স্টাফ রিপোর্টার: ভোজ্যতেলের সংকট দূর না হতেই নতুন সংকট দেখা দিয়েছে চিনির বাজারে। বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে এক লাফে প্রতি কেজিতে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। এছাড়াও ফের বেড়েছে আটা ও ময়দার দাম। অন্যদিকে এ সপ্তাহেও যথারীতি চড়া প্রায় সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দাম। সাধারণ ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় চিনি ও ময়দার বাজারে উত্তাপ বিরাজ করছে। শুক্রবার বাজারগুলোতে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হয়েছে ১০৮-১১০ টাকা। তবে বাজারে কোনো প্যাকেট চিনি বিক্রি করতে দেখা যায়নি। এছাড়াও এদিন অনেক দোকানিকেই চিনি বিক্রি করতে দেখা যায়নি।
প্রায় ১ মাস ধরে সংকট চলছে দেশের চিনির বাজারে। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে গত ৪ মাসে ভোগ্যপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কমেছে চিনির দাম। এ বছর মার্চে সর্বোচ্চ ৫৯৫ ডলারে বিক্রি হয়েছিল প্রতিমণ চিনি। যা রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ছিল ৪৯০ ডলার। বিশ্ব বাজারে ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকা এই পণ্যটির প্রতিমণের বর্তমান বুকিং দর ৪২০ ডলার। ফলে গত মাসের শেষ দিকে দেশের বাজারেও চিনির দাম ৬ টাকা কমানো হয়েছিল। কিন্তু এক সপ্তাহের মাথায় তা আবার বাড়ানো হলেও তবু দূর হচ্ছে না চিনির সংকট।
বরাবরের মতো দাম বৃদ্ধির জন্য আমদানিকারকরা ডলারের মূল্য বৃদ্ধি, এলসি জটিলতাসহ দুষছেন বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা না পাওয়াকে। তবে খুচরা বিক্রেতাদের তথ্যানুযায়ী, সরকার চিনির দাম ফের বাড়ালেও কোম্পানিগুলোর সরবরাহ বাড়েনি। ফলে বাজারে চিনির সংকট পুরো মাসজুড়েই চলছে। পাইকাররা এতদিন মজুতকৃত চিনি ছেড়ে দিলেও সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার কোনো ইঙ্গিত না থাকায় এ সপ্তাহে বাজারে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। সরবরাহও খুবই কম। যদিও এতদিন সামান্য সরবরাহ আর নিজস্ব মজুত দিয়ে ব্যবসা চালিয়েছি, কিন্তু এখন তা শেষ হয়ে যাওয়ায় সংকট আরও বেড়েছে।’
পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, ‘গত মাসের শেষদিকে দাম কমার কারণে বাজারে চিনির সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছিল প্রতিষ্ঠানগুলো। পরবর্তীতে দাম বাড়লেও অনেক কোম্পানি চিনি সরবরাহ করছে না। মূলত আমদানিকারক ও পরিবেশক প্রতিষ্ঠানগুলোর মর্জির ওপর নির্ভর করে বাজারে সরবরাহ। যদিও কেউ কেউ সরবরাহ করছেন- তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, চিনির দাম আরেক দফা বাড়াতে বাজারে এমন সংকট তৈরি করা হচ্ছে।
এদিকে প্যাকেটজাত চিনির গায়ে মূল্য থাকার কারণে দোকান থেকে বিক্রেতারা পণ্য সরিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ সাধারণ ক্রেতাদের। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার অধিকাংশ দোকানে প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি হয়েছে। কিন্তু শুক্রবার খোলা চিনির দাম দাম বেড়ে যাওয়া দোকানিরা প্যাকেটজাত চিনি বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকি এদিন অনেক দোকানে চিনি বিক্রি করতে দেখা যায়নি।
এদিকে হঠাৎ করেই পাইকারিতে বেড়েছে আটা ও ময়দার দামও। বিশেষ করে ময়দার দাম। এদিন পাইকারি বাজারে ৫০ কেজির ময়দার বস্তায় প্রায় ১ হাজার টাকা বেড়ে বিক্রি হয়েছে ৩৩০০-৩৪০০ টাকা। ফলে সপ্তাহ ব্যবধানে খুচরা বাজারে ময়দায় প্রায় একলাফে ১৭ টাকা বেড়েছে প্রতি কেজিতে।
ময়দার ক্ষেত্রেও এমন অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধির জন্য বাজারে সরবরাহকারী ও বিপণন প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর দায় দিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, অল্পকিছু প্রতিষ্ঠান যারা একইসঙ্গে আমদানি ও বাজারজাত করে থাকে। দেখা গেছে আমদানি চেইন ঠিক থাকলে বাজারজাত না পণ্যের সরবরাহ সংকটে দাম বৃদ্ধি পায়।
অন্যদিকে এ সপ্তাহেও যথারীতি চড়া রয়েছে অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম। আগের দামেই বিক্রি হয়েছে চাল, ডাল, ডিম, পেঁয়াজ, রসুনসহ মাছ-মাংশ ও সবজি। তবে কিছুটা কমে ১৬০ হয়েছে আদার দাম। যা এ মাসের শুরুতে বিক্রি হয়েছিল ১১০ টাকায়। এ ছাড়াও ডিমের ডজন দেড়শ’ টাকাসহ অধিকাংশ সবজি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকার ওপরে। যথারীতি ৩২০ সোনালি মুরগি আর ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার মুরগির কেজি।
এ সপ্তাহে উচ্চমূল্যে অপরিবর্তিত আছে মাছের বাজারও। তবে গত সপ্তাহের তুলনায় দোকানগুলোতে নির্ধারিত মূল্যে বোতলজাত সয়াবিনের সরবরাহ বেড়েছে। তবে যারা এখনো আগের দামের তেল বিক্রি শেষ করতে পারেনি তারা নতুন দামে পণ্য অর্ডার করছে না বলে জানা গেছে। ফলে অনেক বড় দোকান ও সুপারশপগুলোতে এখনো আগের বাড়তি দামে তেল বিক্রি করছে।
এদিকে আকারভেদে প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হয়েছে ৩৫০-৪০০ টাকা; কাতল ৩০০-৩৫০ টাকা; পাবদা ও শিং মাছের কেজি বিক্রি হয়েছ ৪৫০-৫০০ টাকা। অন্যদিকে বোয়াল ও আইর মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৬৫০-৭০০ টাকা; ট্যাংরা মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৬০০ টাকা; পোয়া মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৪৫০ টাকা এবং কোড়াল মাছের কেজি বিক্রি হয়েছে ৯৫০ টাকার উপরে। এছাড়াও বাড়তি দামে বিক্রি হয়েছে হরিনা ও বাগদা চিংড়িও। প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকা এবং গলদা চিংড়ি বিক্রি হয়েছে ৭৫০ টাকার উপরে। অন্যদিকে পাঙাস, তেলাপিয়া ও চাষ কৈ মাছ বিক্রি হয়েছে যথাক্রমে ২২০ টাকা, ১৮০ টাকা ও ২৫০ টাকা কেজি দরে।