দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে চাই না ছোট দলগুলো
নির্দলীয়-নিরপেক্ষ এবং তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন চান শীর্ষ নেতারা
স্টাফ রিপোর্টার: দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে নারাজ দেশের বাম-প্রগতিশীল ঘরানার ছোট ছোট দল এবং ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের মতে, যেকোনো মূল্যে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং সব মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত। মানুষ একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে নির্বিগ্নে তার ভোটাধিকার প্রয়োগ করুক। পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিক। মানুষের গণরায়ে যারা ক্ষমতায় আসবে, আসুক। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতা বলছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে মানুষের এই চাওয়া পূরণ হবে না। তাই নির্দলীয়-নিরপেক্ষ এবং তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন চান এই দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবং তাদের শরিক ১৪ দলের সদস্যরা অতীতের মতো এবারও সংবিধানের ভেতরে থেকেই নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে। সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিরও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যেতে আপত্তি নেই। তবে এর বিপরীতে বিএনপিসহ তাদের শরিকদলগুলো নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। এর বাইরে থাকা বাম-প্রগতিশীল ঘরানার ছোট ছোট দল এবং ধর্মভিত্তিক ইসলামী দলগুলোও একই পথে হাঁটতে শুরু করেছে।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বৃহস্পতিবার বলেন, আমাদের সাংগঠনিক শক্তি, সক্ষমতা ও সামর্থ্য যেমনই থাকুক না কেন আমরা ভোট এবং ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াই করছি। আমরা মনে করি দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয়। এজন্য নির্দলীয়-নিরপেক্ষ-তদারকি সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। একই সঙ্গে আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনকে আরও স্বাধীন, শক্তিশালী ও কার্যকর করার পাশাপাশি নির্বাচন ব্যবস্থারও আমূল সংস্কার প্রয়োজন। তা না হলে ভোটে জনমতের সত্যিকারের প্রতিফলন ঘটবে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাম প্রগতিশীল ঘরানার দলগুলোর মধ্যে ছয়টি দল মিলে গড়ে ওঠা ‘বাম গণতান্ত্রিক জোট’ দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্তের কথা স্পস্ট করে জানান দিয়েছে। এই জোটের দলগুলো হচ্ছে- বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ-মার্কসবাদী), বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন। এর বাইরে বাংলাদেশের সাম্যবাদী আন্দোলনসহ ছোট ছোট আরও নয়টি বাম ঘরানার রাজনৈতিক দল মিলে গঠিত ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী বাম জোট’ও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বানে অংশগ্রহণের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। সম্প্রতি বাম গণতান্ত্রিক জোট থেকে দুটি দল (বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি এবং গণসংহতি আন্দোলন) বেরিয়ে গিয়ে সমমনা আরও কয়েকটি দলকে নিয়ে গঠন করে ‘গণতন্ত্রমঞ্চ’। এরাও এখন নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়। শুধু তাই নয়, এই দাবিতে তারা বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনে নেমেছে। এ প্রসঙ্গে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বৃহস্পতিবার বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। দিনের ভোট আগের রাতেই হয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীনরা জনমত উপেক্ষা করে প্রশাসনকে ব্যবহার করে, আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন দিয়ে আবারও একটি প্রহসনের নির্বাচন আয়োজন করতে চায়। আমরা তা হতে দিতে পারি না। আমরা মনে করি, নির্বাচন হতে হবে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে। তা না হলে মানুষের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না। তিনি আরও বলেন, বাম-প্রগতিশীল ঘরানার দলগুলোর নিজস্ব শক্তি ও সামর্থ্য কম। ভোটের রাজনীতিতে বড় দলগুলো যেভাবে প্রভাব বিস্তার করে, বাম-প্রগতিশীলরা তা পারে না নিজস্ব শক্তি ও সামর্থ্য কম থাকায়। তার পরেও আমরা আমাদের মতো করে যার যার অবস্থান থেকে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি। এই দাবিতে জনমত গড়ে তোলার চেষ্টা করছি। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছে। বাম-প্রগতিশীল ঘরানার ছোট ছোট দলের পাশাপাশি ধর্মভিত্তিক ইসলামী দলগুলোরও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে তীব্র আপত্তি রয়েছে। ইসলামী দলগুলোর মধ্যে এই মুহূর্তে ব্যাপক সরব ও সক্রিয় হচ্ছে চরমোনাইর পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। হাতপাখা প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিয়ে বেশ সাড়া ফেলে দিয়েছে দলটি। তবে দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ প্রশ্নে তাদের আপত্তি রয়েছে। এ ছাড়াও জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিশ, ইসলামী ঐক্যজোটসহ বেশ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক ইসলামী দল দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নেবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রচার ও মিডিয়া উপকমিটির সহকারী সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম কবির বৃহস্পতিবার বলেন, আমরা জাতীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই। আমরা মনে করি এবং অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছে। আমরা যেকোনো মূল্যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। যা দলীয় সরকারের অধীনে সম্ভব নয়।