বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশ গিলে খাবে
ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের
স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের মাধ্যমে রাজধানীতে বড় শোডাউন করেছে ক্ষমতাসীন দল। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরাতন বাণিজ্যমেলা মাঠে আয়োজিত সম্মেলনে ঢাকার বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। বিশাল এই আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, বিএনপি আবার ক্ষমতায় গেলে দেশসুদ্ধ গিলে খাবে। তাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। আন্দোলনে খেলা হবে। খেলা হবে চট্টগ্রামের পলো গ্রাউন্ডে। তিনি বলেন, রংপুরে তিনদিন ধরে সমাবেশ হচ্ছে। কত রঙ-বেরঙের নাটক। তিনদিন আগে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে লোক এনে মাঠে শুইয়ে রেখেছে। মঞ্চের সামনে শুয়ে আছে, বাড়ির ছাদের ওপর শুয়ে আছে, গুদাম ঘরে শুয়ে আছে। ফখরুলের খবর কি? ফখরুল শুয়ে আছে টাকার বস্তার ওপরে। আরে টাকা। কতো টাকা। দল না বুঝি। টাকা পাইলেই বিএনপি বুঝি। টাকা পাইলেই খুশি। ফখরুল সাহেব, আমরা দেখেছি চট্টগ্রামে লাখের কাছাকাছি, ময়মনসিংহে ৩০ হাজার, খুলনায় ৩০ হাজার, রংপুরে কত ৫০/৬০ হাজার হয়েছে। আর ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কতো লোক হয়েছে, খবর নেন। টেলিভিশনের দেখে নিয়েন। ঢাকার ছবি দেখেন আর রংপুরের ছবি দেখেন। এখানেতো শেখ হসিনা নাই। দেখা হবে পলোগ্রাউন্ডে। চট্টগ্রামে পলোগ্রাউন্ডে শেখ হাসিনা যাবেন সেদিন দেখাবো ১০ লাখ লোক। আপনারা ১০ লাখ মুখে বলবেন আমরা বাস্তবে দেখাবো। ঠিক আছে? খেলা হবে। ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে বক্তব্য দেয়া শেষে ওবায়দুল কাদের বেনজীর আহমেদকে সভাপতি ও পনিরুজ্জামান তরুণকে জেলার সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নাম ঘোষণা করেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনে খেলা হবে। নির্বাচনে খেলা হবে। ভোট চুরির বিরুদ্ধে খেলা হবে। খেলা হবে ভোট জালিয়াতির বিরুদ্ধে, খেলা হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে। খেলা হবে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে তাদের বিরুদ্ধে। খেলা হবে ভুয়া ভোটার তালিকার বিরুদ্ধে। টাকা উড়ে আকাশে, ঢাকা উড়ে বাতাসে। টাকা উড়ে মহল্লায়। টাকার খেলা আর হবে না। খেলা হবে জনতার। যাদের হাতে মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ নিরাপদ নয়, তাদের সঙ্গে খেলা হবে। যাদের হাতে গণতন্ত্র নিরাপদ নয়, তাদের হাতে স্বাধীনতা নিরাপদ নয় তাদের সঙ্গে খেলা হবে। রেডি আছেন? সবাই রেডি থাকেন। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ৪৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে সৎ নেতা শেখ হাসিনা। সবচেয়ে দক্ষ প্রশাসকের নাম শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সফল কূটনীতিকের নাম শেখ হাসিনা। সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতার নাম শেখ হাসিনা। সবচেয়ে সাহসী নেতার নাম শেখ হাসিনা। মৃত্যুর মিছিলে দাঁড়িয়ে তিনি জীবনের জয়গান গান। ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে তিনি সৃষ্টির পতাকা উড়ান। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বিএনপি’র সময় রিজার্ভ ছিল ৩.৮। চার বিলিয়ন ডলারও ছিল না। শেখ হাসিনা ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিলেন। বৈশ্বিক সংকটে রিজার্ভ এখন ৩৬ বিলিয়ন ডলারে এসেছে। বিএনপি এদেশের রিজার্ভ গিলে খেয়েছে। বিএনপি এদেশের অর্থনীতি গিলে ফেলেছে। বিএনপি স্বাধীনতার আদর্শ গিলে ফেলেছে। এবার যদি ক্ষমতায় যেতে পারে বিএনপি দেশসুদ্ধ গিলে খাবে। সাবধান! বিএনপি থেকে সাবধান! অনেক জায়গায় লেখা থাকে কুকুর থেকে সাবধান! আমরা বলি বিএনপি থেকে সাবধান!
বিএনপি’র উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে আসেন। তত্ত্বাবধায়ক ভূত মাথা থেকে নামান। তত্ত্বাধায়ক আর হবে না। তত্ত্বাবধায়ককে আদালত ফেলে দিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে মিউজিয়ামে পাঠিয়েছে। এই তত্ত্বাবধায়ক না হলে নির্বাচনে যাবেন না? যাবেন, যাবেন। আপনারা নির্বাচনে যাবেন। যাবেন ঠিকই। কিন্তু সাদা পানি ঘোলা করে। গাধা পানি ঘোলা করে খায়। সময় আসলে দেখা যাবে। আপনাদের নেতাটা কে? নেতা কে? মুচলেকা দিয়ে লন্ডনে চলে গেছে জীবনে রাজনীতি করবে না। ফখরুল সাহেবকে নির্দেশনা দেয় লন্ডন থেকে। যেমনি নাচায় তেমনি নাচে, পুতুলের কি দোষ। বাংলাদেশের মানুষ জানে। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার পরিবারের কারো হাওয়া ভবন নেই। সবাই চাকরি করে, কাজ করে খায়। শেখ রেহানা লন্ডনে বাসে করে যাতায়াত করেন। সাধারণ জীবন। তাদের ছেলে-মেয়েদের দিকে তাকান। জয়, পুতুল, ববি প্রত্যেকে চাকরি করে খায়। কারো ব্যবসা নেই। কারো হাওয়া ভবন নেই। বিএনপি আবারো ভোট চুরি করবে। গণতন্ত্র হরণ করবে। বঙ্গবন্ধুকে খুন করেছে, শেখ হাসিনাকে ২১ আগস্ট হত্যা করতে চেয়েছিল কে? এই বিএনপি। এই খুনিদের সঙ্গে জনগণ নেই।
যতো নাচানাচি, লাফালাফি করেন, যতই মনে করেন ক্ষমতায় চলে গেছেন! কতো সুখ। কাজ হবে না। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, মনে রাখবেন আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ থাকলে ওরা যতই সমাবেশ করুক ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারবে না ইনশাআল্লাহ্। ঢাকা জেলার এই সম্মেলন ঘিরে গতকাল সকাল থেকেই নেতাককর্মীদের সমাগম দেখা যায়। বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীরা বিভিন্ন রঙের পোশাক পরিধান করে সমাবেশে যোগদান করেন। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আগত নেতাকর্মীরা প্ল্যাকার্ড, ব্যানার নিয়ে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। এছাড়াও নৌকার আদলে গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি. হাতির পিঠেও লোকজন আসে। বাস ট্রাকে করে বাদ্যযন্ত্রের তালে সেøাগানে সেøাগানে নেতাকর্মীরা সমাবেশে যোগ দেন। নেতাকর্মীদের জন্য সমাবেশস্থলে উপজেলা ভিত্তিক আলাদা বসার স্থান করা হয়। মিছিল নিয়ে নেতাকর্মীরা সমাবেশস্থলে উপস্থিত হন। এ সময় তারা আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা ও সংশ্লিষ্ট উপজেলার সংসদ সদস্যের হয়ে সেøাগান দেন। বেলা আড়াইটার দিকে শুরু হয় সমাবেশ। সম্মেলনের উদ্বোধন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য এডভোকেট কামরুল ইসলাম এমপি। বেনজির আহমেদের সভাপতিত্বে এই সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ও আওয়ামী লীগের জেলা পর্যায়ের নেতারা বক্তব্য রাখেন। সভাপতিম-লীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আজকের এই সম্মেলনে আপনাদের উচ্ছ্বাস সবাইকে উদ্বেলিত করবে।
আজ যারা হুঙ্কার দিচ্ছেন সরকার পতন করবেন। আজকের সম্মেলন প্রমাণ করে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবেলার ক্ষমতা নেতাকর্মীদের ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আছে। দেখা হবে নির্বাচনে। প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, আমি যখন ২০০৭ সালে জেলে ছিলাম। ওবায়দুল কাদের সঙ্গে ছিলেন। শেখ হাসিনাও জেলে ছিলেন। একটা ষড়যন্ত্র হয়েছিল। তখন শেখ হাসিনাকে ছাড়া নির্বাচনের কথা বলা হচ্ছিলো। শেখ হাসিনা আমাদের জেল থেকে বার্তা দিয়েছিলেন, এই ষড়যন্ত্র যাতে প্রতিহত করা হয়। তৃণমূল থেকে যাতে আন্দোলন করা হয়। তখন তৃণমূল থেকে আন্দোলন হয়। এ সময় নো হাসিনা, নো ইলেকশন রব উঠেছিল। আর এই আন্দোলনের অন্যতম অংশ ছিল ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ। আগামীতেও আমরা ঢাকা জেলা থেকে ৫টি এমপি ইনশাল্লাহ্ জননেত্রীকে উপহার দেবো। তিনি আরও বলেন, বিএনপি এখন বড় বড় কথা বলছে। তত্ত্বাবধাক সরকার না হলে নির্বাচনে আসবে না। আমি বলতে চাই আমাদের নির্বাচন শেখ হাসিনার আন্ডারেই হবে। কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার হবে না। নির্বাচনে আসলে আসেন, না আসলে নাই। প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মির্জা ফখরুল সাহেব ঢাকার সম্মেলন দেখেন মাঠ পুরো ভরে গেছে। জনগণের দল আওয়ামী লীগ আপনাদের ক্ষমতাচ্যুত করেছে। আপনারা ভেবেছেন, আবার হাওয়া ভবন তৈরি করবেন। বাংলা ভাই সৃষ্টি করবেন।
আমরা বেঁচে থাকতে তা হতে দেবো না। জিয়াউর রহমান বেঁচে থাকলে শেখ মুজিবকে হত্যার দায়ে জিয়ার ফাঁসি হতো। প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, আজকের সম্মেলনের মধ্যদিয়ে মেসেজ দেয়া হলো। একটা জেলার সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কতো লোক হয়। আমরা বলতে চাই, তত্ত্বাবধায়ক সরকার এই দেশে আসবে না। খালেদার মামলা তত্ত্বাবধায়ক সরকার দিয়েছিল। এই সরকার আপনাদের নেতাকে হুইল চেয়ারে বসিয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা ভুলে যান। আগামী নির্বাচন হবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে। আপনারা নির্বাচনে আসবেন। যুগ্মসাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, বিএনপি জামায়াত আন্দোলন সংগ্রামের নামে দেশটাকে অস্থির করতে চায়। আমরা কোনো ষড়যন্ত্র মেনে নেবো না। আমরা সকল সাম্প্রদায়িক শক্তিকে মোকাবেলা করবো। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আজকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সারা দেশে সুসংগঠিত। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ চললে সুসংগঠিত থাকবে। তারা বলছে ডিসেম্বরে ঢাকা শহর দখল করবে। এই রকম কথা বার্তা শুনছি। তারা নাকি মন্ত্রী পরিষদও গঠন করে ফেলেছে। কীভাবে আপনারা মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন, আমার জানা নেই। আওয়ামী লীগ ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না। ভয় করে না। আওয়ামী লীগ ভোটে বিশ্বাস করে। জনগণ আবারো ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয়ী করবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এক হয়ে কাজ করছে বলেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।
সারা বিশ্বে আজ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। তুলনা করলে বাংলাদেশ এখনো কঠিন পর্যায়ে যায়নি। এখন একটু বিদ্যুতের কষ্ট চলছে, আগামী ডিসেম্বরে লোডশেডিংয়ের সমস্যা শেষ হবে বলে আশা করি। শিক্ষামন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি বলেন, নেতাকর্মীরা শুধুমাত্র সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন তা না। এই দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে সেই বার্তা দিচ্ছেন। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। আজ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি চলছে। যুদ্ধ চলছে। কিন্তু আমি বলবো শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা অনেক ভালো আছি। আজ যারা গণতন্ত্রের মায়াকান্না করছে তারা অপশক্তি। আসুন আমরা অপশক্তিকে রুখে দেই। সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নজরুল হামিদ বিপু, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমানসহ জেলা ও উপজেলা নেতারা। সভাপতিত্ব করেন সংসদ সদস্য আলহাজ বেনজির আহমেদ। সভা সঞ্চালনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান।