ডিপোতে পর্যাপ্ত তেল মজুদ আছে : বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান
জ্বালানি তেল সংক্রান্ত গুজব সম্পর্কে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিজ্ঞপ্তি
আগামী ৬ মাসের জন্য প্রয়োজনীয় তেল আমদানির প্রক্রিয়া পাইপলাইনে
স্টাফ রিপোর্টার: জ্বালানি তেলের মজুদ নিয়ে স্বার্থান্বেষী একটি মহল ‘অসত্য ও মনগড়া’ তথ্য প্রচার করে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে মন্তব্য করে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ বলেছে, দেশে জ্বালানি তেলের ঘাটতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই। গতকাল বুধবার ‘জ্বালানি তেল সংক্রান্ত গুজব সম্পর্কে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ব্যাখ্যা’ শীর্ষক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একইসঙ্গে ডিপোগুলোতে পর্যাপ্ত তেল মজুদ থাকার তথ্যও জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে ভর্তুকি মূল্যে সরবরাহ করা জ্বালানি তেল ব্যবহারে সবাইকে মিতব্যয়ী ও সাশ্রয়ী হতেও অনুরোধ করা হয়।
এদিকে দেশে জ্বালানি তেলের সংকট হওয়ার কোনও শঙ্কা নেই বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদও। তিনি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ছয় মাসের আমদানি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করে রাখা হয়েছে। ইউক্রেইন ও রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে বিশ্ববাজারে জ্বালানির উচ্চ মূল্যের কারণে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বাঁচাতে সম্প্রতি ডিজেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। এ খাতে ব্যয় সাশ্রয় করে আমদানি কমাতে চায় সরকার। কেননা জ্বালানি তেলের অতি মূল্যের কারণে এ খাতে ব্যয় বাড়ছে। সরকারের এ সিদ্ধান্তের পর এ নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে নানান খবর প্রচার হচ্ছে। এরইমধ্যে বুধবার ঢাকার কারওয়ান বাজার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে জ্বালানি সংকটের শঙ্কা না থাকার কথা বলেছেন বিপিসির চেয়ারম্যান। এরপর বিকালে মন্ত্রণালয় থেকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ‘একটি স্বার্থানেষী মহল, জ্বালানি তেলের মজুদ নিয়ে অসত্য ও মনগড়া তথ্য প্রচার করছে, যা সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। আমরা দৃঢ় প্রত্যয়ে বলছি যে, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের আওতাধীন কোম্পানিসমূহের ডিপোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ জ্বালানি তেল মজুদ রয়েছে। ‘‘বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের কোনো ঘাটতি বা সংকট নেই। সংকটের কোনো আশঙ্কাও নেই। ইতোমধ্যে আগামী ৬ মাসের জন্য প্রয়োজনীয় তেল আমদানির প্রক্রিয়া পাইপলাইনে আছে।’
এদিকে বিপিসির চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনেও একই রকম তথ্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা বলতে চাই যে, আমাদের এখানে কখনো সংকট হওয়ার কোনও সুযোগ নাই। কারণ ৬ মাসের জন্য আমাদের আমদানি শিডিউল পুরো কনফার্ম করা আছে।’ বৈদেশিক মুদ্রার সংকটে জ্বালানি তেল আমদানির এলসি খোলা নিয়ে সংকট দেখা দেয়া সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে সমস্যা সমাধানের জন্য জ্বালানি বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়।
মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, ডিজেল মজুদ রয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন বা ৩২ দিনের। জেট-এ-১ মজুদ রয়েছে ৪৪ দিনের ও ফার্নেস ওয়েল মজুদ রয়েছে ৩২ দিনের। অর্থাৎ মজুদ সক্ষমতা অনুসারে যথেষ্ট পরিমাণ জ্বালানি তেল মজুদ রয়েছে। “পেট্রোল পুরোটাই বাংলাদেশ উৎপাদন করে। অকটেনের প্রায় ৪০ ভাগ উৎপাদন করে।”
এতে তেল আমদানির তথ্য তুলে বলা হয়, চলতি বছর জুলাইয়ে ৯টি জাহাজ থেকে ইতোমধ্যে ২ লাখ ৫৫ হাজার টন ডিজেল, দুটি জাহাজ থেকে প্রায় ৪৩ হাজার টন জেট-এ-১, একটি জাহাজ থেকে ২৪ হাজার ৬৭৭ টন অকটেন এবং দুটি জাহাজ থেকে ৫৩ হাজার ৩৫৮ টন ফার্নেস ওয়েল গ্রহণ করা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগস্টে আটটি জাহাজে ২ লাখ ১৮ হাজার টন ডিজেল, একটি জাহাজে ২৫ হাজার টন জেট-এ-১ এবং একটি জাহাজে ২৫ হাজার টন অকটেন আসবে।
আগামী ছয় মাসের আমদানির পরিকল্পনা তুলে ধরে বলা হয়, এর মধ্যে ৫০ ভাগ জি-টু-জি চুক্তির মাধ্যমে এবং বাকি তেল উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে কেনার আদেশ দেয়া হয়েছে। এ কারণে ঘাটতি হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।
আর সংবাদ সম্মেলনে বিপিসির চেয়ারম্যান আজাদ বলেন, “জ্বালানি তেলের আমদানি, বিতরণ, মজুদ একটি চক্রাকার ফরম্যাটে চলে। আজকে যেটি মনে হচ্ছে কম, তিন দিন পর সেটি অন্যগুলোর থেকে বেশি হয়ে যেতে পারে। “এখানে আমরা হয়তো হঠাৎ করে কারো কাছে শুনতে পারি যে, তেল ৮ দিন বা ৯ দিনের হয়ে গেছে, বোধহয় আর জ্বালানি তেলের এইটা একটা ভ্রান্ত ধারণা। যাদের এই বিষয় সম্পর্কে ধারণা কম, পুরো ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা কম তারা হয়তো এটি বলতে পারে।’
বিপিসির তথ্য অনুসারে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে ৬২ লাখ ৯৯ হাজার ৭৩০ টন জ্বালানি সরবরাহ করা হয়েছে। এরমধ্যে ডিজেল প্রায় ৭৩ শতাংশ, ফার্নেস অয়েল প্রায় ৯ শতাংশ, পেট্রোল ৬ শতাংশ এবং অকটেন প্রায় ৫ শতাংশ। শোনা যাচ্ছে পেট্রোল পাম্পগুলোকে সরবরাহ কম দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বিপিসির চেয়ারম্যান বলেন, “এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত দেয়ার সুযোগই নাই। আমাকে তো সাপ্লাই চেইনের গতিটা ধরে রাখতে হবে।” “যারা এটা করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জেলা প্রশাসনকে বলা হয়েছে,” যোগ করেন তিনি।