স্টাফ রিপোর্টার: ভোটের প্রতি দেশের মানুষের আস্থা ফেরানোই নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা। তাদের মতে, বিদায়ী কমিশনের নেতৃত্বে গত ৫ বছরে জাতীয় সংসদ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যায়ে যে ভোট হয়েছে- তাতে মানুষের মতামত প্রতিফলিত হয়নি। বরং অনেক জায়গায় ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে। এ কারণে সাধারণ মানুষের ভোটের প্রতি এক ধরণের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। নবগঠিত ইসির প্রথম কাজ হবে মানুষের আস্থা ফেরানো।
দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপির দাবি, সরকারের অনুগত লোক দিয়েই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। দলটির নেতারা বলছেন, এটা আরেকটি হুদা কমিশন। এসব নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই। শেখ হাসিনার সরকার বা তাদের করা কমিশনের অধীনে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তার অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তাতে বিএনপিসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।
গতকাল শনিবার আলাদা প্রতিক্রিয়ায় রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা এসব কথা বলেন। এর আগে সাবেক সিনিয়র সচিব কাজী হাবিবুল আউয়ালকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম রাশিদা সুলতানা, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবীব খান এবং সাবেক সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর ও আনিছুর রহমানকে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) হিসেবে আগামী পাঁচ বছরের জন্য নিয়োগ দেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। শনিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়।
নতুন নির্বাচন কমিশনকে নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা সরকারের পছন্দের লোক। তারা সবাই সরকারের অনুগত, সুবিধাভোগী ও তোষামোদকারী। এদের অধীনে নির্বাচনে যাবেন না তারা। নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে তার দলের কোনো আগ্রহ নেই জানিয়ে তিনি বলেন, তাদের কাছে এটি কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোনো কমিশন কাজ করতে পারবে না। এটা জাতীয় ও স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে প্রমাণ হয়েছে। আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট, সরকারকে পদত্যাগ করে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। ওই সরকার নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। তার অধীনে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে তাতে আমরাসহ সব দল অংশগ্রহণ করবে।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে সরকার যে নাটক করেছে যার শেষ ধাপ ছিল আজ (শনিবার)। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের দিয়ে সার্চ কমিটি গঠন করা হয়েছে। সার্চ কমিটি সরকারের তালিকা অনুযায়ী লোকদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতিও সরকারের দেয়া পাঁচজনের তালিকা প্রকাশ করেছেন। এটা পুরোটাই নাটক।
নতুন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা এ সরকারের আমলে গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছেন দাবি করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সর্বক্ষেত্রে দলীয়করণ হয়েছে। প্রশাসনের সর্বত্র সরকারের লোকজন। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা সরকারের সুবিধাভোগী। সরকার তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়েছিলেন। অনুগত বলেই তাদের নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, এ কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো আগ্রহ ছিলো না। এখনো নেই। নতুন ইসিতে যাদের নাম দেখলাম এটা আরেকটি হুদা কমিশন হয়েছে। এদের প্রত্যেকেই শেখ হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী।
নবগঠিত নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানান সাবেক মন্ত্রী ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন এমপি। তিনি বলেন, গত ৫ বছরে দেশের মানুষের নির্বাচনের প্রতি যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে, তা থেকে উত্তরণে কাজ করবে নতুন কমিশন- এমনটাই আমি আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নির্বাচনি ব্যবস্থা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটি নানা কারণে ভেঙে পড়েছে। এই ভেঙে পড়া ইসিকে পুনর্গঠন, পুনর্বিন্যাস করে এবং নির্বাচনের প্রতি জন আস্থা ফিরিয়ে আনাই হবে নতুন ইসির জন্য আগামীদিনের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আর যদি তারা তা করতে ব্যর্থ হন- তাহলে ফলাফল কারও জন্যই সুখকর হবে না।
সাবেক মন্ত্রী ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চার নির্বাচন কমিশনারকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি আশা করি নির্বাচন কমিশন গঠনের আইন অনুযায়ী সার্চ কমিটির মাধ্যমে সুপারিশকৃত দশজন উপযুক্ত ব্যক্তির মধ্য থেকে রাষ্ট্রপতি কমিশন গঠন করেছেন। এই কমিশন দেশের সংবিধান ও আইনকে সমুন্নত এবং নির্বাচন কমিশনের মর্যাদা অক্ষুণœ রেখে আগামীতে তাদের মেয়াদকালে অনুষ্ঠিতব্য আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানে সাফল্য অর্জন করবেন।
জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি বলেন, ‘কাজী হাবিবুল আউয়ালকে (প্রধান নির্বাচন কমিশনার) চিনি, জানি। তার সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে। কিন্তু বাকি চার কমিশনার সম্পর্কে তেমনটা জানি না। আমরা খোঁজখবর নেব। তারপর প্রতিক্রিয়া জানাব।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, কাল (রোববার) বেলা ১১টায় বনানীর পার্টি চেয়ারম্যানের কার্যালয় রজনীগন্ধায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সভা অনুষ্ঠিত হবে। এই সভা শেষে তারা নবগঠিত নির্বাচন কমিশন সম্পর্কে দলীয় অবস্থান এবং বক্তব্য সংবাদ সম্মেলন করে আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরবেন।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, সরকারের আস্থাভাজন ও ঘনিষ্ঠজন বলে বিবেচিত লোকদের দিয়েই নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে- এটাই বাস্তব সত্য।
তিনি আরও বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে দুজনকে চিনি না, বাকি তিনজনকে ভালোভাবে চিনি। যাদের চিনি তারা সরকারেরই আস্থাভাজন বলে বিবেচিত। সাইফুল হক বলেন, প্রয়োজন ছিল মেরুদ-সম্পন্ন দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন। সেরকমটা না করে সরকার অতীতের ধারাবাহিকতা অনুসরণ করে নিজেদের পছন্দের এবং আস্থাভাজন লোক দিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। এতে করে ভবিষ্যতে সংকট আরও ঘনীভূত হবে।