স্টাফ রিপোর্টার: স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছে বিএনপির হাইকমান্ড। এর আগে যেভাবে শূন্য দুটি পদে নতুন দুই নেতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো একইভাবে নীতিনীতির্ধারণী ফোরামের শূন্যপদ পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এক্ষেত্রে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠনরা এসব পদে আসছেন বলে দলের অভ্যন্তরে আলোচনা চলছে।
বিএনপি সূত্রমতে, কাউন্সিল করার নির্ধারিত সময় পার হলেও কবে নাগাদ জাতীয় কাউন্সিল করা সম্ভব হবে তা নিয়ে আপাতত দলে আলোচনা নেই। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে এই অনিশ্চয়তা এখন আরও বেড়েছে। সহসাই কাউন্সিল করে নতুন নেতৃত্ব আনার সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে। এ কারণে দলটির নীতিনির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির শূন্যপদগুলো পূরণ করার বিষয়ে নেতাদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে। স্থায়ী কমিটির তিনটি পদ ফাঁকা থাকলেও অন্তত চারজনকে স্থায়ী কমিটিতে মনোনীত করার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির বর্তমান একাধিক সদস্য ও দায়িত্বশীল নেতা। এর কারণ হচ্ছে, স্থায়ী কমিটি থেকে পদত্যাগের পাশাপাশি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুরর রহমান। যদিও তার পদত্যাগপত্র এখনো দাপ্তরিকভাবে অনুমোদন দেয়নি বিএনপি।
দলের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, শিগগিরই অন্তত দুজন নেতাকে স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অপেক্ষাকৃত তরুণ নেতাই বিএনপির সর্বোচ্চ এ পদে আসতে পারেন। দুর্দিনে যারা বিএনপি বিশেষ করে জিয়া পরিবারের পাশে ছিলেন এবং নানা প্রতিকূল পরিবেশেও দল ছাড়বেন না এমন পরীক্ষিত নেতার মাধ্যমে স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণ করা হবে। সেক্ষেত্রে তারুণ্য কিংবা জ্যেষ্ঠতা কোনো সমস্যা হবে না। স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার আলোচনায় রয়েছেন- দলের ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ, বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, আব্দুল আওয়াল মিন্টু, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী ও যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।
সূত্রমতে, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠরা স্থায়ী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ বয়োজ্যেষ্ঠ স্থায়ী কমিটির সিনিয়র অনেক নেতার সঙ্গে দলীয় প্রধানের একান্ত আলোচনা করা সবসময় হয়ে ওঠে না। এছাড়া সব নেতার ওপর সমানভাবে আস্থা রাখাও কঠিন। সম্প্রতি স্থায়ী কমিটির বৈঠকেগুলোতে জামায়াত এবং ঐক্যফ্রন্টের বিষয়ে স্পর্শকাতর কিছু তথ্য প্রকাশ্যে আনায় কয়েকজন নেতার ওপর ক্ষুব্ধ তারেক রহমান। তাদের বিষয়ে নজরদারিও চলছে। এছাড়া চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তভাবে আবারও কবে থেকে সক্রিয়ভাবে রাজনীতি করতে পারবেন তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। সেক্ষেত্রে দীর্ঘসময় এই দায়িত্ব পালন করতে হবে তারেক রহমানকে। সঙ্গত কারণে দল পরিচালনার সুবিধার্থে আস্থাভাজনদের স্থায়ী কমিটিতে আনার প্রয়োজনীতা অনুভব করছেন তারেক। স্থায়ী কমিটির শূন্যপদ পূরণের বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চাইলে স্থায়ী কমিটিতে শূন্যপদ পূরণ করতে পারেন। দলে আরো বেশ কিছু শূন্যপদ রয়েছে। সেগুলোও পূরণ করতে পারেন তারা। তবে এ বিষয়ে সম্প্রতি কোনো আলোচনা তিনি শুনেননি।
জানা যায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা ১৯ জন। এর মধ্যে তিনজন মারা গেছেন। তারা হলেন-তরিকুল ইসলাম, আসম হান্নান শাহ ও এম কে আনোয়ার। রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান। সেই হিসেবে এখন স্থায়ী কমিটিতে আছেন ১৫ নেতা। অন্য স্থায়ী কমিটির সদস্যরা হলেন- বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু। স্থায়ী কমিটির ১ নম্বর সদস্য বেগম খালেদা জিয়া শর্তসাপেক্ষে ছয় মাসের জামিনে মুক্তি পেয়ে গুলশানের বাসায় অবস্থান করছেন। শর্তসাপেক্ষে মুক্তি পাওয়ায় তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডে বিধিনিষেধ রয়েছে। ২ নম্বর সদস্য তারেক রহমান প্রায় এক যুগ ধরে লন্ডনে রয়েছেন। অবশ্য তিনি স্কাইপ বা জুমে দলের কর্মকান্ড পরিচালনা করছেন। নিয়মিত স্কাইপে দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে যুক্ত হন। তার সভাপতিত্বেই অনুষ্ঠিত হয় বৈঠক। স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বেশ কিছুদিন ধরে শারীরিকভাবে অসুস্থ। এছাড়া স্থায়ী কমিটির ১৯ নম্বর সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ পাঁচ বছর ধরে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের রাজধানী শিলংয়ে রয়েছেন। ২০১৫ সালে বিএনপির অনির্দিষ্টকালের অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি চলাকালে তিনি নিখোঁজ হন। বেশ কয়েক মাস পর শিলংয়ে তার হদিস মিললেও অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তাকে গ্রেপ্তার করে শিলং পুলিশ। পরে মামলায় জিতলেও আপিল নিষ্পত্তি না হওয়ায় শিলংয়েই থাকতে হচ্ছে তাকে। সবমিলে অসুস্থতা, মামলাসহ নানা কারণে স্থায়ী কমিটির অনেক নেতাই সবসময় নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তে ভূমিকা রাখতে পারে না। এজন্যই দ্রুত শূন্যপদ পূরণের বিষয়টি এখন সামনে এসেছে।