জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ : অনানুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তে সারাদেশে গণপরিবহণ ধর্মঘ


স্টাফ রিপোর্টার: জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে পরিবহণ খাত। এর প্রতিবাদে আজ শুক্রবার সকাল থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ও ট্রাক চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা। ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলার যাত্রী পরিবহণ সংগঠনগুলোর নেতারা তাদের এ অনানুষ্ঠানিক এ সিদ্ধান্তের কথা জানান। তবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে পণ্য পরিবহণের একটি সংগঠন। গতকালই (বৃহস্পতিবার) ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন রুটে বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়। নৌপথের লঞ্চ চলাচল বন্ধ না হলেও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আজ বৈঠক ডেকেছেন মালিকরা। এ দাবি আদায়ে তারাও ধর্মঘটে যেতে পারেন বলে জানিয়েছেন একাধিক মালিক। এভাবে তেলের দাম বাড়ানোর ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠন। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
আরও জানা যায়, তেলের বাড়তি দাম প্রত্যাহার অথবা বাসের ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সরকারকে চিঠি দিয়েছেন পরিবহণ মালিকরা। তারা করোনা পরিস্থিতিতে পরিবহণ খাতের লোকসান, যন্ত্রাংশের দাম বৃদ্ধির মধ্যে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। ভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি নিয়ে দু-একদিনের মধ্যে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মালিক ও শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে বসার আলোচনা চলছে।
তেলের দাম বাড়ানোয় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে পরিবহণ নেতারা বলেন, হঠাৎ করেই একসঙ্গে প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর ঘটনা এটাই প্রথম। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল ২৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এতে বাস ও ট্রাকের প্রতি ট্রিপেই খরচ বেড়ে গেছে কয়েক হাজার টাকা। এর মাশুল গুনতে হবে সাধারণ যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের। এদিকে হঠাৎ করে গণপরিবহণ বন্ধের ঘোষণায় বিপাকে পড়েছেন চাকরি প্রার্থীরা। শুক্রবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির পরীক্ষা রয়েছে। এসব পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীদের যারা রাজধানীতে এসেছেন, তারা গণপরিবহণ বন্ধ থাকলে ফিরতে পারবেন না। আবার যারা সকালে গণপরিবহণে আসার পরিকল্পনা করেছেন, তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণে গণপরিবহণ তিন মাস বন্ধ ছিল। ওই লোকসান এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে হঠাৎ প্রতি লিটারে ১৫ টাকা দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্তে মালিকদের মাথায় বজ পাতের মতো হয়েছে। তারা এটা সহ্য করতে পারছেন না। তিনি বলেন, এভাবে দাম বাড়ানোর কারণে প্রতি ট্রিপে কয়েক হাজার টাকা বাড়তি ব্যয় হবে। এর প্রতিবাদে মালিকরা কী সিদ্ধান্ত নেবেন, তা জানি না। তবে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত জানানো হবে। দুটি সেতুর টোল ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে পণ্য পরিবহণ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান, ট্যাংকলরি প্রাইম মুভার মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ। তেজগাঁও সংগঠনের কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় নেতারা বলেন, দুই বছর করোনার দীর্ঘ মেয়াদের প্রভাবের কারণে বেশির ভাগ পরিবহণ বন্ধ ছিল। এর প্রভাব কাটিয়ে উঠতে না উঠতে তেলের দাম বাড়িয়ে পরিবহণ মালিকদের ব্যবসায় বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতু ও মুক্তারপুর সেতুর টোল ২৫৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কয়েকগুণ বাড়বে। এর প্রতিবাদে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য পণ্য পরিবহণ বন্ধ রাখা হবে। সভায় সংগঠনের আহ্বায়ক রুস্তুম আলী খান, যুগ্ম-আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান ও মো. তোফাজ্জল হোসেন মজুমদার, সদস্য সচিব তাজুল ইসলামসহ সিনিয়র নেতারা বক্তব্য দেন।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকালে বাস মালিকরা বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে ধর্মঘট ডাকা না হলেও অনানুষ্ঠানিকভাবে বাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। মালিকরা ফোন করে তাদের বাস বন্ধ রাখতে শ্রমিকদের নির্দেশ দেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, আমরা ধর্মঘট ডাকিনি। তেলের দাম বাড়ায় বাস চালিয়ে লোকসান হবে বলে মনে করছেন মালিকরা। তারা বাস চালাতে রাজি নন। তবে আমরা কোনো সিদ্ধান্ত দিইনি।
এদিন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যালয়ে সংগঠনের সিনিয়র নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে অনানুষ্ঠানিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়-শ্রমিকরা আজ কোনো বাস-ট্রাক-কাভার্ডভ্যান চালাবেন না।
এদিকে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, সরকার যেভাবে তেলের দাম বাড়িয়েছে তাতে ব্যবসা করা যাবে না। আগের তেলের দামের সঙ্গে ভাড়া বাড়ানো হয়নি। আমরা দীর্ঘদিন ভাড়া বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছি। এর মধ্যে আবার তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হলো। এভাবে জ্বালানি খরচ বাড়ালে লঞ্চ চালানো কি সম্ভব? তিনি বলেন, আজ বিষয়টি নিয়ে মালিকরা বৈঠকে বসবেন। ওই বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসবে।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More