কোভিড-১৯ মহামারীতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সংকটে পড়া নন-এমপিওভুক্ত এক লাখ ৬৭ হাজার শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রায় ৭৫ কোটি টাকা এককালীন অনুদান দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া বুধবার অনুদান দেওয়ার এই তথ্য জানিয়েছেন। এই অনুদান থেকে একজন শিক্ষক ৫ হাজার এবং কর্মচারী আড়াই হাজার টাকা করে পাবেন।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৫ হাজার ৭৮৫ জন শিক্ষক- কর্মচারী এবং কারিগরি শিক্ষা, মাদ্রাসা শিক্ষা ও স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ৬১ হাজার ৪৪০ জন শিক্ষক কর্মচারী এই আর্থিক সহায়তা পাবেন। এ জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগকে ৪৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা এবং কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগকে ২৮ কোটি ১৮ লাখ এককালীন অনুদান হিসিবে প্রদান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মহামারীর এই দু:সময়ে প্রধানমন্ত্রীর এমন উদ্যোকে স্বাগত জানিয়ে সরকার প্রধানকে ধন্যবাদ জানানোর পাশপাশি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মচারীরা। নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক-কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি ও খুলনা আইডিয়াল কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদুন্নবী ডলার বলেন – আমরা জানি তিনি একজন শিক্ষকবান্ধব প্রধানমন্ত্রী। মহামারীর মধ্যেও তিনি নন-এমপিওভুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি এবং তাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
শিক্ষকদের এই অনুদান দেওয়ার আগে লকডাউনে কাজ হারানো, দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষদের সহায়তা দেন প্রধানমন্ত্রী। ২ মে সাড়ে ৩৬ লাখ পরিবারকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে আড়াই হাজার টাকা দেওয়ার কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন তিনি। মহামারীর প্রথম পর্যায়েও গত বছর প্রধানমন্ত্রী সমপরিমাণ পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া এর আগে জানিয়েছিলেন, মহামারীর দ্বিতীয় ঢেউ যখন আসে, প্রধানমন্ত্রী তাৎক্ষণিকভাবে মানবিক সহায়তা কার্যক্রম শুরুর নির্দেশ দেন। তিনি বলেন, দেশে দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৪ এপ্রিল থেকে কঠোর লকডাউন শুরু হলে সারাদেশের প্রতিটি এলাকাতেই বিভিন্ন শ্রেণি পেশার শ্রমজীবী মানুষ ও প্রান্তিক জনপদের মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় তাৎক্ষণিক ৫৯০ কোটি টাকা মাঠ পর্যায়ে বিতরণ করেছে। এই কার্যক্রম এখনও চলছে বলে জানান তিনি। অন্যদিকে মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত দরিদ্র, অসহায় মানুষের সহায়তার জন্য ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট’ এর পক্ষ থেকে এরই মধ্যে সরকারকে ৫ কোটি টাকা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এছাড়া এই ট্রাস্টের পক্ষ থেকে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ন প্রকল্পে আরও ৫ কোটি টাকাসহ সর্বমোট ১০ কোটি টাকা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী তার ত্রাণ তহবিল থেকে দরিদ্র, ছিন্নমূল মানুষের সহায়তার জন্য জেলা প্রশাসকদের অনুকূলে আরও ১০ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়েছেন।গণমাধ্যমকর্মীদের সহায়তার জন্যও প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টে ১০ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছেন। এছাড়া হাওর এলাকায় ধানকাটা শুরু হলে দেশের বিভিন্ন জনপদ থেকে যে সমস্ত শ্রমিক ওইসব এলাকায় ধান কাটতে যান, তাদের সেখানে নিয়ে যেতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার নির্দেশও দেন সরকারপ্রধান।
সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ আঘাত হানার পর প্রায় ১ কোটি ২৪ লাখ ৪২ হাজার নিম্নবিত্ত পরিবারের জন্য অর্থ বরাদ্দের কথা তুলে ধরে বাংলা নববর্ষের আগের দিন জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, “আপনাদের শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সরকার সবসময় আপনাদের পাশে রয়েছে।” এছাড়া সরকারি পদক্ষেপের অংশ হিসেবে সারাদেশে শহর এলাকায় নিম্নবিত্ত মানুষের মাঝে প্রতিদিন ৫০০ ট্রাকের মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, ছোলা, খেঁজুর, পেঁয়াজ সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি করেছে টিসিবি।