স্টাফ রিপোর্টার: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সরকারের বাইরের রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য গড়ার কাজ শুরু করেছে বিএনপি। ইতোমধ্যে অন্তত ৩০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা শেষ। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে আন্দোলন ইস্যুতে তারা এ ঐক্য গড়তে চায়। শুক্রবারের মধ্যে আরও ২৫টি বিরোধী রাজনৈতিক দল ও বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিকের সঙ্গে আলোচনার কথা রয়েছে। পরে সবার মতামত পর্যালোচনা শেষে রোববার ঐক্যের বিষয়ে দলগুলোর কাছে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব তুলে ধরার কথা রয়েছে। ওইদিন আলোচনা সভার মাধ্যমে তা তুলে ধরা হতে পারে। বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক এসব তথ্য জানিয়েছেন।
এদিকে আজ থেকে করোনা মহামারিসংক্রান্ত বিধিনিষেধ উঠে যাচ্ছে। করোনার বিধিনিষেধ জারির পর থেকে বিএনপিসহ সরকারি ও বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচি স্থগিত ছিল। আজকের পর থেকে তা ফের মাঠে গড়াতে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামছে বিএনপি। তারা আপাতত তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে সারা দেশে বিক্ষোভ, মানববন্ধনসহ বেশকিছু কর্মসূচির একটি খসড়া তৈরি করেছে। যা আজ জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় চূড়ান্ত হবে। কর্মসূচি দু-একদিনের মধ্যে সংবাদ সম্মেলনে জানানোর কথা রয়েছে। অন্যদলগুলোও রাজপথে নামার জন্য কর্মসূচি চূড়ান্ত করছে।
দলীয় সূত্র জানায়, আন্দোলন ও ঐক্য গড়ার বিষয়ে রোববার রাতেও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) প্রেসিডেন্ট কর্নেল (অব.) ড. অলি আহমদের রুদ্ধদ্বার বৈঠক হয়। এতে দুদলের মধ্যে দীর্ঘদিনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়। একই সঙ্গে আগামীদিনে একসঙ্গে পথ চলার বিষয়ে দুদলের নেতারাই অঙ্গীকার করেন। এছাড়া আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করেছে বিএনপি। গত এক মাসে বাংলাদেশে নিযুক্ত বেশ কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক কমিটির সদস্যরা।
ঐক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন এখন সবার দাবি। এ ইস্যুতে আমরা বৃহত্তর ঐক্য গড়তে চাই। ইতোমধ্যে অনেক দলের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আনুষ্ঠানিভাবে আমরা শিগগিরই সরকারবিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করব। সবাইকে দেশ ও গণতন্ত্রের স্বার্থে একটা জায়গায় আসতে হবে।
বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, ‘বৃহত্তর ঐক্য’র বিষয়ে সভা-সেমিনারে নেতারা বিভিন্ন বক্তব্যে দিয়েছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে বিরোধী দলগুলোর কাছে বিএনপি তার অবস্থান আনুষ্ঠানিকভাবে স্পষ্ট করতে চায়। এজন্য রোববার দলের একটি কর্মসূচিকে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজনীতা তুলে ধরে ঐক্যের ডাক দেওয়া হতে পারে। সে লক্ষ্যে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করছেন দলের শীর্ষ নেতারা। ওইদিন বৃহত্তর ঐক্যের একটি নমুনা কিংবা নিজেদের প্রস্তাবের খসড়া তুলে ধরতে চায়। সে ডাকে সাড়া দেওয়া দলগুলোর সঙ্গে পরে আনুষ্ঠানিকভাবে মতবিনিময় শুরু করবে বিএনপি।
নেতারা আরও জানান, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অধ্যায়ের ৪ দশক পার হচ্ছে। ১৯৮২ সালের ১ জানুয়ারিতে রাজনীতিতে যুক্ত হন। এই ৪০ বছর পূর্তিকে সামনে রেখেও বিএনপি কিছু কর্মসূচি পালন করবে। যেখানে দলীয় চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক সংগ্রাম ও ইতিবাচক কাজগুলো তুলে ধরা হবে। ফখরুল-অলির রুদ্ধদ্বার বৈঠক, একসঙ্গে পথ চলার অঙ্গীকার : এদিকে আন্দোলন ও ঐক্য গঠনের বিষয়ে বিএনপি ও লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) মধ্যে বৈঠক হয়েছে। রোববার রাতে অলির মহাখালীর ডিওএইচএসের বাসায় সাড়ে ৩ ঘণ্টার এক অনানুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকের কথা এলডিপি মহাসচিব স্বীকার করলেও এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। তবে সূত্র জানায়, বৈঠকে দীর্ঘদিনের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। বিএনপি নেতারা আন্দোলন ও বৃহত্তর ঐক্যের বিষয়ে অলি আহমদের পরামর্শসহ সহযোগিতা চেয়েছেন। তিনিও একসঙ্গে কাজ করবেন বলে বিএনপি নেতাদের জানিয়েছেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ