স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে ঈদে আগাম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন শনিবার দুই থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে সব টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে গেছে। সকাল ৮টায় কমলাপুর রেলস্টেশনে ৬ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কোনো কোনো কাউন্টারে ১০টার মধ্যে সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। নারীদের একটি কাউন্টার ছাড়া পুরুষদের সব কাউন্টারে ১১টার মধ্যে সব টিকিট শেষ হয়ে যায়। টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ার পরও টিকিটপ্রত্যাশীদের লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। রোববার সকাল ৮টায় ৭ জুলাইয়ের ট্রেনের টিকিট বিক্রি শুরু হওয়া মাত্রই টিকিট কেনার আশায় স্টেশনে থাকবেন তারা। সরেজমিন স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ার পরও লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকশ’ মানুষ। তারা নিজেদের মধ্যে সিরিয়াল করছেন। সেই সিরিয়াল করা নিয়ে নিজেদের মধ্যে গন্ডগোলও হয়েছে। কেউ কেউ অভিযোগ তুলেছেন, পেছনে থাকা অনেক ব্যক্তির সিরিয়াল আগে হয়ে গেছে। শুক্রবার বিকালে টিকিটের জন্য কমলাপুর রেলস্টেশনে আসেন ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী শাফিউলস্নাহ। যখন আসেন, তখন তার সিরিয়াল ছিল ৮৮ নম্বর। শনিবার তার সামনে ১০ জনের মতো থাকতেই টিকিট শেষ হয়ে যায়। তিনি রোববার টিকিট কাটার জন্য লাইনে থেকে গেছেন। সে সময় তার সিরিয়াল নম্বর ২। শাফিউল্লাহ বলেন, ‘এবার কোরবানির পশুবাহী গাড়ি চলাচল করবে। রাস্তায় অনেক যানজট থাকবে। তাই কষ্ট হলেও ট্রেনের টিকিট কাটবো। সে জন্য আজকে সারা দিন ও রাত স্টেশনে থাকব। একবার ট্রেনের টিকিট পেলে যাওয়া সহজ হয়ে যাবে।’
এদিকে, ঈদে ট্রেনের আগাম টিকিট বিক্রির দ্বিতীয় দিন শনিবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সারাদেশে ৫৮ হাজারের বেশি টিকিট বিক্রি হয়েছে। রাজধানীর ছয়টি স্টেশনের কাউন্টার, ওয়েবসাইট এবং রেলসেবা অ্যাপে সারাদেশে এই টিকিট বিক্রি হয়েছে বলে দুপুরে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে টিকিট বিক্রির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘সহজ-সিনেসিস-ভিনসেন জেভি’ সূত্র।
সহজ জানায়, শনিবার আগামী ৬ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টায় সারাদেশে মোট টিকিট বিক্রি হয়েছে ৫৮ হাজার ১৩২টি। এর মধ্যে ২৯ হাজার ৯৮৬টি টিকিট কাউন্টারে এবং ২৮ হাজার ১৪৬টি টিকিট অনলাইনে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া অনলাইনে টিকিটের জন্য দুপুর ১টা পর্যন্ত ছয় কোটির বেশি হিট এসেছে।
অন্যদিকে টিকিট বিক্রির প্রথম চার ঘণ্টায় শুধুমাত্র ঢাকায় বিক্রি হয়েছে ২৩ হাজার ৫২৫টি। এর মধ্যে ঢাকার ছয়টি স্টেশনের কাউন্টার থেকে ১০ হাজার ৮০০টি এবং অনলাইনে ১২ হাজার ৭২৫টি টিকিট বিক্রি হয়েছে।
চাহিদার তুলনায় সংখ্যা কম: এদিকে, চাহিদার তুলনায় ট্রেনের টিকিটের সংখ্যা কম হওয়ায় টিকিটপ্রত্যাশীরা ভোগান্তিতে পড়ছেন উল্লেখ করে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, চাহিদার তুলনায় আমাদের যে সক্ষমতা এবং সেটার যে ফারাক, সেটা যতক্ষণ পর্যন্ত কমাতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত এই পরিস্থিতি থেকে আমরা উত্তরণ করতে পারব না। গতকাল শনিবার রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনে ইসলামী ব্যাংক কর্তৃক ৫০টি মালবাহী ট্রলি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
গত ঈদুল ফিতরে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট বিক্রিতে অব্যবস্থাপনা ছিল স্বীকার করে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেছেন, ‘গত ঈদে অনলাইনে (টিকিট প্রাপ্তির বিষয়ে) বিভিন্ন অভিযোগ ছিল। এবার এখন পর্যন্ত সে ধরনের অভিযোগ পাইনি। গণমাধ্যমে দেখলাম, অনেকেই অনলাইন মাধ্যমে টিকিট কাটতে পেরেছেন। তবে অনলাইনে কোনো ফাঁকফোকর পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রেলমন্ত্রী বলেন, ‘গত বছর অনলাইনে টিকিট পেয়েছেন, এমন কথা কেউ বলেননি, এবার একজন দেখলাম, টিভিতে ট্রেনের টিকিট পাওয়ার কথা বলছেন। ডিজিটাল অপব্যবহার হচ্ছে; এটা রোধে আমরা কাজ করব।’
কাউন্টারে টিকিট না পাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে মন্ত্রী বলেন, ‘চাহিদার তুলনায় ট্রেনের সংখ্যা কম। মাত্র ছয় হাজার টিকিটের জন্য দুই লাখ মানুষ লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। অনলাইনে টিকিটের জন্য ছয় কোটি মানুষ প্রতিদিন ওয়েবসাইট হিট করছে। সবাই টিকিট পাবেন না, এটাই তো স্বাভাবিক।’
এখন ঈদযাত্রায় যাত্রীদের প্রধান চাহিদা এখন ট্রেনের টিকিট উল্লেœখ করে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘এবার গার্মেন্ট কারখানায় একটা স্পেশাল ট্রেন যাবে, যাদের জন্য জয়দেবপুর থেকে টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আমাদের ডুয়েলগেজ ৬০টি কোচ আসছে, আরও ১০০টি পাইপলাইনে আছে। আমাদের ডাবল লাইন এবং পদ্মা সেতু হয়ে গেলে আমাদের সক্ষমতা আরও বেড়ে যাবে। তখন নিরাপদে সব যাত্রী ট্রেনের মাধ্যমে নিজ নিজ গন্তব্যে যেতে পারবেন।’
আয়োজিত অনুষ্ঠানে রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার, ইসলামী ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ম্যানেজার মিজানুর রহমান ভূইয়াসহ উভয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।