স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি জাতিসংঘের অধীনে মানবাধিকারবিষয়ক যে তদন্ত কমিশন চেয়েছে, তা সংস্থাটির এখতিয়ারে নেই মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট মূলত এসেছেন রোহিঙ্গা পরিস্থিতি দেখতে। এর সঙ্গে আরও অনেকের কমপ্লেইন গেছে, এগুলো উনি জেনেছেন। উনার এখতিয়ার আছে বলা যে, ‘বাংলাদেশ এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিক।’
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রশমনে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ও বর্তমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপকমিটি। এ সময় উপকমিটির পক্ষ থেকে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বস্ত্র বিতরণ করা হয়।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ফখরুল সাহেব বলছেন, তাকেই (মিশেল ব্যাচেলেট) নিন্দা করতে। এটা তো তার এখতিয়ার নেই। মনে হয় যেন ব্যাচেলেটই শেখ হাসিনার সরকারকে শাস্তি দিয়ে দেবে। মির্জা ফখরুল আবার বলেছেন, জাতিসংঘের অধীনেই তদন্ত কমিশন। এটা কোনোদিন হয়? ফখরুল সাহেব লেখাপড়া করেছেন, জাতিসংঘের এখতিয়ারটা জানেন না? এখতিয়ার হচ্ছে, জাতিসংঘ বাংলাদেশ সরকারকে বলতে পারে এসব বিষয়ে কনসার্ন আছে, তুমি এই ব্যাপারে ইনভেস্টিগেট করো। কিন্তু তাদের অধীনে হবে না, আর ব্যাচেলেটও সাজা দিতে পারবে না। এটা তার এখতিয়ারে নেই।
‘সরকার খাদের কিনারায়’-বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ কথা শুনছি ১৩ বছর ধরে। আজ নয় কাল; রোজার ঈদের পর, কোরবানি ঈদ, কোরবানি ঈদের পর পরীক্ষা, এইভাবে বন্যা, এভাবে একটার পর একটা শুধু দিন-তারিখ দিয়েছে। দেখতে দেখতে ১৩ বছর। এই সময়ে একদিনও একটা আকর্ষণীয় মিছিল তাদের নেত্রীর মুক্তির দাবিতে এই শহরে করতে পারেনি। তাদের নেতিবাচক রাজনীতি আন্দোলনেও ফেল, নির্বাচনেও ফেল। শক্তি পরীক্ষা করবেন? বড় বড় কথা না বলে আগামী নির্বাচনে আসেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। দেখা যাবে জনপ্রিয়তা কার?
বিএনপি নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, শেখ হাসিনাতে সারা দুনিয়া প্রশংসা করে। আর আপনারা হিংসায় জ্বলেন, মরেন। এই হিংসা করতে করতে সরকারের পতন ঘটাতে ঘটাতে ১৩টা বছর চলে গেল। এখন মানুষের প্রশ্ন-কবে দেখা দেবে সোনার হরিণ, ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন। সব স্বপ্ন। এই স্বপ্ন, রঙিন খোয়াব দেখতে দেখতে আপনারাই এখন খাদের কিনারায় পড়ে যাবেন। বেশি দেরি নেই। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, কামরুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণবিষয়ক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী।
ষড়যন্ত্র-হত্যা করে ক্ষমতা পাওয়া যাবে না : এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) অডিটোরিয়ামে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনের সোনার হরিণ দেখা না দিলে ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন দেখা মিলবে না। এই দেশে আন্দোলনে জিতলে নির্বাচনেও জয়ী হওয়া যায়। ষড়যন্ত্র করে, কাউকে হত্যা করে ক্ষমতা পাওয়া যাবে না।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব স্মরণে আলোচনা সভার আয়োজন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ। এতে সভাপতিত্ব করেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস। আলোচক ছিলেন গবেষক, ইতিহাসবিদ ও প্রাবন্ধিক অধ্যাপক ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয়, সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য প্রমুখ। সভা পরিচালনা করেন ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন।
মির্জা ফখরুল ইসলামের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, অনেক চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশকে শ্রীলংকা বানানোর জন্য। কিন্তু লাভ হয়নি। এখনো আমাদের রিজার্ভ ৩৯ বিলিয়নের কাছাকাছি। গত ছয় মাসে যত রেমিট্যান্স এসেছে এর আগের ছয় মাসেও তা আসেনি। তবে বৈশ্বিক আর্থিক পরিস্থিতির মূল্য বাংলাদেশকে দিতে হচ্ছে।
সুদিন আসবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনা মানুষের কষ্ট বোঝেন। সরকারপ্রধান হয়ে তিনি প্রকাশ্যেই বলেছেন, ‘মানুষ কষ্ট করছে’। এই কষ্ট লাঘবে তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এই কষ্ট সাময়িক, এই দুর্দিন চলে যাবে। সুদিন আবার আসবে।