ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে ইবিতে সংঘর্ষ : সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকের ওপর হামলা

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: বিজয় দিবসে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে গিয়ে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ে (ইবি) অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় চিত্র ধারণ ও সংবাদ সংগ্রহকালে সাংবাদিকদের ওপরও হামলার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল বুধবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মুক্ত বাংলা’র পাদদেশে এ ঘটনা ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল সাড়ে ১০ টায় প্রশাসন ভবনের সামনে পতাকা উত্তোলন ও বেলুন ওড়ানোর মধ্যদিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দিবসটির উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আব্দুস সালাম। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ভাস্কর্য ‘মুক্ত বাংলা’য় প্রশাসনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সালাম। পরে একে একে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি, কর্মকর্তা সমিতি, ইবি শাখা ছাত্রলীগ ও কেন্দ্র ঘোষিত বঙ্গবন্ধু পরিষদ শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে। একপর্যায়ে ফুল দেয়ার জন্য বেদিতে ওঠে হান্নান গ্রুপ সমর্থিত ইবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন। এ সময় পাশ থেকে ইবি অফিসার্স মোর্শেদ গ্রুপ সমর্থিত ছাত্রলীগের কর্মীরা হান্নান গ্রুপের বিরুদ্ধে বেদিতে জুতা পায়ে বেদিতে উঠছেন বলে অভিযোগ তুলে প্রতিবাদ করতে থাকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তা সমিতির উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে মের্শেদ গ্রুপ সমর্থিত কর্মকর্তা-ছাত্রলীগ এক জোট হয়ে প্রতিপক্ষ হান্নান গ্রুপের সাথে তুমুল সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং ফুলের ডালি নিয়ে টানাহেচড়ার এক পর্যায়ে তা ভাঙচুর হয়ে যায়। পরে কর্মচারী সমিতি ফুল নিয়ে বেদিতে উঠলে তাদের ওপর দ্বিতীয় দফায় হামলা চালায় মোর্শেদ গ্রুপের সমর্থকরা। এসময় গোটা ক্যাম্পাসে ত্রিপক্ষীয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হামলা মারামারির ঘটনা ঘটে। এসময় হান্নান গ্রুপ সমর্থিত অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের ধাওয়া করে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেট থেকে বের করে দেয়। তবে এ ঘটনায় গুরুতর আহত বা কেউ হাসপাতালে ভর্তির কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। এ সময় সংবাদ ও চিত্র সংগ্রহকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সাংবাদিক কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হামলা ও হেনস্তার শিকার হয়। অন্যান্য সাংবাদিকরা এ ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে তারা ওই সাংবাদিকদের ওপর চড়াও হয় এবং লাঞ্ছিত করেন বলে অভিযোগ ইবি প্রেসক্লাব ও সাংবাদিক সমিতি নেতৃবৃন্দের। এসময় পরিস্থিতি সামাল দিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন বলেও স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ। পরে বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শাহিনুর রহমান সবাইকে শান্ত হওয়ার আহ্বান জানালেও তাতে কোনো আমল দেননি সংঘর্ষে লিপ্ত পক্ষগণ। প্রায় দুই ঘণ্টা পর পরিবেশ শান্ত হলে বিভিন্ন হল, বিভাগ ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতে বেদিতে আসেন। এর আগেও গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে স্মৃতিসৌধে ফুল দেয়াতে কেন্দ্র করেও এইসব পক্ষগণ ও শিক্ষক-কর্মকর্তাদের মধ্যে উত্তেজনা এবং হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছিলো বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ।

তবে এ বিষয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত মোর্শেদ গ্রুপের প্রধান বিশ^বিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মীর মো. মোর্শেদুর রহমান দাবি করেন, মহান বিজয় দিবস পালন ও স্মরণ করতে তার যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগাম্ভীর্য লংঘন করে একদল জামাত-বিএনপি সমর্থিত প্রতিক্রিয়াশীল লোক জুতা পায়ে বেদিতে উঠে অবমাননা করা স্পর্ধা দেখাবে এটা তো হতে পারে না। আমরা এর প্রতিবাদ করেছি।

হান্নান গ্রুপের প্রধান বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার মো. আব্দুল হান্নানের মুঠোফোনে আলাপকালে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সেখানে সিসি ক্যামেরাসহ অনেক সাংবাদিক ভাইদের ক্যামেরা ছিলো সেগুলি দেখলেই প্রমাণ পাওয়া যাবে আমাদের পায়ে জুতা ছিলো কি না। এটা ওরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ঘটিয়েছে। আমরা এই ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদসহ বিচার দাবি করছি।

ইবি থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, সকালে বেদিতে ফুল দেয়াকে কেন্দ্র করে কর্মকর্তা কর্মচারী ও ছাত্রদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়েছিলো। পরে পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। ক্যাম্পাস এখন শান্ত। সাংবাদিক লাঞ্ছনার বিষয়ে কেউ অভিযোগ দিলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে প্রক্টর অধ্যাপক পরেশ চন্দ্র বর্মণ বলেন, আজকের মহান বিজয় দিবসে যারা ক্যাম্পাসে প্রক্টরিয়াল রুল ব্রেক করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More