দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার আরও বাড়তে পারে
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণ ও মৃত্যুর মধ্যেই আরও আতঙ্কের খবর এসেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস ব্যবস্থাপনা কোর কমিটি করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ে উদ্বেগজনক পূর্বাভাস দিয়েছে। করোনায় চলমান সংক্রমণ ও মৃত্যু আগামীতে আরও বাড়বে উল্লেখ করে কমিটির পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সংক্রমণের চলমান ধারা অব্যাহত থাকলে এবং নমুনা পরীক্ষা ৩৫ হাজার বা তার বেশি হলে প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার করে কভিড রোগী শনাক্ত হতে পারে এবং মৃত্যু হবে গড়ে ১০০ জনের কাছাকাছি।
চলতি মাস (এপ্রিল) থেকে মের মাঝামাঝি অথবা শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত সংক্রমণ ও মৃত্যুর এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে। তবে চলমান লকডাউন অব্যাহত থাকলে এবং মানুষ যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে, মাস্ক ব্যবহার করলে আগামী মাসের মাঝামাঝি অথবা শেষ সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কিছুটা কমে আসতে পারে। এসব শর্ত পূরণ না হলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের আট সদস্যের জনস্বাস্থ্যবিদ সমন্বয়ে গঠিত কমিটি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউট এবং কানাডিয়ান একটি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দল সমন্বিতভাবে বাংলাদেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ও মৃত্যুর পূর্বাভাস নিয়ে কাজ করছে। তাদের পর্যালোচনায় করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু নিয়ে এ চিত্র উঠে এসেছে। গত সপ্তাহে করোনার পূর্বাভাস-সংক্রান্ত ওই প্রতিবেদনটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এপ্রিলের বাকি সময়ে আরও এক লাখ ৩০ হাজার মানুষ আক্রান্ত এবং এক হাজার ৩০০-এর মতো মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এই ধারা মের মাঝামাঝি পর্যন্ত অব্যাহত থাকলে আরও দুই লাখ ৮০ হাজার মানুষ আক্রান্ত এবং দুই হাজার ৮০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করতে পারে। এটি মে মাসজুড়ে চললে আরও প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ আক্রান্ত এবং প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষের মৃত্যু হতে পারে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের করোনাভাইরাস ব্যবস্থাপনা কোর কমিটির সদস্য হিসেবে যুক্ত আছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. শাহ মনির হোসেন। তিনি বলেন, এ-সংক্রান্ত একটি প্রেজেন্টেশন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষের সামনে উপস্থাপন করা হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে কী করলে সংক্রমণ ও মৃত্যু আরও বাড়বে এবং কী করলে কমবে, সে সম্পর্কেও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ডা. শাহ মনির আরও বলেন, বর্তমানে দেশজুড়ে এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ চলছে। সরকারি প্রজ্ঞাপনে এটিকে লকডাউন বলা হয়নি। তবে এই বিধিনিষেধ অনেকটা লকডাউন সমপর্যায়ের। কারণ জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু প্রায় বন্ধ আছে। একমাত্র শিল্প-কলকারখানা ও গার্মেন্ট ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব অফিস-আদালত বন্ধ আছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকে ঘরের বাইরে বের হতে দেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থা টানা ১৪ দিন ধরে চললে সংক্রমণের একটি ধাপ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। কারণ করোনাভাইরাসের সুপ্তিকাল ১৪ দিন। তিনি বলেন, এই ভাইরাস কোনো মানুষের শরীরে প্রবেশ করলে এক থেকে ১৪ দিনের মধ্যে এটি প্রকাশ পায়। সুতরাং ১৪ দিনের লকডাউন হলে এ সময়ে আক্রান্তরা সবাই প্রকাশ্যে আসবে। তাদের অন্যদের থেকে আইসোলেশন করা গেলে সংক্রমণ ১৪ দিন পর কিছুটা কম হবে। তবে এর ফল পেতে আরও এক সপ্তাহ লাগবে। সে ক্ষেত্রে মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমে আসতে পারে। আরও ১৪ দিন লকডাউন করা গেলে আরও একটি ধাপের সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। এভাবে সংক্রমণ ও মৃত্যু কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করেন তিনি।
সংক্রমণের সঙ্গে দীর্ঘতর হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল :করোনা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়ানক রূপ নিচ্ছে। সংক্রমণ ও মৃত্যুতে প্রতিদিনই নতুন রেকর্ড হচ্ছে। আগের দিনের তুলনায় পরদিন মৃত্যু বাড়ছে। শুক্চরবার নতুন রেকর্ড গড়ে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছরের ৮ মার্চ দেশে করোনা সংক্রমণের পর এক দিনে এটিই সর্বোচ্চ মৃত্যু। এর আগে গত বুধবার একদিনে ৯৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ৯৪ জন মৃত্যুবরণ করেন।
তবে সংশ্নিষ্টরা বলছেন, নমুনা পরীক্ষা কম হওয়ায় গত দু’দিন ধরে কিছুটা কম রোগী শনাক্ত হচ্ছে। তবে নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ২৩ শতাংশের ওপরে থাকছে। সংক্রমণ পরিস্থিতি এমন আকার ধারণ করেছে যে, হাসপাতালে শয্যা মিলছে না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানে হাসপাতালে সাধারণ ও আইসিইউর যে শয্যা ফাঁকা থাকার কথা উল্লেখ করা হয়, বাস্তবতার সঙ্গে তার মিল নেই। গতকাল উত্তরার কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে সাধারণ শয্যা ৪৮টি এবং আইসিইউ বা সমতুল্য শয্যা ২৭টি ফাঁকা থাকার তথ্য রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাতে। কিন্তু হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে কোনো শয্যাই ফাঁকা পাওয়া যায়নি।