স্টাফ রিপোর্টার: বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন না দিলে সরকারের পতন হবে। তিনি বলেন, ‘জনগণ অধিকার আদায়ে রাজপথে নেমে দুর্বার আন্দোলন করছে। আপনারা অবিলম্বে তফশিল প্রত্যাহার করুন। নির্বাচন স্থগিত করে পদত্যাগ করুন। ফরমায়েশি তফশিলে বাংলাদেশে একতরফা কোনো নির্বাচন হবে না। জনগণ সর্বশক্তি দিয়ে তা প্রতিহত করবে।’ শনিবার বিকেলে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব অভিযোগ করেন।
রিজভী বলেছেন, ‘পুলিশের এখন পৌষমাস আর সাধারণ মানুষের সর্বনাশ। নেতাকর্মীদের আটক করে ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার বাণিজ্যের তা-বের কারণে গ্রাম-গঞ্জ, মফস্বল জনপদে কেউ বাড়িঘরে থাকতে পারছেন না। টাকা দিতে না পারলে মিথ্যা মামলায় জেলখানায় নিক্ষেপ করা হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘দেশের জেলখানাগুলোতে বিরোধী দলের নেতাকর্মীতে উপচে পড়ছে। মহাবিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে। অনেককে আটকে রেখে মুক্তিপণ নিচ্ছে পুলিশ। নেতাকর্মীদের না পেয়ে তার স্বজন-আত্মীয়দের আটক করে মারধর করছে। তাদের গ্রেফতার বাণিজ্যের লাইসেন্স দিয়েছেন শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী)। কার্যত দেশে আইনের শাসনের মূলোৎপাটন করা হয়েছে। গায়েবি মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্কে বিএনপি নেতাকর্মীদের এখন দুঃসহ জীবন অতিবাহিত হচ্ছে। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারি বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিকে পরিণত করা হচ্ছে। তাদের স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে দেয়া হচ্ছে না, ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে।’
রিজভী বলেন, ‘কথায় আছে ধর্মের কল বাতাসে নড়ে। শুক্রবার তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আগামীতে ভোট হবে দিনের বেলায়। এর ফলে প্রকারান্তরে তিনি স্বীকার করে নিয়েছেন গত নির্বাচনে ভোট হয়েছে রাতের বেলায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ইতঃপূর্বে সরকারের সঙ্গী রাশেদ খান মেননসহ বহু আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক নির্বাচন কমিশনাররা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। রাতের অন্ধকারে নৌকায় সিল মেরে বাক্স ভরা হয়েছিল। ভোটের অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে দেশের মানুষের।’
রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী) আবারও গায়ের জোরে তার উচ্ছিষ্টভোগী সঙ্গীদের নিয়ে একতরফা ভোটারহীন আরও একটি পাতানো নির্বাচনের তামাশা করছেন। ২০১৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে জনগণের ভোট ডাকাতি করে রাতের গর্ভে সরকার জন্ম দেওয়া হয়েছিল। ২০১৪ সালে দলহীন নির্বাচনে অভিনব কায়দায় দিনে ভোট ডাকাতি করে ১৫৪ জনকে অটো পাশ এমপি বানানো হয়েছিল। ভোটকেন্দ্রে কোনো ভোটার দেখা যায়নি। আর এবার চোর-ডাকাত দিয়ে ভিন্ন কোনো পন্থায় ভোটের নামে আরেকটি ভাঁওতাবাজির প্রহসন করতে মরিয়া, বেপরোয়া ও ভয়ংকর মারমুখী হয়ে উঠেছে আওয়ামী সরকার। ভোটারবিহীন নির্বাচন করার জন্য বিরোধী দলকে নিশ্চিহ্ন করতে পোড়ামাটি নীতি গ্রহণ করে ঘৃণ্য-দূষিত বাতাবরণ তৈরি করতে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘হাজার হাজার বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা প্রহরায় একটি রণক্ষেত্রের দৃশ্যপট রচনা করে আজ্ঞাবহ কাজী হাবিবুল আউয়ালকে দিয়ে নির্বাচনি তফশিল ঘোষণা করেছে। আওয়ামী লীগের ফরমায়েশি তফশিল দেশের ১২ কোটি ভোটার ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। গত ১৫ বছর ধরে ভোটাধিকার বঞ্চিত মানুষ রাজপথে নেমেছে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং শেখ হাসিনার পদত্যাগের ন্যায্য দাবিতে। প্রধানমন্ত্রী তার ভোট ডাকাতির পথ কণ্টকমুক্ত করতে সারা দেশে এক মহা ক্র্যাকডাউন চালাচ্ছে। পুলিশকে নেকড়ের মতো জনগণের ওপর লেলিয়ে দেওয়া হয়েছে।’
রিজভী জানান, শুক্রবার বিকেল থেকে শনিবার বিকাল পর্যন্ত সারা দেশ বিএনপির ৩১০ জন নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এই সময় ৭টি মামলায় ৯৭৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
এদিকে সন্ধ্যায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘২৮ অক্টোবরের নাশকতার ঘটনায় গ্রেফতার বিএনপির শীর্ষ নেতাদের স্বীকারোক্তি নিয়ে ডিবিপ্রধানের বক্তব্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। কারণ ২৮ অক্টোবরের পর নাশকতার যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার সবগুলোতেই সরকারদলীয় ক্যাডার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাই জড়িত। প্রত্যক্ষভাবে ও বিভিন্ন ফুটেজে তা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা বিএনপি নেতাদের আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি যে, নেতারা ডিবি কার্যালয়ে ওই ধরনের কোনো স্বীকারোক্তি দেননি। সরকারের বিশ্বস্ত দোসর হিসাবে গোয়েন্দা প্রধান নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন। ডিবিপ্রধানের মিথ্যাচারের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.