স্টাফ রিপোর্টার: বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র নবম নিরাপত্তা সংলাপ আজ। সংলাপে অংশ নিতে ঢাকা এসে পৌঁছেছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক-সামরিক বিষয়ক ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেজনিক। নিরাপত্তা সংলাপে ওয়াশিংটনের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন মিরা। এবার বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে থাকছেন উত্তর আমেরিকা অনুবিভাগের মহাপরিচালক খন্দকার মাসুদুল আলম। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, সংলাপই সরকারি পর্যায়ে মার্কিন উপ-সহকারী সচিবের একমাত্র কর্মসূচি। এর বাইরে মন্ত্রী বা সচিবের সঙ্গে তার কোনো সাক্ষাৎ নেই। তবে কূটনৈতিক এবং সরকারি বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, সোমবার মধ্যাহ্ন থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মিরা রেজনিক একাধিক বৈঠক করেছেন। যার মধ্যে রাজপথের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি’র একজন নেত্রীও রয়েছেন। মার্কিন দূতাবাসের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে তার আনুষ্ঠানিক এবং অনানুষ্ঠানিক মতবিনিময় হচ্ছে বলেও খবর মিলেছে। নিরাপত্তা সংলাপ বিষয়ে রোববার ওয়াশিংটনের মিডিয়া নোটে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল আঞ্চলিক উন্নয়ন, মানবাধিকার, নিরাপত্তা সহায়তা এবং সন্ত্রাসবাদ দমন নিয়ে আলোচনা করবে। নিরাপত্তা সংলাপ একটি বার্ষিক বেসামরিক আয়োজন, যেখানে আমাদের নিরাপত্তা সম্পর্কের সমস্ত বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা ইন্দো-প্যাসিফিক আঞ্চলিক সমস্যা, নিরাপত্তা ও মানবাধিকার, সামরিক সহযোগিতা, শান্তিরক্ষা, নিরাপত্তা সহায়তা এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আলোচনা করবে। এ সংলাপ আমাদের দুই সরকারের মধ্যেকার সর্বাঙ্গীণ নিরাপত্তা সম্পর্কের অংশ। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা বিষয়ক অংশীদারিত্ব অত্যন্ত শক্তিশালী এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আমাদের দুইটি দেশের স্বার্থ অভিন্ন। ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলকে মুক্ত, অবারিত, শান্তিপূর্ণ এবং সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে দেশ দুইটির দৃষ্টিভঙ্গি একই ধরনের। এ পারস্পরিক লক্ষ্যগুলো অর্জনে সারাবছর বিভিন্ন ধরনের সংলাপ আয়োজিত হয়। ঢাকায় গত ২৩ এবং ২৪শে আগস্ট অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সংলাপের খুব কাছাকাছি সময়ে নিরাপত্তা সংলাপটি (৫ই সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে জানিয়ে ওয়াশিংটনের তরফে বলা হয়, সদ্য সমাপ্ত প্রতিরক্ষা সংলাপে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশি সামরিক বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বেসামরিক ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। তারা সামরিক সম্পর্কের জন্য সুনির্দিষ্ট বিভিন্ন বিষয়, যেমন সামরিক শিক্ষা, শান্তিরক্ষা এবং আগামী বছরের দুর্যোগে সাড়া প্রদান বিষয়ক অনুশীলন এবং বিনিময়সহ আসন্ন সামরিক মহড়া নিয়ে আলোচনা করেন। মার্কিন ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মিরা রেজনিক আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অস্ত্র স্থানান্তরের ব্যুরোর অফিসের তত্ত্বাবধান করেন, যা বিদেশি সামরিক সরঞ্জাম বিক্রয়, তৃতীয় পক্ষের স্থানান্তর এবং অতিরিক্ত প্রতিরক্ষা আইনের মাধ্যমে সরকার থেকে সরকারি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম স্থানান্তরে বছরে ৪০ বিলিয়নের বেশি পরিচালনা করে। তিনি নিরাপত্তা সহায়তা ব্যুরোর অফিসের জন্যও দায়িত্বপ্রাপ্ত। যেটি মার্কিন নিরাপত্তা খাতে বছরে প্রায় ৬ দশমিক ৫ বিলিয়ন সহায়তা পরিচালনা করে; প্রতিরক্ষা বিভাগের নিরাপত্তা খাতের সহায়তা কর্মসূচিতে ৯ বিলিয়ন ডলারের জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্টের তদারকি, পরিকল্পনা এবং যোগান দিতে সমন্বয় করে; এবং প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা এবং সামরিক কার্যকলাপের জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্টকে যোগান দিয়ে থাকে। নিরাপত্তা সংলাপে যা আলোচনা হতে পারে: নিরাপত্তা সংলাপে কৌশলগত অগ্রাধিকার এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যু, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, বেসামরিক নিরাপত্তা সহযোগিতা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা, সন্ত্রাস দমন এবং সহিংস চরমপন্থা মোকাবিলাসহ দুই দেশের মধ্যে অংশীদারিত্ব সম্পর্কিত বিস্তৃত বিষয় রয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দ-প্রাপ্ত খুনি রাশেদ চৌধুরীকে বিচারের মুখোমুখি করার জন্য ফেরতের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করতে পারে বাংলাদেশ। আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা ইস্যুটি হুমকি হিসেবে আলোচনায় আসতে পারে। গত বছরের এপ্রিলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে দুই দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত অষ্টম নিরাপত্তা সংলাপে দুই পক্ষ জিএসওমিয়া এবং এসিএসএ’র মতো প্রতিরক্ষা চুক্তির বিষয়ে ‘গঠনমূলক আলোচনা’ করেছিল। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী। সামরিক তথ্য চুক্তির জেনারেল সিকিউরিটি (জিসোমিয়া) এবং অধিগ্রহণ এবং ক্রস সার্ভিসিং চুক্তি (আকসা) একটি ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সম্পর্ক সক্ষম করতে, প্রতিরক্ষা বাণিজ্য, তথ্য আদান-প্রদান এবং বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক সামরিক পর্যায়ে সহযোগিতার সুযোগ প্রসারিত করা প্রয়োজন। ফলোআপ হিসেবে আজকের সংলাপে বিষয়গুলো আলোচনায় আসতে পারে।