স্টাফ রিপোর্টার: করোনা মহামারীর পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। এক্ষেত্রে দলটি ১৩ দফা বাজেট প্রস্তাবনা দিয়েছে। আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার দুই দিন আগে গতকাল সকালে উত্তরায় নিজ বাসভবন থেকে ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির বাজেট ভাবনা তুলে ধরেন দলীয় মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মির্জা ফখরুল বলেন, জনগণের স্বার্থেই এই প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। কিন্তু সরকার ভিন্নমত সহ্য করতে পারে না। আজই হয়তো তারা বিএনপির এই প্রস্তাবকে অবাস্তব বা অগ্রহণযোগ্য বলবে। বাজেট প্রস্তাবনায় বিএনপি মহাসচিব বলেন, করোনা সংকটকালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির দিকে জোর না দিয়ে মানুষের জীবন রক্ষা ও জীবিকার বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। করোনা সংক্রমণ রোধ করতে না পারলে কোনোভাবেই অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য খাতে এহেন ঝুঁকি থাকলে অর্থনীতির স্বস্তির কোনো অবকাশ নেই। আমরা মনে করি, তিন বছর মেয়াদি পুনরুদ্ধার পরিকল্পনার আলোকে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। পরিস্থিতি উত্তরণে মধ্য মেয়াদি বাজেট কাঠামোয় মুদ্রা ও রাজস্ব নীতির সমন্বয়ে নতুন ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে। অর্থনীতির ক্রম হ্রাসমান সংকোচন রোধে কর্মসংস্থান ধরে রাখতে হবে। আয় সংকোচন রোধ করতে হবে এবং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। গত ৪ এপ্রিল করোনা মহামারী মোকাবেলায় বিএনপির পক্ষ থেকে ৮৭ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সহায়তার যে প্যাকেজ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাকে বাজেট প্রণয়নে প্রাথমিক ভিত্তি হিসেবে বিবেচনা নেয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। ১৩ দফা প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে: অগ্রাধিকার হিসেবে স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, শ্রমকল্যাণ, কৃষি, শিক্ষা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুনর্গঠন ও স্বাস্থ্য খাতের সংস্কার, সর্বজনীন জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা গঠন, সরকারি বিনিয়োগ ও অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, কৃষি ও গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, কর্মহীন, কর্মক্ষম, বেকার, দরিদ্র মানুষদের নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান প্রভৃতি। প্রত্যেকের জন্য পারিবারিক ডাক্তার, নার্স ও অবকাঠামোসহ সামগ্রিক ব্যয় জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে স্বাস্থ্য ভাতার আওতায় আনার কথাও বলা হয় বিএনপির বাজেট প্রস্তাবনায়। প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বিশেষ করে ‘দিন আনে দিন খায়’ শ্রেণির মানুষজনদের সর্বজনীন সামাজিক কর্মসূচির আওতায় এনে তাদের নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান, বেকার ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, শিশু প্রতিপালন ভাতা, পেনশন ভাতা, আবাসন সুবিধা, স্বাস্থ্য ভাতা প্রদানে এই খাতে জিডিপির ৬-৭ শতাংশ বরাদ্দ, আইটি প্রযুক্তি ও গবেষণা খাতে বিশেষ বরাদ্দ, কৃষি ও খাদ্য খাতে জিডিপি ও বাজেটের কমপক্ষে ১ দশমিক ৫ ও ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ বরাদ্দ, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা খাতে বরাদ্দ জিডিপির দশমিক ৭৩ শতাংশ ও বাজেটের ২ দশমিক ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি, সবুজ শিল্পায়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতি উজ্জীবন, সমন্বিত শিল্পায়ন ও অবহেলা উন্নয়নের ইক্যুইটি ম্যাচিং তহবিল ও কৃষি কমিশন গঠন, প্রবাসীদের সহজ শর্তে ঋণ প্রদান- সুপারিশও করা হয়েছে বিএনপির এই প্রস্তাবনায়। স্বাস্থ্য খাতে চরম দুরবস্থার কথা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, করোনা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে সারা দেশে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কীভাবে ভেঙে পড়েছে। জনগণের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করতে হবে। পোশাক শিল্প খাতে মালিক সমিতির শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বিএনপির মুখপাত্র বলেন, মহামারী সংকটকালে শ্রমিকরা যাতে কর্মহীন হয়ে না পড়ে সেজন্য ৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা নিয়েছেন মালিকরা। প্রণোদনাও নেবেন, ছাঁটাইও করবেন-এই দুইটা একসঙ্গে চলতে পারে না। এই সংকট চলাকালে শ্রমিক ছাঁটাই হবে অমানবিক ও ভুল সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, কভিড-১৯ বিশ্বব্যাপী সমাজ, অর্থনীতি, রাজনীতি সব কিছুর মধ্যে এক ধরনের পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। আমূল পরিবর্তন না করলে অর্থনীতি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থবির হয়ে যাবে। সামাজিক স্থিতিশীলতায় বড় ধরনের আঘাত আসবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নেই। কারণ তারা জনগণের ভোটের তোয়াক্কা করে না। একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের কারণে সরকারের কোনো বৈধতা নেই। তারপরও এই মহাসংকটের সময়ে বৃহত্তর স্বার্থে আমরা দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় প্রয়াসের আহ্বান জানাচ্ছি।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ