স্টাফ রিপোর্টার: এক-এগারোর পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের ভরাডুবির পর ‘জোট’ রাজনীতি নিয়ে নতুন করে ভাবতে শুরু করে দলটি। সেই সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ক্ষমতায় এসে নির্দলীয় ও নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিলের বিষয়টি নিয়ে কার্যক্রম শুরু করলে বিএনপি চারদলীয় জোট সম্প্রসারণের মাধ্যমে ১৮ দলীয় জোট গঠন করে। এর মধ্যদিয়ে ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর) ও সাম্যবাদী দল (একাংশ) ১৮ দলীয় জোটে যোগ দিলে ২০ দলে পরিণত হয় জোট। ২০১৪ সালের নির্বাচনে না যাওয়া, অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ এসব সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে সর্বপ্রথম জোট ত্যাগ করে শেখ আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বাধীন ন্যাপ-ভাসানী। সামরিক জান্তার কায়দায় বিএনপি জোটের সংখ্যাতত্ত্ব ঠিক রাখার জন্য তৎকালীন কল্যাণ পার্টির নেতা আজহারুল ইসলামকে দিয়ে রাতারাতি ন্যাপ-ভাসানী সৃষ্টি করে। তার পরই অল্প সময়ের মধ্যে জোট ত্যাগ করে শেখ শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি- এনপিপি। এক্ষেত্রেও বিএনপি এনপিপি’র মহাসচিব ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের নেতৃত্বে এনপিপি’র জন্ম দেয়। ওই সময় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ- বিএমএল’র তৎকালীন মহাসচিব আতিকুল ইসলাম ও ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনডিপি’র মহাসচিব আলমগীর মজুমদারের নেতৃত্বে দল দুটির অংশ ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করে। একপর্যায়ে বিএনপির দীর্ঘ সময়ের বন্ধু মাওলানা আবদুল লতিফ নেজামীর নেতৃত্বাধীন কাউন্সিল অধিবেশনের মাধ্যমে জোট ত্যাগ করে। এক্ষেত্রেও বিএনপি সংখ্যাতত্ত্বের হিসাব ঠিক রাখতে ইসলামী ঐক্যজোটের জন্ম দেয়। গুলশানের বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে নতুন ইসলামী ঐক্যজোটের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রসের জন্ম দেয়। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন এবং ঐক্যফ্রন্টের মঞ্চে ১/১১ সরকারের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের উপস্থিতি নিয়ে ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক জেবেল রহমান গানির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ এবং খোন্দকার গোলাম মোর্তজার নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এনডিপি জোট ত্যাগ করে। এক্ষেত্রেও বিএনপি সামরিক জান্তার মতো নতুন দল তৈরি করতে ভুল করেনি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ফলাফল বর্জন এবং পরবর্তীতে জাতীয় সংসদে যোগদান নিয়ে ২০ দলীয় জোট ত্যাগ করে ব্যারিস্টার আন্দালিভ রহমান পার্থের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি- বিজেপি এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ত্যাগ করে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তমের কৃষক-শ্রমিক জনতা লীগ। অন্যদিকে, জোট ত্যাগ না করলেও জোটের মধ্যে আলাদা অবস্থান গ্রহণ করে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’ গঠন করলে ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বীরবিক্রমের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এলডিপি, মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপা করার কারণে ক্ষুব্ধ হয় বিএনপি। ফলে বিএনপির প্রচ্ছন্ন পৃষ্ঠপোষকতায় দলগুলোতে ভাঙনের সৃষ্টি হয়। জোটের মধ্যে আস্থা ও সঙ্কটের জন্ম দেয়। এর মধ্যেই জামায়াত নিয়ে বিএনপিতে নতুন ভাবনার জন্ম হয়। বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে ‘জামায়াত ছাড়’ নিয়ে আলোচনা হয়। এরপর জোটের শরিকদের মধ্যে নতুন করে অস্বস্তি সৃষ্টি হয়। স্থায়ী কমিটির অধিকাংশ সদস্যই জামায়াত ছাড়তে একমত হলেও এই ইস্যুতে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি।
পূর্ববর্তী পোস্ট
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ