স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশে গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণে দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) পাশ কাটিয়ে এক মাসে তিন দফা দাম বাড়িয়েছে সরকার। চলতি ফেব্রুয়ারি মাস থেকে গ্যাস এবং বিদ্যুতের নতুন দাম কার্যকর হচ্ছে। এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে প্রকাশ্যে গণশুনানি ছাড়া সরকারের নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে। বিইআরসি আইন ২০০৩ সংশোধন করে জ্বালানি তেলের মতো গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ক্ষমতা এখন সরকারের হাতে নিয়ে নিয়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই আইন সংশোধন করে গ্যাস বিদ্যুতের দাম ইচ্ছামতো বাড়ানোর ক্ষমতা পেলো সরকার। জাতীয় সংসদের অধিবেশন আইন সংশোধনের বিল পাশের আলোচনায় একজন সংসদ সদস্য এই সংশোধনীকে কালো আইন হিসেবেও অভিহিত করেছেন। দাম বাড়ছে যখন-তখন সরকারের দাবি বিশেষ ক্ষেত্রে ব্যবহারের জন্য আইনের সংশোধন আনা হয়েছে। কিন্তু দেখা গেছে ডিসেম্বর মাসে অধ্যাদেশ জারি করে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ এবং শিল্পের গ্যাসের দাম ১৪-১৭৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে সরকারের নির্বাহী আদেশে। আবার জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে বিইআরসি আইনের সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে পাসের তিন দিনের মধ্যেই পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশের মতো বাড়ানো হয়। এ দফায় প্রান্তিক গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য ইউনিটপ্রতি ২০ পয়সা বাড়ানো হয়েছে। গ্যাস বিদ্যুতের মূল্যনির্ধারণে বিইআরসি আইনের সংশোধনকে দুঃখজনক হিসেবে উল্লেখ করেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এটাতো খুবই দুঃখজনক, সাংঘাতিক রকমের দুঃখজনক। দেখা যাচ্ছে মন্ত্রণালয় যে পদ্ধতিতে মূল্য নির্ধারণ করছে তাতে তারা সন্তুষ্ট না। আমিতো এ কারণে অসন্তুষ্ট, দুঃখিত এবং সাংঘাতিক রকমের নেতিবাচক একটা জিনিস হলো যে আমরা এই প্রক্রিয়ায় পিছিয়ে গেলাম।’এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে গণশুনানির মাধ্যমে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়াটি কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার সুযোগ ছিলো বলে অনেকে মনে করেন। এ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আয়-ব্যয়ের প্রকৃত তথ্য প্রাপ্তি এবং ভোক্তাদের প্রশ্ন করা এবং কথা বলার সুযোগ ছিলো। ইজাজ হোসেন বলেন, যেসব সংস্থা বিদ্যুৎ এবং গ্যাস বিতরণের সাথে জড়িত তাদের খরচ যুক্তিসঙ্গত কিনা কিংবা সেখানে কোনো অপচয় আছে কিনা সেটি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান থাকা দরকার। ‘এটা না থাকলে যা হবে তারা এখন যাই করুক না কেন সেটা আর প্রশ্ন করার কেউ থাকলো না।’ বিইআরসি আইন ২০০৩ অনুযায়ী জ্বালানি ও বিদ্যুতের মূল্য নির্ধারণের এখতিয়ার ছিলো কমিশনের। বিদ্যুৎ বা গ্যাস কোম্পানি গ্রাহকপর্যায়ে মূল্যবৃদ্ধির আবেদন করলে সেটি গণশুনানির মাধ্যমে যাচাই বাছাই, বিশেষজ্ঞ মতামত এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হতো। প্রতিষ্ঠানগুলো কোথায় কোন খাতে কিভাবে অর্থ ব্যয় করছে সেটিও প্রকাশ্যে আলোচনা হতো। ভোক্তাদের পক্ষ থেকে সেখানে যুক্তি তুলে ধরা এবং প্রশ্ন উত্থাপনের সুযোগ ছিলো। কমিশনে দাম বাড়ানোর আবেদন করা হলে যাচাই বাছাই করে সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত দেয়ার বিধান ছিলো বিইআরসি আইনে। ২০০৩ সালের আইনে বছরে একবার দাম বাড়ানোর সুযোগ ছিলো সেটি ২০২০ সালে সংশোধনী এনে প্রয়োজনে বছরে একাধিক বার মূল্যবৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করা হয়। পদ্ধতি অনুযায়ী বছরে একাধিকবার দাম সমন্বয়ের সুযোগ বিইআরসি আইনে থাকার পরও কেন সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্য নির্ধারণে আইনে সংশোধনী এনেছে সে প্রশ্ন অনেকের। এই সংশোধনী বিদ্যুৎ গ্যাসের মূল্য বাড়াতে সরকারের হাতে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেবে বলেই সমালোচনা করা হচ্ছে। ড. ইজাজ হোসেন বলেন, ‘আমি মনে করি এখন যে ফর্মুলায় এসে গেছি তাতে আমরা একটা ভীতির মধ্যে পড়ে গেছি যে এরপরের মাসে কত হবে? এর পরের মাসে নাও হতে পারে। কিন্তু তার পরের মাসে দশ পার্সেন্ট হতে পারে, তার পরের মাসে বিশ পার্সেন্টও হতে পারে। এখন ইচ্ছামতোই তারা বাড়াতে পারে।’