দেশে করোনা মহামারীর এক বছর পূর্ণ হলো আজ
এক বছরে ৮ হাজার ৪৬২ জনের মৃত্যু : শনাক্ত সাড়ে পাঁচ লাখ
স্টাফ রিপোর্টার: দেশে মহামারী করোনাভাইরাস আক্রান্ত শনাক্ত হওয়ার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ ৮ মার্চ সোমবার। স্বাস্থ্য অধিদফতরের সর্বশেষ করোনা বিষয়ক বুলেটিন অনুযায়ী গতকাল রোববার পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। মৃত্যু হয়েছে ৮ হাজার ৪৬২ জনের। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গার ৫০ জন।
স্বাস্থ্য বিভাগের দেয়া তথ্য মতে আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৩ হাজার ৩ জন। রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৬০৬ রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এতে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫০ হাজার ৩৩০। গত একদিনে এ ভাইরাসে আরও ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এতে মৃতের সংখ্যা ৮ হজার ৪৬২ হয়েছে। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৩ হাজার ৩ জন। এ সময়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের মানুষও প্রাণঘাতী এ ভাইরাসের নৃশংসতা দেখেছে, যা গত একশ বছরে কেউ দেখেনি। বিশেষ করে মৃত্যুভয় মানুষকে এতটাই তাড়িত করেছে যে তাদের জীবনধারাই বদলে গেছে।
গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম তিনজনের শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর। এরপর থেকে শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়তেই থাকে। গত ১১ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ সংকটকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে। এরপর পুরো বিশ্বে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। শুরু হয় লকডাউনের বিধিনিষেধ। ফলে বিশ্বের বেশির ভাগ অঞ্চলে জনজীবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, দেশে করোনা সংক্রমণ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত জাতিকে কঠিন বাস্তবতার মধ্যদিয়ে যেতে হয়েছে। পাড়ি দিতে হয়েছে নানা প্রতিকূলতা। তবে এখনো মহামারী নিয়ন্ত্রিত নয়। তাই সবাইকে সাবধানের সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি। ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর। চীনে নতুন ধরনের এক ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর সারা বিশ্বকে ভাবিয়ে তোলে। তিন মাসের মাথায় ২০২০ সালের ৮ মার্চ সেই ভাইরাস বাংলাদেশেও পৌঁছে যায়। মহামারী নিয়ন্ত্রণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয় ১৭ মার্চ। ২৬ মার্চ থেকে সব অফিস-আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সারাদেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। সরকারিভাবে একে বলা হয় ‘সাধারণ ছুটি’, তবে তা ‘লকডাউন’ হিসাবেই সাধারণের মধ্যে পরিচিতি পায়। এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় সরকারের তরফ থেকে, যা করোনাভাইরাসে বাংলাদেশে একদিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু। আর ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জনের কোভিড-১৯ রোগ শনাক্ত হয়, যা একদিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত। লকডাউনে দেশের দরিদ্র আয়ের মানুষের জীবন ও জীবিকার অসম সমীকরণ মেলাতে অন্য দেশের মতো বাংলাদেশেও মে মাসের শেষদিকে বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু হয়। টানা ৬৬ দিনের লকডাউন ওঠার পর ৩১ মে থেকে অফিস খোলার পাশাপাশি সীমিত পরিসরে গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। ধীরে ধীরে শুরু হয় অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট চলাচল। আগস্টে বিনোদনকেন্দ্রও খুলে দেয়া শুরু হয়। মহামারীর কারণে এ বছর বিধিনিষেধের মধ্যে কেটেছে বাঙালির বর্ষবরণের উৎসব, দুই ঈদ, দুর্গা পূজাসহ সব ধর্মীয় আয়োজন। রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতাগুলোও সীমিত করে আনতে হয়। স্থগিত রাখতে হয় মুজিবববর্ষের বিপুল আয়োজন। বছরের শেষে সরকারি-বেসরকারি সব ধরনের প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এখনও বন্ধ। যদিও সম্প্রতি শিক্ষা মন্ত্রণালয় আগামী ৩১ মার্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকের পাশাপাশি পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষাও নেয়া হয়নি মহামারীর কারণে।