বাড়াবাড়ি করলে দায় সরকারের : মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসমাবেশ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘আমরা নয়াপল্টনে সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি করবো। পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দল যদি কোনো রকমের বাড়াবাড়ি করে, অত্যাচার-নির্যাতন করে তার দায়দায়িত্ব সরকারকে নিতে হবে।’ শুক্রবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এসব কথা বলেন। মহাসমাবেশে স্বতঃস্ফূর্তভাবে যোগ দিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, আসুন শনিবার (আজ) মহাসমাবেশে যোগ দিন। সরকারকে পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দিন-না, আর নয়; যথেষ্ট হয়েছে। এ দেশের মানুষের ওপর অনেক অত্যাচার-নির্যাতন করেছ। অর্থনীতিকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে, লুটপাট করেছে প্রতিটি ক্ষেত্রে। লুটপাট করে বিদেশে অর্থ-সম্পদ পাচার করে বেগমপাড়াসহ বিভিন্ন পাড়া গড়ে তুলেছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে শেষ করেছে। স্বাস্থ্য ও শিক্ষা ব্যবস্থা শেষ করেছে। এখন গোটা রাষ্ট্রকে তারা পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।’ মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও সরকারের নানা উসকানিমূলক বক্তব্যে প্রসঙ্গে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে অনেক কর্মসূচি আমরা সফলতার সঙ্গে করেছি। এতকিছুর পরও। এর আগেও অভিযান হয়েছে। এর আগেও মারধর করেছে। মেরে ফেলেছে গুলি করে। তারপরও কিন্তু আমরা আমাদের জায়গা থেকে এতটুকু সরিনি। শান্তিপূর্ণভাবে এই সরকারের পতন ঘটাতে চাই।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সমগ্র জাতি চাচ্ছে, সরকারকে বিদায় করে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন। মূল বিষয়টা হচ্ছে, একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করা। তা না হলে কখনোই নির্বাচন সুষ্ঠু হতে পারে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘আজকে দেশের মানুষ যখন তার ভোটের অধিকার প্রয়োগ করতে পারে না, তখন কী করে আবার একটা নির্বাচন হতে পারে এটা কারও কাছে বোধগম্য নয়। উদ্দেশ্য একটাই-১৪ ও ১৮ সালের মতো আবারও ২৪ এর নির্বাচন করা। সেই নির্বাচনে তারা জোর করে ক্ষমতায় চলে আসবে। এ দেশের জনগণ সেটা মেনে নেবে না। নেবে না বলেই এই আন্দোলন শুরু হয়েছে। আন্দোলনে ইতোমধ্যে অন্তত ২২ নেতাকর্মী প্রাণ হারিয়েছেন, প্রতিদিন সরকারের দমন-নির্যাতন বেড়েই চলেছে।’ বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘একদিকে শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) ব্রাসেলসে বলছেন, অত্যন্ত সুন্দর নির্বাচন হবে, সেই নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করছি। অন্যদিকে প্রতি রাতে আমাদের নেতাকর্মীদের বাড়িতে বাড়িতে অভিযান হচ্ছে, গ্রেফতার করা হচ্ছে। সবচেয়ে মারাত্মক ব্যাপার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে বিচারকদের নিয়ে নেতাদের সাজা দিয়ে দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘একজন বিচারকের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে দুই বছরের সাজা হয়ে গেলে সেটা যদি আপিল করে তাও তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না। এভাবে ইতোমধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু থেকে শুরু করে মাঠের নেতাকর্মীদের সাজা, এমনকি মৃত্যুদ- পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। এই ভয়াবহ দমননীতির মাধ্যমে নির্বাচন করা হাস্যকর, প্রহসন ও তামাশা ছাড়া কিছু নয়। আমাদের কথা পরিষ্কার, এ দেশের মানুষ নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকার ছাড়া কোনো নির্বাচন মেনে নেবে না।’ মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সরকারের সত্যিকার অর্থেই অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছা নেই। একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছা নেই, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার কোনো ইচ্ছা নেই। সে কারণে তারা একতরফা নির্বাচন করার জন্য সারা দেশে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করছে। কিন্তু জনগণ এবার অধিকার আদায়ের জন্য জেগে উঠেছে। তারা রাজপথে নেমে এসেছে।’ গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির দাবিতে আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে তাদের দাবি মেনে নেয়ার জন্য গার্মেন্টস-শিল্প-কলকারখানা মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। মহাসচিব জানান, মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে এখন পর্যন্ত আহত ২০৯৫ জন, মামলা হয়েছে ৪১৮। গ্রেফতার হয়েছেন ৪০২০ জন, আসামি ২৮ হাজার ৫৭০ এবং ৯০ জনের অধিক নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও ছিলেন-বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসির উদ্দিন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More