জীবননগরের আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন :
জীবননগর ব্যুরো: জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়নে প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকা তৈরীতে ব্যাপক অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও অর্থবাণিজ্যর অভিযোগ উঠেছে। সুস্থ ভাই, সুস্থ স্বামী ও বাড়ির কাজের মেয়েও প্রতিবন্ধির তালিকায় নাম উঠিয়েছেন। কয়েকজন ইউপি সদস্যসহ বেশ কয়েকজন দালাল এ কাজের সাথে জড়িত। ইউপি চেয়ারম্যানও এর বাইরে নন বলে অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে ইউনিয়নের ওয়াকিবহাল মহলসহ খোদ আওয়ামী লীগের নেতাদের মধ্যেও সমালোচনার ঝড় বইছে। দাবি উঠেছে তদন্তপূর্বক দায়ী ব্যক্তিসহ যে সকল সুস্থ মানুষ নিজেদেরকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে ভাতা’র কার্ড বাগিয়ে নেয়ার তালিকায় রয়েছে তদন্তপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, আন্দুবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের ৭নং ওয়ার্ড সদস্য মহসীন আলী, ৯নং ওয়ার্ড সদস্য মোছাদ্দেক আলী ও ১, ২ ও ৩নং সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য মিনুয়ারা খাতুনসহ সাবেক দুজন ইউপি সদস্য প্রতিবন্ধী ভাতার খাতায় নাম লিপিবদ্ধ করে ভাতার টাকা উত্তোলন করেছেন। এ তালিকায় ইউপি চেয়ারম্যানের সুস্থ সবল ভাই, স্বজন ও কাজের মেয়ে রয়েছে।
ইউনিয়নের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, এরা কেউই প্রতিবন্ধী নয়। জনমনে প্রশ্ন উঠেছে স্থানীয় সরকারের ইউনিয়ন পরিষদ নীতিমালায় শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধী বা বিকলাঙ্গরা কি জনপ্রতিনিধি হওয়ার যোগ্য? কঁপালে রাজ টিকার তাকামা লাগিয়ে অধিকাংশ সুস্থ সবল মানুষকে অর্থবাণিজ্যের মাধ্যমে বিকালঙ্গ দেখিয়ে প্রতিবন্ধি ভাতার তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। এ কাজের জন্য ইউনিয়ন পরিষদে দালালরাও ঘুর ঘুর করছে। তারা বিভিন্ন মানুষের নিকট থেকে ৩ থেকে ৫ হাজার পর্যন্ত টাকা নিয়ে ভাতার তালিকায় নাম উঠিয়ে দিচ্ছে।
অভিযোগ তালিকাভুক্ত জনপ্রতিনিধি ও সুস্থ সবল ভাতাভোগীদের অনেকের নাম ও পিতার নাম সঠিক দেখা গেছে। শুধুমাত্র ওয়ার্ড, গ্রাম ও পাড়া পরিবর্তন করে কৌশলগতভাবে ভাতার টাকা উত্তোলন করছেন বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে। তালিকায় কৌশলবাজ জনপ্রতিনিধি ও সুস্থ সবল ভাতাভোগীদের লিপিবদ্ধ ছবি দেখে তাদের শনাক্ত করা গেছে। তালিকায় অধিকাংশ জনপ্রতিনিধিদের সুস্থ সবল স্বামী, ভাই, বোন ও আত্মীয়-স্বজনদের ভুয়া বিকলাঙ্গ দেখিয়ে অনৈতিক সুবিধার বিনিময়ে প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করায় প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের যে ভিশন বাস্তবায়নে বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। টাকার বিনিময়ে আটার কার্ড, ভাতার কার্ড ও চালের কার্ড দেয়ার অভিযোগ ওঠায় চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের সংসদ সদস্য হাজি আলী আজগার টগর সম্প্রতি কয়েকটি দলীয় উঠোন বৈঠক ও সভা-সমাবেশে সেইসব জনপ্রতিনিধিদের কঠোর সমালোচনা করে সর্তক করেছেন। প্রকৃত উপকার ভোগীদের বঞ্চিত করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ যারা নয়-ছয় করেছেন সেই সব অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি উঠেছে। তালিকায় একই নাম পিতার নাম ওয়ার্ড পরিবর্তন করে দু’বার লিপিবদ্ধ করে ভাতার টাকা উত্তোলন করার অভিযোগ রয়েছে। এসব তালিকভুক্ত কথিত প্রতিবন্ধীদের তালিকা প্রণয়নে সরকারি বিধি ও নীতিমালা অনুসরণ করা হয়নি। নীতিমালা অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যান সভাপতি, এমপির দু’জন প্রতিনিধি, উপজেলা চেয়ারম্যানের একজন প্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার একজন প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের সকল ওয়ার্ডের সদস্য, সদস্যাবৃন্দ ও সমাজসেবা অফিসের একজন সমাজকর্মীকে নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে। এসব নীতিমালা অনুসরণ না করে কোনো প্রচার প্রচারণা ও সভার কার্য বিবরণী ছাড়াই অনৈতিক সুবিধা নিয়ে চুড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত করে উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়ে দাখিল করা হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এমন দুর্নীতির ঘটনায় এ ইউনিয়নের ওয়াকিবহাল মহলসহ খোদ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম মোক্তারের ছত্রছায়ায় দুর্নীতির এ মহোৎসব চলছে। যার প্রতিকার হওয়া প্রয়োজন।
এ ব্যাপারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাসহ আন্দুলবাড়িয়া ইউনিয়ন লোকমোর্চার সভাপতি শেখ আব্দুল ওয়াদুদকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, যে অভিযোগ বলা হচ্ছে তা সঠিক। সঠিক তদন্ত করলে ভয়াবহ দুর্নীতির চিত্র উঠে আসবে।
উপজেলা সমাজসেবা অধিদফতরের প্রতিনিধি এনামুল হক জানান, ডাক্তারের সার্টিফিকেট অনুযায়ী প্রতিবন্ধী ভাতার তালিকাভূক্ত হওয়ার কথা। ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই শেখ কদর আলী, ইউপি সদস্য মিনুয়ারার স্বামী বিষয়ে তদন্তসহ পূর্ণাঙ্গ তালিকাটি নিয়ে যাচাই-বাছাই করা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান শেখ শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই শেখ কদর আলী একজন স্ট্রোকের রোগী। সে কর্মক্ষম। তার নাম ভাতার তালিকাভূক্ত বলে তিনি স্বীকার করে। এছাড়া কাজের মেয়ের নামে ভাতার কার্ড হয়েছে কী-না তা তিনি জানেন না বলে জানান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, সুস্থ হয়েও বিন্দা ভৌমিকের স্ত্রী কী করে ভাতার কার্ড পেয়েছে তা আমার জানা নেই।