বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধের সংকট : এখনও পানিবন্দি অর্ধকোটি মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার: বন্যাকবলিত ১৩ জেলার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে গোটা দেশ। সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের সহায়তায় ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তাই ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় মানুষের দেয়া শুকনা খাদ্যসহ নানা ত্রাণসামগ্রীর পাহাড় জমেছে। প্রতিদিন বিলিও হচ্ছে শত শত টন। অথচ বন্যা দুর্গত দুর্গম এলাকার লাখো মানুষ দুই-তিন দিন ধরে অভুক্ত দিন কাটাচ্ছেন। বিশুদ্ধ পানির অভাবে ওষ্ঠাগত তাদের প্রাণ। এদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দুর্যোগ সংক্রান্ত দৈনিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, রোববার বিকেল ৩টা পর্যন্ত বন্যায় এখনো দেশের ১১টি জেলায় ১০ লাখ ৪৭ হাজার ২৯টি পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। এসব এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫২ লাখ ৯ হাজার ৭৯৮। এখন পর্যন্ত বন্যায় ১৮ জনের মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। নিখোঁজ আছেন দুজন। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে চট্টগ্রামে পাঁচজন, কুমিল্লায় চার, নোয়াখালীতে তিন, কক্সবাজারে তিন, ফেনীতে এক, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এক ও লক্ষ্মীপুরে একজন। এছাড়া নিখোঁজ দুজন মৌলভীবাজারের। প্রতিবেদনে বলা হয়, জেলাগুলোতে ৩ হাজার ৬৫৪টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। সেগুলোতে আশ্রয় নিয়েছেন ৪ লাখ ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। উদ্ধার কার্যক্রমের পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। বন্যা পরিস্থিতিতে সারাদেশের ১০টি জেলায় মোট ৮ লাখ ৩১ হাজার ৯৮ জন গ্রাহক বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন। বিচ্ছিন্ন হওয়া এলাকায় পুনরায় সংযোগ দিতে বিদ্যুৎ বিভাগ নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। রোববার দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের সদস্য (পরিচালন ও বিতরণ) দেবাশীষ চক্রবর্তী। তিনি বলেন, আমরা সাব স্টেশন এবং মোবাইল টাওয়ারগুলো অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চালু করছি। যেন মোবাইল টাওয়ারে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া যায়। পর্যায়ক্রমে মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করে আমরা বিদ্যুৎ সংযোগ দিচ্ছি। এদিকে বানভাসি দুর্গম এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, বেশিরভাগ প্রত্যন্ত অঞ্চলে এখনো কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি। বিশেষ করে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুরসহ বন্যাকবলিত অন্তত ৮ জেলার দুর্গম এলাকায় ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে। কেউ কেউ দূরে গিয়ে সামান্য শুকনা খাবার ও বিশুদ্ধ পানি জোগাড় করে আনতে যেয়ে জীবন ঝুঁকিতে পড়ছে। অথচ এসব এলাকায় সামর্থ্যবান নারী-পুরুষ ছাড়াও হাজার হাজার শিশু-কিশোর ও বৃদ্ধ মানুষ রয়েছে। তাদের একটি বড় অংশ না খেতে পেয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। স্থানীয়রা বলছেন, নৌকাসহ অন্যান্য জলযান সংকটে ত্রাণ দিতে আসা লোকজন প্রত্যন্ত এলাকায় যেতে পারছেন না। সড়কের পাশে যাদের পাওয়া যাচ্ছে তাদের মধ্যেই বারবার ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। এতে অনেকের ঘরে এক দেড় সপ্তাহের খাদ্য জোগাড় হলেও দুর্গম এলাকার বানভাসিরা এক মুঠো খাবারের প্রতীক্ষায় পথ চেয়ে বসে আছেন। বন্যা পরিস্থিতি ও ত্রাণ বিতরণ পর্যবেক্ষণকারীদের ভাষ্য, সরকারি ত্রাণ কিছুটা নিয়মমাফিক বিতরণ করা হলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সংগৃহীত ত্রাণসামগ্রী শুরু থেকেই অনেকটা অপরিকল্পিতভাবে বিলি করা হচ্ছে। সুষ্ঠু সমন্বয় ও বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা না থাকায় কেউ কেউ একাধিকবার ত্রাণ পেলেও অনেকে তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার কৌশলী ছক না থাকায় বন্যা দুর্গত দুর্গম এলাকার পানিবন্দি মানুষ অভুক্ত অবস্থায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। ত্রাণ পর্যবেক্ষণকারীরা বলছেন, অনেকেই অল্প কিছু ফান্ড বা ত্রাণ সংগ্রহ করে বন্যাদুর্গত এলাকায় যাচ্ছেন। এতে বন্যার্তদের সাহায্যের একটি বড় অংশ ব্যয় হয়ে যাচ্ছে ট্রান্সপোর্টে বা অন্যান্যভাবে। এ ক্ষেত্রে স্বেচ্ছাসেবকরা কৌশলী হলে সব ফান্ড এবং ত্রাণ যথাযথভাবে কাজে লাগানো যেত। তাই এ ব্যাপারে সরকারকে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে যে বা যারা ত্রাণ সংগ্রহ করছে তাদের একটি কাঠামোগত অবস্থায় নিয়ে আসতে হবে। যেহেতু এই বন্যার প্রভাব সামনে আরো অনেক দিন থাকবে সেহেতু এ বিষয়ে সুষ্ঠু পরিকল্পনা জরুরি। তা না হলে দুর্গম এলাকার বানভাসিরা ভয়াবহ বিপাকে পড়বেন। এদিকে ত্রাণ নিয়ে বন্যাকবলিত এলাকায় ছুটে যাওয়া মানুষও তাদের অসহায়ত্বের কথা নিঃসংকোচে স্বীকার করেছেন।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More