দেশের ১৩ জেলায় একদিনে বজ্রপাতে ঝরলো ২৭ প্রাণ
কালবৈশাখি ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি : ভেঙেছে গাছপালা
স্টাফ রিপোর্টার: কালবৈশাখী ঝড় ও বজ্রপাতে গত কয়েকদিন ধরে বেড়েছে প্রাণহানি। গতকাল মঙ্গলবার দেশের ১৩ জেলায় ঝড় ও বজ্রপাতে ২৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দুপুর থেকে শুরু হওয়া ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতে এ প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে নরসিংদীতে পাঁচজন, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিনজন, পাবনায় দুজন, কুড়িগ্রামে দুজন মারা গেছেন। এছাড়া নওগাঁ, নেত্রকোনা, চাঁদপুর, পটুয়াখালী, সুনামগঞ্জ, শরীয়তপুর, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর ও কিশোরগঞ্জে একজন করে মারা গেছেন। কৃষিকাজ, আম কুড়াতে এবং মাছ ধরতে গেলে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে। কালবৈশাখি ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে পাঁচশতাধিক ঘরবাড়ি, ভেঙেছে গাছপালা। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও। ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন ফসলের। অনেক এলাকায় চলাচল বিঘœও বিদ্যুৎ সংযোগ সাময়িক বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ঝড়ে ঘরবাড়ি ও গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ সচল ও যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করতে বিদ্যুৎ বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সদস্যরা নিরলসভাবে কাজ করেছেন।
আমাদের নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, জেলায় বজ্রপাতের পৃথক ঘটনায় এক নারীসহ পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। জেলা সদর, রায়পুরা, মনোহরদী ও শিবপুর উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এই ঘটনা ঘটে। রায়পুরা উপজেলার নিহতরা হলেন-শ্রীনগর ইউনিয়নের ফকিরের চর গ্রামের মোমরাজ মিয়ার স্ত্রী সামসুন নাহার (৪৫) ও নিলক্ষা ইউনিয়নের গোপীনাথপুর গ্রামের ইসমাইল মিয়ার ছেলে জাবেদ মিয়া (১২)। মনোহরদী উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের পাতরদিয়া গ্রামের মৃত বাদল মিয়ার ছেলে রায়হান মিয়া (২৫), শিবপুর উপজেলার দক্ষিণ সাদারচর গ্রামের খোরশেদ মিয়ার ছেলে খোকন মিয়া (৩০), নরসিংদী শহরের পশ্চিমকান্দাপাড়া মহল্লার সুকুমার রায়ের ছেলে শুপ্তকর (১৪)।
আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর ও বাঞ্ছারামপুরে পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় দুই কৃষকসহ তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। নাসিরনগরে বজ্রপাতে মোজাম্মেল হক (৩২) নামে একজন ইটভাটা শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার দুপুর দুটোর দিকে উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের এ ঘটনা ঘটে। নিহতের বাড়ি নাসিরনগর উপজেলার গোয়ালনগর ইউনিয়নের সোনাতলা গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের মতি মিয়ার ছেলে। গোয়ালনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজহার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে একই উপজেলার বুড়িশ্বর ইউনিয়নে মেদির হাওরে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে অলি মিয়া নামে এক শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে বলে স্থানীয়দের দাবি। তিনি আশুরাইল গ্রামের নাজিমুদ্দিনের ছেলে।
এদিকে বাঞ্ছারামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একে মিত্র চাকমা বলেন, বজ্রপাতে মনু মিয়া নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। দুপুরে উপজেলার মানিকপুরে তিনি জমিতে কাজ করছিলেন। তখন বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।
পাবনা প্রতিনিধি জািনয়েছেন, মাঠে কাজ করা অবস্থায় পাবনার ভাঙ্গুড়া উপজেলায় বজ্রপাতে দুই শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও ১৩ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার বেতুয়ান গ্রামে ধান কাটার সময় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শ্রমিকরা হলেন জেলার চাটমোহর উপজেলার ছাইকোলা গ্রামের বাসিন্দা শাকিল হোসেন (১৯) ও রমিজ উদ্দিন (৩০)। এ সময় বজ্রপাতে আরও অন্তত ১৩ জন আহত হয়। আহতদের ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসা আহত শ্রমিকরা জানান, দিলপাশার ইউনিয়নের বেতুয়ান গ্রামের বাওনজান এলাকায় বোরো ধান কাটছিলেন ১৫ জন শ্রমিক। ওই এলাকায় মঙ্গলবার বিকেলে ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রচ- বৃষ্টিপাত শুরু হয়। এতে শ্রমিকরা পাশের একটি উন্মুক্ত খোলা ঘরে আশ্রয় নেন। কিছুক্ষণ পরে বজ্রপাতে ওই ঘরে অবস্থান করা ৫ জন শ্রমিক মারাত্মক আহত হন। এ সময় অন্যান্য শ্রমিকরা তাদেরকে উদ্ধার করে ভাঙ্গুড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এ নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসক দুই শ্রমিককে মৃত ঘোষণা করেন।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানিয়েছেন, কুড়িগ্রামের উলিপুর ও চিলমারী উপজেলায় বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা কৃষকরা হলেন, উলিপুর থেতরাইয়ের মো. শাহাজালাল (৪৫) ও চিলমারী উপজেলার রানীগঞ্জ ইউনিয়নের অবরু শেখ (৫০)। এসময় চিলমারীতে আরও ৩ কৃষক আহত হন। আহতরা উলিপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
রাণীগঞ্জ ইউনিয়নের স্থানীয় ইউপি সদস্য বাচ্চু মিয়া জানান, চর উদনায় ধান কাটতে গিয়ে চার কৃষক বজ্রপাতে আহত হন। তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পথে অবরু শেখ মারা যান। বাকিদের উলিপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতরা হলেন- ফুলবাবু, আম্মর আলী ও আশরাফুল ইসলাম।
নওগাঁ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নওগাঁর রানীনগরে বজ্রপাতে জামিল প্রামাণিক (২০) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। নিহত জামিল উপজেলার গোনা ইউনিয়নের ভবানীপুর এলাকার মৃত আজাদ প্রামাণিকের ছেলে।
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, নেত্রকোনার মদনে বিলে মাছ ধরতে গিয়ে বজ্রপাতে জয়নাল আবেদিন (৪০) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান গ্রামের সামনের বিলে মাছ ধরতে গেলে সেখানে বজ্রপাতে মারা যান তিনি। জয়নাল আবেদিন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে।
চাঁদপুর প্রতিনিধি জািনয়েছেন, চাঁদপুর সদর উপজেলায় বজ্রপাতে মো. হাছান মিজি (৪৫) নামে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার ৫নং রামপুর ইউনিয়নের পশ্চিম ছোটসুন্দর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হাছান মিজি ওই গ্রামের গফুর মিজি বাড়ির মৃত মো. কলোমদ্দিন মিজির ছেলে। তিনি পেশায় দিনমজুর ছিলেন।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, পটুয়াখালীর দশমিনায় মাঠে গরু চরাতে গিয়ে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে বজ্রপাতের এ ঘটনা ঘটেছে। নিহত আব্দুর রউফ হাওলাদার উপজেলার সদর ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ডের কাঠাখালি গ্রামের চাঁনমিয়া হাওলাদার বাড়ির মৃত আলী হাওলাদারের ছেলে।
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জের ধর্মপাশায় বজ্রপাতের শব্দে নৌকা থেকে ছিটকে নদীতে পড়ে এক স্কুলছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় বজ্রপাতের আহত হয়েছেন এক কৃষক। গতকাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে উপজেলার বাদেহরিপুর গ্রামের পাশে বরইয়া নদীতে এ ঘটনা ঘটে বলে জয়শ্রী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সঞ্জয় রায় চৌধুরী জানান। নিহত ১৫ বছর বয়সি ওমর ফারুক ওই গ্রামের আলা উদ্দিনের ছেলে। সে জয়শ্রী উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র। আহত কৃষক আবুল কাশেম একই গ্রামের বাসিন্দা।
শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলায় বজ্রপাতে মো. মাঈনুদ্দিন মান্দ (২৭) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে উপজেলার কোদালপুর ইউনিয়নের রশিদ সরদার পাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত মাঈনুদ্দিন মান্দ ভেদরগঞ্জ উপজেলার দক্ষিণ তারাবুনিয়া ইউনিয়নের ঢালী কান্দি গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তার মান্দের ছেলে। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। এছাড়া সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, দিনাজপুরের সদর উপজেলা এবং কিশোরগঞ্জের ভৈরবে বজ্রপাতে একজন করে মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।