বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে রংপুর ও বরিশালে গণপরিহন বন্ধ : বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
অবৈধ যানবাহন বন্ধের অজুহাতে এ বাস ধর্মঘটের ডাক : প্রবেশপথগুলোয় পুলিশ চেকপোস্ট
শুকনা খাবার চিঁড়া-গুড় পানি ও কাঁথা-বালিশ নিয়ে আগেভাগেই সমাবেশস্থলে উপস্থিত হচ্ছেন নেতাকর্মীরা
স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির গণসমাবেশ ঘিরে রংপুর ও বরিশাল মহানগরীতে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। আগামীকাল শনিবার রংপুরে ও ৫ নভেম্বর বরিশালে গণসমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার ভোর থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতি। অপরদিকে দূরপাল্লার বাসের পর মিনিবাস মালিক সমিতি বরিশালে গণসমাবেশের দিন ধর্মঘট ডেকেছে। অবৈধ যানবাহন বন্ধের অজুহাতে এ পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। এদিকে জামায়াত-শিবিরের উপস্থিতিতে গণসমাবেশে নাশকতার তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। শুক্রবার সকাল থেকে রংপুর নগরীর প্রবেশপথগুলোয় পুলিশ চেকপোস্ট বসাতে যাচ্ছে।
গণসমাবেশ ঘিরে রংপুরে বিএনপি নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষজনের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। এ সময় দলীয় অনেকে ভোগান্তিতে পড়তে পারেন। তবে এ গণসমাবেশ ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষের মাঝে সাড়া পড়েছে। নেতাকর্মীরা নানা প্রস্তুতিও নিচ্ছেন। শুক্রবারের মধ্যে রংপুরে ৪০ ভাগ লোক প্রবেশ করবে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। নেতাকর্মীদের এখনো পুলিশ গ্রেফতার না করলেও দলের নেতারা ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হয়রানির আশঙ্কা করছেন। তারা জানান, নেতাকর্মীরা শুকনা খাবার চিঁড়া-গুড়, পানি ও কাঁথা-বালিশ নিয়ে শুক্রবার দুপুরের মধ্যে সমাবেশে অবস্থান নেবেন। যে কোনো পরিস্থিতির জন্য তারা প্রস্তুত। ‘চলো চলো রংপুর চলো’- সেøাগানে নেতাকর্মীরা সমাবেশে আসতে শুরু করেছেন। রংপুর নগরীসহ বিভাগের সব জেলা-উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড-গ্রাম পর্যন্ত গণসমাবেশের পোস্টার-ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেঁয়ে গেছে।
এদিকে গণসমাবেশের জন্য জিলা স্কুল মাঠ চেয়ে আবেদন করলেও মহানগর পুলিশ অনুমতি দিয়েছে কালেক্টরেট ঈদগাহ মাঠের। ইতোমধ্যেই ওই মাঠে মঞ্চ বানানোর কাজ শুরু হয়েছে। অনুমতি পাওয়ার পর নেতাকর্মীরা মাঠে অবস্থান নিয়ে মঞ্চ তৈরির কাজ তদারকি করছেন। এরই মধ্যে অনেকে হাজির হয়েছেন। কেউ কেউ চিঁড়া, মুড়ি, গুড়, কাঁথা-কম্বল নিয়ে এসেছেন। বৃহস্পতিবার নগরীর আবাসিক হোটেল, ছাত্রাবাস, আত্মীয়স্বজন এবং বিভিন্ন উপজেলার আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে অনেকে অবস্থান নিয়েছেন।
লালমনিরহাটের পাটগ্রামের শ্রীরামপুর ইউনিয়নের আজিজপুর গ্রাম থেকে গণসমাবেশস্থলে এসেছেন মোস্তাফিজুর রহমান ও রহিদুল ইসলাম। তারা জানান, বুধবার ট্রেনে করে পাটগ্রাম থেকে রংপুর স্টেশনে পৌঁছান তারা। স্টেশনে চিঁড়া-মুড়ি খেয়ে রাতযাপনের পর বৃহস্পতিবার সকালে সমাবেশস্থলে উপস্থিত হয়েছেন। সঙ্গে কম্বলও এনেছেন। সমাবেশ শেষে তারা বাড়ি ফিরবেন। শুধু মোস্তাফিজুর ও রহিদুল নয়, গাইবান্ধার সাঘাটার ঘুড়িদহ থেকে এসেছেন আরিফুল ইসলাম, রাজারহাটের সাদ্দাম হোসেন ও গোবিন্দগঞ্জ মহিমাগঞ্জের জাহিদুল ইসলামসহ অনেকে। তাদের দাবি, গাড়িঘোড়া বন্ধ থাকলে ও পথে বাধা দেয়া হলে, মারামারি হলে তো আসতে পারবো না সেজন্য আগেই আসা। তাদের মতো আরও অনেকে শুক্রবার আসবেন।
রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশ বাস্তবায়ন কমিটির সমন্বয়ক এবং বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলু জানান, রংপুর বিভাগীয় গণসমাবেশ হবে একটি পরিচ্ছন্ন সমাবেশ। স্মরণকালের সর্ববৃহৎ উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। এতে শহর, নগর, বন্দর, তৃণমূলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ অংশ নেবে।
রংপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম বলেন, সরকার আমাদের গণসমাবেশ বাধাগ্রস্ত করার পাঁয়তারা করছে। এ কারণে পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। কিন্তু মানুষের স্রোত ঠেকাতে পারবে না সরকার। সব বাধা অতিক্রম করে নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ গণসমাবেশে উপস্থিত হবে। এ গণসমাবেশ জনসমুদ্রে পরিণত হবে।
রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সামসুজ্জামান সামু বলেন, বাঁশ-কাঠ দিয়ে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৫ ফুট প্রস্থের মঞ্চ তৈরির কাজ চলছে। মাঠের পাশে কয়েকটি গেটও করা হচ্ছে। তিনি জানান, ভয়ে প্রশাসন জিলা স্কুল মাঠের অনুমোদন দেয়নি। মহাপ্রাচীর দিলেও মানুষের স্রোতে আটকাতে পারবে না সরকার। তিনি আরও বলেন, নেতাকর্মীদের আটক করা না হলেও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা খোঁজখবর করছে। ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। রংপুর মহানগর মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক আরজানা সালেক বলেন, মহিলা দলের নেতাকর্মীরা মাঠে নামবে। কোনো বাধাই তাদের আটকাতে পারবে না। রংপুর জেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম নাজু বলেন, কোনো বাধাই এ গণসমাবেশ ঠেকাতে পারবে না।
অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের অজুহাতে গণসমাবেশের দুদিন আগে রংপুর জেলা মোটর মালিক সমিতি পরিবহণ ধর্মঘট ডেকেছে। শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ ধর্মঘট চলবে। শুক্রবার ধর্মঘট ডাকা হলেও বৃহস্পতিবার থেকে সড়কপথে যানবাহন চলাচল সীমিত হয়ে পড়ে। সমিতির সভাপতি একেএম মোজাম্মেল হক জানান, সরকার আইন করার পরও রংপুরের মহাসড়কগুলোয় নছিমন, করিমন, ভটভটিসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন চলাচল করছে। এ কারণে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা রোধে অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবিতে আমরা পরিবহণ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছি। ট্রাক মালিক সমিতি, কার-মাইক্রোবাস মালিক সমিতি ও সাধারণ পরিবহণ মালিকদের বৈঠকে ধর্মঘটের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার নুরে আলম মিনা জানান, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন। যে কোনো ধরনের সহিংসতা ঠেকাতে তারা প্রস্তুত। তিনি বলেন, মিঠাপুকুর ও পীরগাছা থেকে জামায়াত-শিবিরের বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী বিএনপির সমাবেশে উপস্থিত হবে। রংপুর কারমাইকেল কলেজের আশপাশ, আশরতপুর ও দর্শনা মোড়ে শিবির নিয়ন্ত্রিত ছাত্রাবাসগুলোতে তারা অবস্থান নিচ্ছে। যাতে তারা কোনো নাশকতা ঘটিয়ে দায় অন্য কারও ওপর চাপাতে না পারে সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কোনো উসকানি বা কোনো ধরনের উত্তেজনা যেন কোনো সংঘাতে রূপ না নেয় সেজন্য সাদা পোশাকে পুলিশ নগরী ও গণসমাবেশস্থলের চারপাশে কাজ করছে। এ গণসমাবেশ নিয়ে সরকারের পক্ষে পুলিশের ওপর কোনো নির্দেশনা আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে-পুলিশ কর্মকর্তা নুরে আলম মিনা জানান, তারা বিশেষ কোনো নির্দেশনা পাননি। একটি রাজনৈতিক দল সমাবেশ তো করতেই পারে। আমরা সেটি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ থেকে দেখছি। এ সমাবেশকে কেন্দ্র করে কিছু সংগঠন একই মাঠে সমাবেশের অনুমতি চাইলে আমরা তাদের বুঝিয়ে নিবৃত্ত করেছি।