স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে জনগণের সঙ্গে একধরনের ‘ভাঁওতাবাজি’ করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী দুই হাত ভরে ব্যবসায়ীদের দিয়েছেন, কিন্তু সাধারণ মানুষ তেমন কিছু পায়নি। প্রায় আড়াই কোটি নতুন গরিব বা মধ্যবিত্তের কথা বাজেটে নেই। শুক্রবার সকালে রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। বাজেটের ওপর দলের পক্ষ থেকে তিনি আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানান। এ সময় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন। মর্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, সবচেয়ে বড় কথা এবারের বাজেটেও স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা খাতকে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়নি। অথচ এ মুহূর্তে মানুষের স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। মহামারীকালে মানুষের জীবন-জীবিকার স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে ও বেঁচে থাকার নিশ্চয়তায় চলমান স্বাস্থ্য পরিকল্পনা গ্রহণে প্রস্তাবিত বাজেট সম্পূর্ণ ব্যর্থ। তিনি বলেন, ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকার বাজেটের প্রায় ২ লাখ ১৫ হাজার কোটি টাকা দেশ-বিদেশ থেকে ঋণ নেয়া হবে। আগামী অর্থবছরে শুধু ঋণের সুদই দিতে হবে ৬৯ হাজার কোটি টাকা। এ বাজেটে জাতিকে পুরোপুরি ঋণনির্ভর করে ফেলা হয়েছে। মির্জা ফখরুল বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ব্যয় বরাদ্দ ১ লাখ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, সঞ্চয়পত্রের সুদ ও প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষার্থীদের বৃত্তির টাকাও রয়েছে। এ কারণে সামাজিক নিরাপত্তা খাতের বরাদ্দ বড় করে দেখানো হচ্ছে। এর মানে করোনাকালেও সামাজিক সুরক্ষার নামে মানুষের সঙ্গে ভাঁওতাবাজি করা হচ্ছে। এ খাতে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সরকার যে সহায়তা দিয়েছে, তা লোক দেখানো। তাতে ৫ থেকে ৬ কোটি দরিদ্র মানুষের জন্য মাথাপিছু ১০০ থেকে ২০০ টাকাও পড়বে না। বিএনপির মহাসচিব বলেন, বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা বৃদ্ধি দেখানো হলেও কার্যত বৃদ্ধির পরিমাণ মাত্র ১৮০ কোটি টাকা। এ খাতে বরাদ্দ জিডিপির ১ শতাংশের মধ্যেই আছে। স্বাস্থ্য খাতে এ বরাদ্দ দিয়ে স্বাস্থ্য খাতের চাহিদা মিটবে না। স্বাস্থ্য খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ করতে হবে। মির্জা ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, সরকার মাসে ২৫ লাখ মানুষকে করোনার টিকা দেয়ার কথা বলেছেন। সেটা কবে থেকে কার্যকর হবে, কীভাবে হবে, সে সম্পর্কে কিছু নিশ্চিত বলা হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা, এ হিসাবে প্রতিবছর টিকা নিতে পারবে তিন কোটি মানুষ। কাক্সিক্ষত জনগোষ্ঠীকে টিকা দিতে লাগবে ছয় থেকে সাত বছর। অথচ ভারতে প্রতিদিন এক কোটি মানুষকে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা নো হয়েছে। বাজেটে ব্যবসায়ী মহল খুশি, মধ্যবিত্তরা হতাশ, এমন মন্তব্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, এ বাজেটে করপোরেট করহার কমানো হয়েছে। ব্যবসায়িক টার্ন-ওভার করহার কমেছে।
উৎপাদনমুখী প্রতিষ্ঠানের আমদানিতে আগাম কর (আগাম ভ্যাট) ১ শতাংশ কমিয়ে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। সময়মতো ভ্যাট রিটার্ন না দিলে জরিমানার পরিমাণ কমানো হচ্ছে। ভ্যাটের টাকার ওপর সুদের হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১ শতাংশ করা হচ্ছে। অর্থাৎ বাজেটে নানাভাবে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হয়েছেন। কিন্তু বাজেটে সাধারণ মানুষের জন্য তেমন কোনো ছাড় দেয়া হয়নি। এমনকি ২ কোটি ৪৫ লাখ নতুন গরিবের কিংবা মধ্যবিত্তদের কথা বাজেটে নেই। সাধারণ মানুষের কাছে অর্থ পৌঁছে দেয়ার কোনো বন্দোবস্তের কথা বলা হয়নি। মির্জা ফখরুল বলেন, বাজেটে পুরোনো ব্যাংকনির্ভর প্রণোদনা অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে, তাতে কোনো লাভ হয়নি, হবেও না। তিনি বর্তমান করোনাকালীন পরিস্থিতি বিবেচনায় ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা পাঁচ লাখ টাকা, মৎস্য খাতের ওপর প্রস্তাবিত কর বাতিল এবং শিক্ষা খাতে জিডিপির ৫ শতাংশ বরাদ্দ করার দাবি জানান। বিএনপির মহাসচিব বলেন, অর্থমন্ত্রী এবারের বাজেটের শিরোনাম করেছেন ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’। বাজেট নাকি দেয়া হয়েছে ‘মানুষের’ জন্য। শুনতে ভালো শোনায়। কিন্তু বাজেটে ‘দিন আনে দিন খায়’ এমন গোষ্ঠীর জীবন-জীবিকা রক্ষায় নগদ অর্থের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নেই। এ খাতে আগের ত্রুটিপূর্ণ ব্যাংকনির্ভর ঋণের কথাই বলা হয়েছে। বিএনপির মহাসচিব বলেন, এবারের বাজেট কেবল বার্ষিক হিসাব-কিতাবের বাজেট হওয়ার কথা নয়। বাজেট হওয়া উচিত ছিল, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক নীতিমালার পথনির্দেশনা এবং অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের বাজেট। ভবিষ্যতে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের মডেল কী হতে পারে, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি বাজেটের ফোকাস কী হবে, তার পথনির্দেশনার বাজেট। কিন্তু সরকার সেদিকে যায়নি। মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘এ সরকারের সময় দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, বাকস্বাধীনতা, আইনের শাসন ও জবাবদিহির যে ঘাটতি রয়েছে, তারই প্রতিফলন ঘটেছে বাজেটে। আমরা সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণ অর্থনীতির অঙ্গীকার চাই, যা এ বাজেটে অনুপস্থিত।’
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ