দেড় বছর পর খুললো ঢাবির হল : সব শিক্ষার্থীর জন্য হল খুলবে ১০ অক্টোবর

শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর ক্যাম্পাস : ১৬ অক্টোবর থেকে সশরীরে ক্লাস
স্টাফ রিপোর্টার: করোনা মহামাীরতে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আবাসিক হল মঙ্গলবার খুলে দেয়া হয়েছে। এদিন স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের ফুল, চকলেট ও মাস্ক দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। শিক্ষার্থীদের পদচারণায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ফের মুখরিত হয়ে ওঠে। যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’খ্যাত দেশের সর্বোচ্চ এই বিদ্যাপীঠ। প্রসঙ্গত, দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ২০২০ সালের মার্চে অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম ও আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার জন্য ১৩ মার্চ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয় একাডেমিক কাউন্সিল। কিন্তু করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ৫ অক্টোবর (মঙ্গলবার) থেকে স্নাতক শেষ বর্ষ ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল খোলার সিদ্ধান্ত নেয় সিন্ডকেট।
এদিকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির এক সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ১ম বর্ষ, ২য় বর্ষ এবং ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ অক্টোবর থেকে আবাসিক হল খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ১৬ অক্টোবর থেকে সশরীরে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করার সুপারিশ করা হয়েছে। উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে সভায় প্রো-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, বিভিন্ন হোস্টেলের ওয়ার্ডেন এবং প্রক্টর উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবদুল বাছির যুগান্তরকে বলেন, যেসব শিক্ষার্থী অন্তত ‘কোভিড-১৯’-এর প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে, তারা স্বাস্থ্যবিধি এবং স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসেডিউর অনুসরণ করে টিকা গ্রহণের কার্ড/সনদ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈধ পরিচয়পত্র সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দেখিয়ে নিজ নিজ হলে সকাল ৮টা থেকে প্রবেশ করতে পারবে। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. মজিবুর রহমান বলেন, ১৬ অক্টোবর থেকে সশরীরে ক্লাস শুরু করার সুপারিশ করা হয়েছে। তবে এ বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিল চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীদের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) প্রাপ্তির জন্য আগামী ৭ অক্টোবর থেকে টিএসসিতে ভোটার রেজিস্ট্রেশন কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যেসব শিক্ষার্থীর জাতীয় পরিচয়পত্র নেই তারা এই কেন্দ্র থেকে রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে দ্রুত এনআইডি করতে পারবে।
মঙ্গলবার সকাল ৮টায় আবাসিক হলগুলোর গেট খোলার কথা থাকলেও এর আগেই সেখানে ভিড় করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন পর সহপাঠীদের দেখতে পেয়ে শিক্ষার্থীরা একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। নির্ধারিত সময়ে হলগুলোর গেট খুলে দেওয়া হয়। এ সময় হলের প্রাধ্যক্ষ, হাউজ টিউটর ও কর্মচরীরা ফুল, চকলেট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগো সংবলিত মাস্ক দিয়ে তাদের বরণ করে নেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের টিকা কার্ড ও হলের বৈধ পরিচয়পত্র চেক করা হয়। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল পরিদর্শন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার, ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া, প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী, সংশ্লিষ্ট হলের প্রাধ্যক্ষ, আবাসিক শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
উপাচার্য হল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, এই ক্যাম্পাস শিক্ষার্থীদের। শিক্ষার্থীরা চলে আসায় শিক্ষকদের মধ্যেও একটা প্রাণচঞ্চলতা চলে এসেছে। প্রশাসনের মধ্যে প্রাণচঞ্চলতা এসেছে। সবার মনে আনন্দ, এটা সবচেয়ে বড় দিক। এতদিন যে স্থবিরতা ছিল, সেটার অবসান ঘটেছে। যত দ্রুত সম্ভব সব শিক্ষার্থীকে আমরা হলে নিয়ে আসতে পারি, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। আজকের এ কর্মসূচি আমাদের পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণে অনুপ্রেরণা দেবে।
দুই-একদিনের মধ্যেই অন্যান্য বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলে তোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুটি সূচক আমাদের সামনে আছে, যেগুলো শিক্ষার্থীদের আনার অনুকূলে যায়। একটি হলো সংক্রমণ হার, সেটি একদমই নিচের দিকে। আরেকটি হলো শিক্ষার্থীদের টিকা কার্যক্রমের আওতায় নিয়ে আসার হার, সেটিও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ দুটি আশাব্যঞ্জক সূচক বিবেচনায় নিয়েই দুয়েক দিনের মধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত নেব। যাতে সব শিক্ষার্থীকে নিয়েই আমরা স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যেতে পারি।
এদিকে দীর্ঘদিন পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা ফেরায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ই। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক ও বিজয় একাত্তর হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির বলেন, শিক্ষার্থীরা ফেরায় আমাদের উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। সবচেয়ে বড় কথা হলো, মহামারির পর তারা হলে এসেছে, এটা আমাদের জন্য আনন্দের বিষয় এবং তারা কিছুটা হলেও যে মহামারিকে পরাজিত করতে পেরেছে, এটা তার আভাস। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, হলে আসার পর শিক্ষার্থীদের যে প্রাণচঞ্চলতা, এটাও আমাদের অনুপ্রাণিত করছে।
হিজবুল্লাহ নিহার সাঈদ নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, অনেকদিন পর হলে প্রবেশ করতে পেরে ভালো লাগছে। এতদিন মেসে ছিলাম, অনেক বেশি কষ্ট করতে হয়েছে। এখন অন্তত পড়ার পরিবেশটা পাব। যারা সাবেক হয়ে গেছে, তাদের বের করলে সবার জন্য ভালো হবে। বর্তমান শিক্ষার্থী ভালোভাবে থাকতে পারবে এবং পড়ার পরিবেশ পাবে। সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. মজিবুর রহমান বলেন, হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে বৃত্তাকার চিহ্ন করে দিয়েছি। শিক্ষার্থীরা তা মেনে প্রবেশ করছেন। আবাসিক শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং ছাত্রনেতারা আমাদের সহযোগিতা করছেন। এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সুশৃঙ্খলভাবে হলে প্রবেশ করছেন। হলে ফেরার অনুভূতি জানতে চাইলে রোকেয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন রিমি যুগান্তরকে বলেন, আজ হলে উঠতে পেরে আমরা এতটাই আনন্দিত, যা বড় কোনো উৎসবের আনন্দকে হার মানাবে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে একটাই দাবি-যত দ্রুত সম্ভব আমাদের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা হোক।
টিকা নিলেন ৩৬৫ জন: শিক্ষার্থী-শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের করোনার টিকা প্রদানের জন্য বিশেষ অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ বুদ্ধিজীবী ডা. মোহাম্মদ মোর্তজা মেডিকেল সেন্টারে টিকা কার্যক্রমের প্রথম দিনে ৩৬৫ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. সারওয়ার জাহান মুক্তাফি যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজ (মঙ্গলবার) টিকা প্রদানের দ্বিতীয় দিনে ৩৬৫ জন টিকা নিয়েছেন। এর মধ্যে ১৩০ ছাত্র, ১০০ জন ছাত্রী, বাকি ১৩৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More