ডিজেল ও বিদ্যুতের দামের খক্ষ কৃষকের কাঁধে
কর্মকর্তারা বলছেন উৎপাদন খরচ কিছুটা বাড়লেও কৃষিতে লোকসান হবে না
স্টাফ রিপোর্টার: চলতি বোরো মরসুমে ডিজেল ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি প্রভাব পড়বে কৃষিতে। কৃষকরা গত বারের চেয়ে প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ বাড়তি দামে পানি ব্যবহার করছে। এছাড়া সারের মূল্য গত বছরের তুলনায় এ বছর কেজিতে ছয় টাকা বেড়েছে। এতে উৎপাদিত ফসলের মূল্য অনেক বেড়ে যাবে। ইতোমধ্যে শাক, সবজি, মাছ, মাংস, ডিমসহ সব ধরনের খাদ্যমূল্য বেড়েছে। আগামীতে আরও বাড়বে এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের। তবে কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, উৎপাদন খরচ কিছুটা বাড়লেও কৃষিতে লোকসান হবে না। কৃষকের সমস্যা হবে না। সূত্র জানায়, কৃষক বর্তমানে কৃষি বিভাগের মাধ্যমে কৃষি ঋণ পাচ্ছেন। তারা আগের চেয়ে কম পানি ও কৃষি উপকরণ ব্যবহার করে উৎপাদনের কৌশলরপ্ত করেছে। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বকেয়া থাকলেও সেচকাজে ব্যবহৃত বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে না। পরিস্থিতি বিবেচনায় গতবারের চেয়ে এ বছর ৪ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করছে। এছাড়া আমদানিনির্ভর ডাল ও তেল জাতীয় ফসল উৎপাদনে চার শতাংশ সুদে ঋণ বিতরণ করছে। এসব উদ্যোগের ফলে কৃষকরা সমস্যায় পড়বে না। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রবীন্দ্র শ্রী বড়ুয়া রোববার নিজ কার্যালয়ে বলেন, ডিজেল ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি বৈশ্বিক সংকট। দুনিয়ার সব দেশ ও জাতি পরিস্থিতির শিকার। আমরাও এর বাইরে নই। সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের কারণে আশা করি কৃষক কোনো ধরনের সমস্যায় পড়বে না। এর চেয়ে বেশি মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। চলতি মরসুমে বোরো চাষের খরচ গত বছরের চেয়ে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বেড়েছে। কারণ গত বছর এক লিটার ডিজেলের মূল্য ছিলো ৯৪ টাকা। চলতি বোরো মরসুমে কৃষক এক লিটার ডিজেল কিনছে ১২৪ টাকা। এখানে ৩০ টাকা বেশি ব্যয় হচ্ছে। বিদ্যুতের মূল্য সরকার গত ছয় মাসে চার বার বৃদ্ধি করেছে। ফলে বিদ্যুৎ চালিত পাম্পের জন্য বাড়তি বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। গত বছর ইউরিয়া সারের সরকারি মূল্য ছিলো ১৮ টাকা কেজি। এ বছর সেই সার বিক্রির সরকারি মূল্য ২৪ টাকা। ফলে কৃষককে এখানেও বাড়তি অর্থ গুনতে হচ্ছে। ডিলার পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যে সার বিক্রি হয় না। উচ্চ মূল্যে ক্রয় করতে না চাইলে ডিলারের সাফ কথা সার নেই। পরে আসেন। ফলে বেশি দামে নিতে বাধ্য হচ্ছেন কৃষক। তবে মাঠ পর্যায়ে এ ধরনেরে অনিয়ম দমনে কঠোরভাবে তদারকি হয় বলে জানান কৃষি মন্ত্রণালয়ের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতি কেজি ইউরিয়া সারের ক্রয়মূল্য ৮৬ টাকা। আর সরকার বিক্রি করছে মাত্র ২৪ টাকায়। তাদের প্রশ্ন আর কত ভর্তুকি দেয়া সম্ভব। বাড়তি খরচ মেটাতে কৃষক বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), ফড়িয়া, মহাজনদের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ করছে। আবার বাড়তি খরচে উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য পাওয়া নিয়েও রয়েছে শঙ্কা। কারণ ফসল তোলার সঙ্গে সঙ্গে ধান বিক্রি করে মহাজনের দেনা পরিশাধ করতে হবে। সব মিলিয়ে কৃষকের কপালে ভাঁজ পড়তে শুরু করেছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি একটি বৈশ্বিক সংকট। যার নির্দোষ বলি হচ্ছে কৃষক। বিত্তবান কৃষকের জন্য বিদ্যমান পরিস্থিতি কোনো সংকট নয়। সমস্যা হচ্ছে প্রান্তিক চাষিদের। যার নগদ অর্থের সংকট রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকার প্রান্তিক কৃষকের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর পাঁচশ কোটি টাকা বেশি ভর্তুকি দিচ্ছে। সার ও বীজ দেয়া হচ্ছে বিনামূল্যে। কৃষি মন্ত্রণালয় আগাম প্রস্তুতি হিসাবে বিদ্যুৎ বিভাগ, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ডেসকো এবং ডেসার সঙ্গে বৈঠক করে সেচ কার্যক্রম সচল রাখতে অনুরোধ করেছে। বিদ্যুৎ বিভাগ বলেছে বকেয়া থাকলেও কৃষকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে না। প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে বকেয়া সমন্বয় করা হবে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) সূত্রে জানা গেছে, বোরো মরসুমে প্রায় সাড়ে ১২ লাখ ডিজেল চালিত সেচযন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। আর বিদ্যুৎচালিত সেচযন্ত্রের সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৩৩ হাজার। কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত বছর সরকার ২৭ হাজার কোটি টাকা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে। চলতি বছর সেই ঋণের পরিমাণ বাড়িয়ে ৩১ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। আগে দালাল ধরে কৃষক কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ নিত। এখন উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রান্তিক কৃষকের তালিকা প্রস্তুত করে কার কত টাকা ঋণ প্রয়োজন তা উল্লেখ করে কৃষি ব্যাংকে চাহিদা দিচ্ছে। সেই আলোকে ঋণ পাচ্ছে। দালাল ও মধ্যস্বত্বভোগী না থাকায় কৃষক সহজে ঋণ পাচ্ছে। গ্রামের মহাজন ও এনজিওগুলোর কাছ থেকে ঋণ নেওয়ার হার আগের তুলনায় কমে গেছে। এতে কৃষক উপকৃত হবে। ফসল কাটার পর ধীরে সুস্থে ধান বিক্রি করে ঋণ পরিশোধ করতে পারবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ফিল্ড সার্ভিসের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, ডিজেল ও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কারণে উৎপাদন খরচ খুব বেশি বাড়বে না। তবে কিছুটা বাড়বে। তিনি বলেন, এ বছর এখন পর্যন্ত টার্গেটের চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে। আরও ১৫ দিন বোরো রোপণের কাজ চলবে। আশা করি ফলনও ভালো হবে। আবহাওয়া এখনও অনুকূলে। বাকিটা আল্লাহর রহমত। প্রায় ৫২ লাখ হেক্টর জমিতে এ বছর বোরো ধান চাষাবাদ হচ্ছে বলে জানা গেছে।