নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা : ঈদ আনন্দযাত্রায় পথে পথে ভোগান্তি

সড়কে গণপরিবহণ সঙ্কট ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয় : তবুও বাড়ি যাচ্ছে মানুষ

স্টাফ রিপোর্টার: নাড়ির টানে ছুটছে মানুষ। গতকাল ঈদুল আজহার ছুটি শুরু হওয়ায় ঘরমুখো মানুষের বাস টার্মিনালগুলোতে ছিলো প্রচ- ভিড়। তবে বৃষ্টির কারণে দুর্ভোগে পড়েছে ঘরমুখো মানুষ। টানা বৃষ্টিতে দুর্ভোগে পড়া যাত্রীরা অবস্থান নেয় বিভিন্ন ছাউনির নিচে। ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনেও কমলাপুরে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। কয়েকটি ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। রাজধানীসহ সড়কের কোথাও কোথাও ছিল যানজট। সকাল থেকেই ঢাকা-টাঙ্গাইল এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন ও যাত্রীর চাপ বেড়ে যায়। বিকালে কারখানা ছুটি হওয়ায় চাপ আরও বাড়তে থাকে। এদিকে, গণপরিবহন না পেয়ে অনেক যাত্রী খোলা পিকআপ ও ট্রাকযোগে বাড়ি ফিরেছেন। তবে মাঝে মাঝে বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে তাদের। ফলে শত কষ্টের মধ্যে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঈদ করতে বাড়ি যাচ্ছেন তারা। ঈদযাত্রায় সড়ক ও নৌপথের বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী অনতিবিলম্বে এ ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন। অন্যদিকে, গতকাল ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনেও কমলাপুরে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় ছিল। তবে দিনের শুরুতে কয়েকটি ট্রেন বিলম্বে স্টেশনে পৌঁছায়। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন। তবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, কোনো ট্রেনই কমলাপুর থেকে দেরিতে ছাড়ছে না। আসতে দেরি করায় কিছুটা বিলম্ব আগেই তৈরি হয়েছে। ঈদযাত্রার চতুর্থ দিনের শুরু হয় আন্তঃনগর রাজশাহীগামী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনের যাত্রার মধ্যদিয়ে। তবে ট্রেনটি দেরিতে স্টেশনে আসায় প্রায় দুই ঘণ্টা পর কমলাপুর স্টেশন ছেড়ে যায়। শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে নীলসাগর ও সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেনের বেলাতেও। নীলসাগর এক্সপ্রেসের ৬টা ৪০ মিনিটে কমলাপুর ছেড়ে যাওয়ার কথা। সাড়ে ৭টায়ও ট্রেনটি স্টেশনে আসেনি। শিডিউল বিপর্যয় হয়েছে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেসেরও। দেরিতে ট্রেন ছাড়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন ঘরমুখো মানুষ। নীলসাগর এক্সপ্রেসের এক যাত্রী বলেন, অপেক্ষা করা খুবই কষ্টের। প্রথমদিন ভালোই ছিল। গতকাল সব এলোমেলো হয়ে গেছে। উত্তরের প্রায় সব ট্রেনই দেরিতে ছাড়ছে। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার মাসুদ সারওয়ার বলেন, শতভাগ অনলাইনে টিকিট বিক্রি ও ২৫ ভাগ স্ট্যান্ডিং টিকিট বিক্রির ফলে রেলের লাভ-লোকসান বিবেচ্য বিষয় নয়। যাত্রী সাধারণ নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে ঈদযাত্রা যেন করতে পারে এটাই আমাদের লক্ষ্য।

বৃষ্টির কারণে অনেকে সময়মতো বাস কাউন্টারে পৌঁছাতে না পারায় অনেক বাস বিলম্বে ছেড়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ফলে এসব সড়কগুলোতে জটলা তৈরি হয়। সকাল সাড়ে ৭টা থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি পড়ায় বাস টার্মিনালগুলোর আশপাশে ছাউনির নিচে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিতে থাকে অনেকে। বাস কর্তৃপক্ষ বলছে, সকাল থেকে বৃষ্টি হওয়ায় অনেক যাত্রী আসতে পারছিল না। ফলে সময়মতো বাস ছাড়া যাচ্ছিল না। অনেক যাত্রী আগে এসে বৃষ্টিতে বিপত্তিতে পড়েছেন। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গরুর হাটকেন্দ্রিক বিভিন্ন সড়কের জট। খুলনাগামী যাত্রী মো. হাসান বলেন, গাড়ি যে খুব কম তা কিন্তু না। সমস্যা হলো বৃষ্টি। সেজন্য অনেক বাস বিভিন্ন জায়গায় আটকে আছে। বৃষ্টি হলেই তো জ্যাম হয় ঢাকায়। পরিবার আগে পাঠিয়ে দিয়েছেন তিনি। সদরঘাটেও মোটামুটি যাত্রীদের ভিড় ছিল। তবে লঞ্চগুলো ভরলেই টার্মিনাল ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে লঞ্চ চালকরা। এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষে বুধ, বৃহস্পতি ও শুক্রবার (২৮, ২৯ ও ৩০ জুন) ছুটি নির্ধারিত ছিল। কিন্তু ঈদযাত্রা নির্বিঘœ করতে সরকার একদিন ছুটি বাড়িয়ে মঙ্গলবারও সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। এরপর ১ জুলাই শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তাই এবার ২৭ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত টানা পাঁচ দিনের ছুটি ভোগ করবেন সরকারি চাকরিজীবীরা। ঈদযাত্রায় ভাড়া আদায়ে নৈরাজ্য চলছে: এদিকে, ঈদযাত্রায় সড়ক ও নৌপথের বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে বলে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী এ দাবি জানান। অনতিবিলম্বে এ ভাড়া নৈরাজ্য বন্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, বিআরটিএ, জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতা বাড়ানোর দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি। তিনি বলেন, এবারের ঈদে যানজট ও জনজট নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশংসনীয় তৎপরতা লক্ষ্য করা গেলেও বিভিন্ন রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য চলছে। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গের পথে বিভিন্ন রুটে গত সোমবার থেকে যাত্রীপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বাড়তি ভাড়া নেয়া হচ্ছিল। গতকাল সকাল থেকে এই ভাড়া আরও বাড়তি আদায় করা হচ্ছিল। চট্টগ্রাম থেকে ভোলা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ উত্তরবঙ্গের পথে যাত্রীপ্রতি দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করা হয়। বিবৃতিতে আরও জানানো হয়, নৌ-পথেও এমন কূটকৌশলের ফাঁদে ফেলে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এমন ভাড়া নৈরাজ্য চললেও তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যাচ্ছে না।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More