স্টাফ রিপোর্টার: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ পর্যবেক্ষণে ৯৩ জন বিদেশি পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিতে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। এর মধ্যে ২৯ জন আমেরিকার নাগরিক। বাকি ৬৪ জন বাংলাদেশি নাগরিক। বাংলাদেশি নাগরিক ৬৪ জনকে বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসেবে অনুমোদন দেওয়ার প্রস্তাব নাকচ করেছে নির্বাচন কমিশন। দূতাবাসকে নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের যে ২৯ জন পর্যবেক্ষণ করতে চান, তারা দোভাষী চাইলে তা অনুমোদন দেবে কমিশন। যদিও ইসির এ প্রস্তাবে আনুষ্ঠানিক জবাব দেয়নি ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস। বাংলাদেশি দোভাষীদের নিয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দূতাবাসের অস্বস্তি রয়েছে। তবে মার্কিন পর্যবেক্ষক সংস্থা এনডিআই ও আইআরআই-এর ১২ সদস্যের প্রতিনিধি বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তাদের অনুমোদন দিয়েছে ইসি। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, নির্বাচন কমিশনের বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা রয়েছে। ওই নীতিমালায় বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসাবে অনুমোদন দেওয়ার সুযোগ নেই। বিষয়টি আমরা ঢাকাস্থ যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসকে জানিয়ে দিয়েছি। তবে তাদের বিদেশি নাগরিকরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চাইলে তারা বিদেশি পর্যবেক্ষক হিসাবে অনুমোদন পাবেন। ইসি সূত্রে জানা যায়, এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে মঙ্গলবার পর্যন্ত সবমিলিয়ে ১৮৭ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ তালিকায় মার্কিন দূতাবাসের ২৯ জন এবং এনডিআই ও আইআরআই-এর ১২ জন অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। এছাড়া কমনওয়েলথের ১৭ জন, ঢাকাস্থ জাপানিজ দূতাবাসের ১৬ জন, ঢাকাস্থ বিট্রিশ হাইকমিশনের ১০ জন, নেপালের ৫ জন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৪ জন রয়েছেন। বাকি বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বেশির ভাগই ব্যক্তি উদ্যোগে এ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
আরও জানা যায়, দেশীয় ৮৪টি পর্যবেক্ষক সংস্থা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আবেদন করেছে। তাদের মধ্যে ২০ হাজার ২৫৬ জন স্থানীয় এবং ৫১৭ জন কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চেয়েছেন। অর্থাৎ স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা তাদের পছন্দের আসনে পর্যবেক্ষণের আবেদন করেছেন। আর ৫১৭ জন কেন্দ্রীয়ভাবে যে কোনো আসনে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য নির্বাচন কমিশনের পৃথক দুটি নীতিমালা রয়েছে। এ নির্বাচনের আগে বিদেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা সংশোধন করে ইসি।
ইসির নথিপত্রে দেখা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৮০ জন বিদেশি এবং তাদের আওতায় ১১ বাংলাদেশি নাগরিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ওই নির্বাচনে আমেরিকা, ব্রিটেনসহ ১১টি দেশের ৬২ বিদেশি পর্যবেক্ষক ছিল। জাতিসংঘ, ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনালসহ ৫টি সংস্থার ১৮ বিদেশি পর্যবেক্ষক ওই নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ৩৯টি দল অংশ নিয়েছিল। এর আগে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনে মাত্র ৪ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক সেই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে এসেছিলেন। সেই নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। ১৫৩টি আসনে প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আরও জানা যায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন চেয়ে আবেদনের সময়সীমা একবার বাড়িয়ে ৭ ডিসেম্বর শেষ হয়। ওই সময়ের পরও বেশ কয়েকজন বিদেশি পর্যবেক্ষক নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ প্রকাশ করেন। যদিও ২০১৮ সালের নির্বাচনের তুলনায় এবার কমসংখ্যক দূতাবাস নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আগ্রহ দেখিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরামর্শ দিয়ে আসছে। ইসি সূত্র জানিয়েছে, ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস ছাড়াও দেশটির আরও কয়েকজন নাগরিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে ইসিতে আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে দ্য গোল্ড ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যাটেজির চারজন, সাবেক কংগ্রেসম্যান জিম ব্যাটস, আমেরিকান গ্লোবাল স্ট্যাটেজির একজন এবং ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির একজন রয়েছেন।
আমেরিকার বাইরে আফ্রিকান ইলেকট্রোরাল অ্যালায়েন্সের ১২ জন নির্বাচন পর্যবেক্ষক আসতে চান; তারা সবাই উগান্ডার নাগরিক। এছাড়া সাউথ এশিয়া ডেমোক্রেটিক ফোরামের চারজন রয়েছেন। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, বিদেশি পর্যবেক্ষকদের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মতির বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
বিদেশি সাংবাদিক ৯১ জন : দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সংবাদ সংগ্রহে ৯১ জন বিদেশি সাংবাদিক আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে এএফপির ১২ জন, ভারতের এনডিটিভির দুজন, রয়টার্সের তিনজন এবং বিবিসির চারজন রয়েছেন।
পূর্ববর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.