদেশের জনগণ-এটাই তো আমার সংসার, এইটাই তো আমার আপনজন। আপনাদের মাঝে খুঁজে পাই বাবার স্নেহ, ভাইয়ের স্নেহ, বোনের স্নেহ। কাজেই আপনাদের জন্য যদি প্রয়োজন হয়, এই বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে বাবার মতো জীবন দিতেও আমি প্রস্তুত।’ বুধবার বিকালে রংপুর জিলা স্কুল মাঠে রংপুর জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত বিভাগীয় মহাসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ যত দিন সরকারে ছিল রংপুরে কখনো মঙ্গা হয়নি। খাদ্যের অভাব দেখা দেয়নি। দুর্ভিক্ষ দেখা দেয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারে এলে ও নৌকা মার্কায় ভোট দিলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। নৌকা মার্কা ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নতি হয়; কৃষকের ভাগ্য পরিবর্তন হয়। নৌকা ক্ষমতায় আছে বলেই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ গেছে; বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে। কাজেই নৌকায় ভোট দিয়ে দেশবাসী আওয়ামী লীগকে আবারও তাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন সেটাই আমি চাই।
তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যা করার পর দেশে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল, হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু হয়েছিল। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলা শুরু হয়েছিল। ১৯৮১ সালে বাংলাদেশে এসে এই রংপুর বিভাগের প্রতিটি জেলায়, বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমি ঘুরেছি। দেখেছি ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার। আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল, যখনই সরকার গঠন করতে পারব এই মানুষগুলোর ভাগ্য আমরা পরিবর্তন করব। দেশের মানুষের জীবনমান উন্নত করব। আজ অন্তত এটুকু বলতে পারি-আজকের বাংলাদেশে দরিদ্রতার হার কমাতে পেরেছি, ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ করতে পেরেছি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৯৬ সালে যখন সরকারে ছিলাম তখনো মঙ্গা ছিল না। ২০০১ সালে যখন খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসে তখন দুই হাতে টাকা পয়সা লুট করে। সে ও তার ছেলেরা মিলে এ দেশে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে। আবার দেশে মঙ্গা শুরু হয়। ২০০৮-এর নির্বাচনের পর আমি যে পদক্ষেপ নিয়েছি, তারপর থেকে এ দেশের মানুষের কোনো কষ্ট হয় নাই। আওয়ামী লীগ সরকারে এলে, নৌকা মার্কায় ভোট পেলে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়, সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। বিএনপি দেশ ধ্বংস করে, আওয়ামী লীগ দেশ গড়তে কাজ করে।’ তিনি বলেন, ‘অনেক আন্দোলন করে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছে। মানুষ এখন শান্তিতে ভোট দিতে পারে। ভোট দেয়ার জন্য ভোটার তালিকা ও স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করেছি।’ নৌকা ক্ষমতায় এলে কৃষকের উন্নয়ন হয় বলে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা যাবে না। বিশ্ব অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যেও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ওয়াদা করেছিলাম ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেব। আজকে আমরা ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিতে পেরেছি। কয়লা ও গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ নিয়ে কয়েক দিন কষ্ট হয়েছে। এখন আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন আরো বৃদ্ধি করেছি। ভারত থেকে কিনে আনছি। নেপাল থেকেও কিনে নিয়ে আসব। বিদ্যুতের কোনো সমস্যা থাকবে না। রংপুর মহানগর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ডা. দেলোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এন আশিকুর রহমান। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক একেএম শাহাদাত হোসেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি এর আগে রংপুরে ২৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটারসহ পাঁচটি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। প্রায় ১ হাজার ২৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের অধীনে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রংপুর শহর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে ৪১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ একর জমির ওপর ১০তলা বিশিষ্ট নভোথিয়েটার নির্মাণ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন সচিবালয়ের রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়, রংপুর জেলার বিট্যাক সেন্টার, রংপুর মেডিক্যাল কলেজের মহিলা হোস্টেল এবং বিএমডিএর আঞ্চলিক কার্যালয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। তাছাড়া উদ্বোধন করা ২৭টি প্রকল্পের মধ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রকল্পগুলো হলো-শেখ রাসেল মিডিয়া সেন্টার, শেখ রাসেল ইনডোর স্টেডিয়াম, শেখ রাসেল সুইমিং পুল, রংপুর পালিচড়া স্টেডিয়াম, বিভাগীয় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। রংপুর সিটি করপোরেশনের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো—রংপুর সিটি সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাল, রংপুর সিটি অ্যাসফল্ট প্ল্যান্ট ও স্টোর ইয়ার্ড। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো-নলেয়া নদীর ১৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার পুনঃখনন, আলাইকুমারী নদীর ১৯ দশমিক ২৪ কিলোমিটার পুনঃখনন, নৈমুল্লা বিলের ১৪ দশমিক ৫৭ একর পুনঃখনন, চিকলী বিলের ১৯ দশমিক ৬৩ একর পুনঃখনন, ভারারদহ ও পাটোয়া কামরী বিলের ২২ দশমিক ৮৯ একর পুনঃখনন। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো—পীরগাছা উপজেলা চৌধুরানী থেকে শঠিবাড়ী আরঅ্যান্ডএইচ পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজ, পীরগাছা উপজেলা ভেন্ডবাড়ী থেকে খালাশপীর পর্যন্ত রাস্তার সংস্কারকাজ, কাউনিয়া উপজেলা টেপামধুপুর থেকে রাস্তার পুনর্বাসন কাজ। মিঠাপুকুর উপজেলার গোপালগঞ্জ ঘাটে ঘাঘট নদীর ওপর ৯৬ মিটার সেতু নির্মাণ, গঙ্গাচড়া উপজেলার বুড়িরহাট-কাকিনা আরঅ্যান্ডএইচ সড়কে ৪০ মিটার সেতু নির্মাণ এবং কাউনিয়া উপজেলার পল্লীমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কাম আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণকাজ। স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতাধীন প্রকল্পগুলো হলো-রংপুর মেডিক্যাল কলেজ বহুমুখী ভবন, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলায় হেলেঞ্চা ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র, রংপুর বিভাগের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়, পীরগঞ্জে মাদারগঞ্জ ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় ১৪ নম্বর চতরা ইউনিয়নে ১০ শয্যাবিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার পায়রাবন্দ ইউনিয়নে ১০ শয্যাবিশিষ্ট বেগম রোকেয়া আধুনিক হাসপাতাল এবং রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় খালাশপীর ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণকেন্দ্র। অন্য প্রকল্পগুলো হলো-পীরগঞ্জ উপজেলার ২ হাজার ৫৪০ মিটার নদীর তীর সংরক্ষণ এবং রংপুর কারখানা ও সংস্থা পরিদর্শন অফিস ভবন।