ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: দুই বছর ধরে ঝিনাইদহের ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স নবায়ন নেই। আবার ঝিনাইদহ শহরে অনেক ক্লিনিক লাইসেন্স ছাড়াই মাসের পর মাস ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। আর এভাবেই চলছে জেলার ক্লিনিক ও প্যাথলজি ব্যবসা। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা পর্যায়ের ক্লিনিকগুলোতে অহরহ অপচিকিৎসা চলছে। ডাক্তারের অবহেলায় প্রসুতির মৃত্যু ঘটছে। ক্লিনিকগুলোতে চিকিৎসার উন্নত পরিবেশ নেই। নেই সর্বক্ষণ চিকিৎসক বা প্রশিক্ষিত নার্স। ১০ বেডের পরিবর্তে শয্যা বাড়িয়ে ৫০/৬০ জন করে রোগী ভর্তি করা হয়। নীতিমালা ভঙ্গ করার পরও এসব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার নতুন লাইসেন্স পাচ্ছে। পুরানো লাইসেন্স নবায়ন করছে। গত এক সপ্তার ব্যবধানে হরিণাকুন্ডু ও মহেশপুরে চার ক্লিনিকে চারজন প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ নিয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তার ফলাফল এখনো দৃশ্যমান হয়নি। তবে ডাক্তারের বিরুদ্ধে ডাক্তার নিয়ে গঠিত তদন্ত কমিটি কতটুকু শাস্তি নিশ্চিত করবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ দেখা দিয়েছে। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিস থেকে তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহের ৬ উপজেলায় মোট ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টরের সংখ্যা ১৭০টি। এর মধ্যে ক্লিনিক রয়েছে ৮১টি। সুত্রমতে কোটচাঁদপুরের একটি ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন আছে। বাকী ১৬৯টি ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন নেই। এছাড়া ৮৯টি ডায়াগনেস্টিক সেন্টারের কোনটার লাইসেন্স ২০১৮ সাল থেকে নবায়ন করা হয়নি। সবগুলোর লাইসেন্স নবায়ন প্রক্রিয়াধীন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন অফিসের নওশের আলী, নজরুল ইসলাম, ইসরাইল হোসেন ও নজরুল ইসলাম (২) ক্লিনিকের এই ফাইলগুলো দেখভাল করেন। অভিযোগ উঠেছে অর্থের বিনিময়ে তারা মিথ্যা তথ্য দিয়ে চিকিৎসার জন্য অনুপোযুক্ত এ সব ক্লিনিকের কাগজপত্র ঠিক করে বহাল রাখার পক্ষে রিপোর্ট দেন। ক্লিনিকের ফাইল করলে ভালো উপার্জন হয় বলেও সিভিল সার্জন অফিসে কথিত আছে। সরেজমিন সদর উপজেলার ডাকবাংলা, বৈডাঙ্গা, সাধুহাটি, বরোবাজার, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, শৈলকুপা, হরিণাকুন্ডু, মহেশপুরের নেপারমোড় ও খালিশপুরের ক্লিনিকগুলোতে সর্বক্ষণ ডাক্তার থাকে না। ক্লিনিকমালিক, ছেলে. স্ত্রী ও মেয়োরা কোন কোন ক্লিনিকের স্টাফ সেজে কারবার চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অপারেশন থিয়েটার ও রোগীর শয্যা রুমে নোংরা পরিবেশ বিরাজ করে। নেই দক্ষ নার্স। ফলে রোগীরা বিপদে পড়লে তেমন কোনো সহায়তা পান না। ফলে প্রায় এ সব ক্লিনিকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সিভিল সার্জন অফিসে গিয়ে কয়েকটি ক্লিনিকের ফাইল ঘেটে দেখা গেছে, শর্তপূরণ করে তাদের কাগজপত্র খুবই মজবুত ভাবে তৈরী করা হয়েছে। অথচ তাদের ক্লিনিকের পরিবেশ সম্পূর্ণ ভিন্ন। পেপারবুকের সাথে ক্লিনিকের বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম এ ব্যাপারে জানান, জেলার কোনো ক্লিনিকের এখন লাইসেন্স নেই। সবগুলো নবায়নের জন্য অপেক্ষমান। তিনি বলেন, এখন অনলাইনে সরাসরি আবেদন নেয়া হচ্ছে। ঢাকা থেকে যে সব ক্লিনিকের রিপোর্ট চাওয়া হচ্ছে আমরা সেগুলো প্রেরণ করছি। তিনি বলেন, ২৩ আগস্টের মধ্যে সবার নবায়ন না হলে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক ক্লিনিক বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ