স্টাফ রিপোর্টার: উচ্চমাধ্যমিকে দুবছরে প্রায় ৩০ শতাংশ শিক্ষার্থী লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসাবে অংশ নিচ্ছে ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৩৯ জন। কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে তাদের সঙ্গে নিবন্ধন করেছিলো ১৭ লাখ ৬০ হাজার ৭৯৩ জন। এই হিসাবে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৮৫৪ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় বসছে না। এটা মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৩০ শতাংশ। ১৭ আগস্ট এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। তবে এই ব্যাচে এসএসসি উত্তীর্ণদের মধ্যে লেখাপড়ার বাইরে চলে যাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা আরও বেশি। কেননা এবারের এই ব্যাচটি ২০২১ সালে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাস করেছে। ওই বছর মাধ্যমিক উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী ছিল ২০ লাখ ৯৬ হাজার ৫৪৬ জন। ২০২১ সালে এসএসসি পাসের পর ভর্তিই হয়নি ৩ লাখ ৩৫ হাজার ৭৫৩ জন। অর্থাৎ, এসএসসি পাশ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় বসা পর্যন্ত ঝরে পড়ার প্রকৃত সংখ্যাটি দাঁড়াচ্ছে ৮ লাখ ৬১ হাজার ৬০৭ জন বা ৪১ শতাংশ।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, এসএসসি বা এইচএসসি স্তরে প্রতিবছরই কিছু শিক্ষার্থী লেখাপড়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। নিবন্ধনের পর পরীক্ষার সময় এলে এ সংখ্যাটি প্রকাশ পায়। কিন্তু তারা কেন লেখাপড়া ছেড়ে দিচ্ছে, সেই গবেষণা শিক্ষা বোর্ড থেকে কখনো করা হয়নি। তবে এ নিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) বা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার কাজ আছে। তারাই এ নিয়ে ভালো বলতে পারবে। যদিও সব সময়ের মতোই বলা যায়, আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এসএসসি পাসের পর বড় একটা অংশ কর্মজীবনে ভিড়ে যায়। তাদের মধ্যে ছেলে-মেয়ে উভয় আছে। এর নেপথ্যে দারিদ্র্য বড় ভূমিকা রাখছে। এছাড়া মেয়েদের একটা অংশের বিয়ে হয়ে যায়। তবে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিংসহ অন্যান্য কারিগরি শাখায় প্রতিবছর এক থেকে দেড় লাখ শিক্ষার্থী চলে যায়। সংখ্যা কম হলেও কিছু শিক্ষার্থী বিদেশে কাজে কিংবা লেখাপড়া করতে যায়। তাই পরীক্ষায় অংশ না নেয়া সবাই ঝরে পড়েছে-এমন সরলীকরণ ঠিক হবে না।
পরিসংখ্যানে দেখা যায়, যে ৫ লাখ ২৫ হাজার ৮৫৪ জন শিক্ষার্থী একাদশ শ্রেণিতে নিবন্ধন করেও পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে না, তাদের মধ্যে ছেলের সংখ্যা বেশি। মোট ৮ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৮ ছাত্র একাদশ শ্রেণিতে আবেদন করেছিল। তাদের মধ্যে পরীক্ষায় বসছে ৬ লাখ ১৮ হাজার ২০৩ জন। বাকি ২ লাখ ৮০ হাজার ১২৫ জন বা ৩১ দশমিক ১৮ শতাংশ ঝরে পড়েছে। অন্যদিকে ছাত্রীদের মধ্যে নিবন্ধন করেছিলো ৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৬৫ জন; কিন্তু পরীক্ষা দিচ্ছে ৬ লাখ ১৬ হাজার ৭৩৬ জন। বাকি ২ লাখ ৪৫ হাজার ৭২৯ জন বা সাড়ে ২৮ শতাংশ ঝরে পড়েছে। এবার যারা এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২১ সালে তিন বিষয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলো। দেশে ইতোমধ্যে পরীক্ষায় সর্বোচ্চ পাশের হার ছিলো ওইবছর, যা ৯৩ দশমিক ৫৮ শতাংশ। অতীত রেকর্ডে দেখা যায়, সাধারণত উচ্চমাধ্যমিকে গড়ে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে। যেমন: ২০২০ সালে এইচএসসিতে ৩ লাখ ৭৪ হাজার, ২০২১ সালে ৩ লাখ ১৮ হাজার এবং গত বছর ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬৭৮জন শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছিলো।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সহজ বিষয়ে বেশি পাশ হলেও এইচএসসি পর্যন্ত টিকে থাকার লড়াইয়ে হেরে গেছে তিন বিষয়ে পাশ করা শিক্ষার্থীরা। ফলে উত্তীর্ণদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশেরই এখন হদিস নেই। এই হিসাবে এবার ঝরে পড়ার হার স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বলে মনে করেন বোর্ড কর্মকর্তারা। পাশাপাশি তারা এ নিয়ে গবেষণারও প্রয়োজন বলে মনে করেন।
উল্লেখ্য, এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন অংশ নিচ্ছে। তাদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী ১২ লাখ ৩৪ হাজার ৯৩৯ জন। বাকিরা এক, দুই এবং তিন বা সব বিষয়ে গত বছর ফেল করা এবং অনিয়মিত ও মানোন্নয়ন পরীক্ষার্থী।
জানা যায়, এবার ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে। ২০২১ সালে এ বোর্ডে ৩ লাখ ৯২ হাজার ৫৪৩ জন একাদশ শ্রেণিতে নিবন্ধন করলেও পরীক্ষা দিচ্ছে ২ লাখ ৮৬ হাজার ৩ জন। ঝরে পড়েছে এক লাখ ৬ হাজার ৫৪০ জন। রাজশাহী বোর্ডে ঝরে পড়েছে ৪৩ হাজার ৪২০ জন। সেখানে একাদশ শ্রেণিতে এক লাখ ৬৪ হাজার ৩৯১ জন নিবন্ধন করে। এবার পরীক্ষা দিচ্ছে এক লাখ ২০ হাজার ৯৭২ জন। এভাবে কুমিল্লা বোর্ডে ৫০ হাজার ৮৪২, যশোরে ৪২ হাজার ৯৯৮, চট্টগ্রামে ৩৬ হাজার ৪৫, বরিশালে ২১ হাজার ৯০৪, সিলেটে ২৩ হাজার ৪৩৫, দিনাজপুরে ৩৫ হাজার ২০১ এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে ২২ হাজার ৭৮৫ জন ঝরে পড়েছে। এছাড়া মাদরাসা বোর্ডে এক লাখ ৫২ হাজার ৪২৯ জন নিবন্ধন করলেও পরীক্ষা দিচ্ছে ৯১ হাজার ৭৭০ জন। ৬০ হাজার ৬৫৯ জন ঝরে পড়েছে। আর কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে ২ লাখ ২০ হাজার ৮৪০ জন নিবন্ধন করলেও পরীক্ষা দিচ্ছে এক লাখ ৪৪ হাজার ৭১৫ জন। বাকি ৭৬ হাজার ১২৫ জন, যা ৩৩ শতাংশই ঝরে পড়েছে।