জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস : প্রতিদিন গড়ে ১৭ জনের প্রাণহানি
চাঁদা দিয়ে চলছে অবৈধ যান : রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবে অনিরাপদ সড়ক
স্টাফ রিপোর্টার: দেশের সড়ক-মহাসড়কে নিষিদ্ধ ঘোষিত থ্রি-হুইলার, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, নসিমন, করিমন অবাধে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে চলাচল বন্ধ ঘোষণার পরও ২২টি জাতীয় মহাসড়কে অবাধে চলছে এসব অবৈধ যান। সরকারি সিদ্ধান্তের সাত বছর পেরিয়ে গেলেও এসব নিষিদ্ধ ছোটগাড়ি সড়ক নিরাপত্তায় বড় হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব বাহনের সংশ্লিষ্টতায় সড়ক, মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও মৃত্যু উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। সড়ক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেছেন, স্থানীয় প্রশাসন ও হাইওয়ে পুলিশের নির্লিপ্ততা এবং কার্যকর তদারকির অভাবে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধের সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাচ্ছে না। এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে স্থানীয় রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা। নিয়মিত চাঁদা দিয়েই সড়কে চলছে এসব ঝুঁকিপূর্ণ যান। অন্যদিকে বিকল্প সড়ক না থাকায় অনেক এলাকায় বাধ্য হয়েই মহাসড়কে উঠে আসে এসব ছোট যানবাহন। ফলে বিভিন্ন উদ্যোগের পরও দেশে সড়ক দুর্ঘটনা কমানো যাচ্ছে না। এই বাস্তবতা সামনে রেখেই আজ দেশে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবস পালিত হচ্ছে।
গত এক যুগে দেশের সড়ক নেটওয়ার্কে নজিরবিহীন উন্নয়ন হয়েছে। তবে সেই তুলনায় সড়ক নিরাপত্তায় কাক্সিক্ষত কাজ হয়নি। সড়কে সর্বশেষ আইনের বাস্তবায়ন নেই। মহাসড়কে মিশ্র গতির যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। ৭০/৮০ কিলোমিটার গতির দূরপাল্লার বাসের পাশেই চলছে ২০-৩০ কিলোমিটার গতির নসিমন, করিমনসহ ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে উল্টোপথেও ‘হঠাৎ যমদূত’ হয়ে চলে আসে এসব অবৈধ যান। ফলে, অনিবার্য দুর্ঘটনা ঠেকানো যাচ্ছে না। মহাসড়কে বাড়ছে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর ঘটনা। দেশে গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। গত ১০ বছরে সড়কে প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন ১৪ জন করে। গতকালই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সংলাপে’ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, গত এক বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৭১টি। এতে আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৬৮ জন এবং মারা গেছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন।
মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে দেশের ২২টি মহাসড়কে থ্রি-হুইলার, অটোরিকশা, অটোটেম্পো ও অযান্ত্রিক যানবাহনের চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষণা করে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। এর আগে মহাসড়কে অটোরিকশা ও অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। তখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, ক্রমবর্ধমান সড়ক দুর্ঘটনা রোধে এই সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রয়োজনে মহাসড়কে থ্রি-হুইলারের জন্য আলাদা লেন চিহ্নিত করে দেয়া হবে। সরকারি সিদ্ধান্তের প্রথম দিকে পুলিশি তৎপরতায় মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল কমে যায়। এ সময় সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যাও প্রত্যাশিতভাবে অনেক হ্রাস পায়। কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যেই মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বাড়তে থাকে। বর্তমানে সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কে অবাধে চলছে নিষিদ্ধ ঘোষিত তিন চাকার যানগুলো। মাঝে একাধিকবার মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধের চেষ্টা করলেও সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যায়নি।
যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ড. এস এম সালেহ উদ্দিন বলেন, মহাসড়কে ধীরগতির এসব ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহন দুর্ঘটনার বড় কারণ। মহাসড়ক সব সময় অবারিত থাকা উচিত। এসব ছোট গাড়ির জন্য আলাদা লেন করতে পারলে সুফল পাওয়া যাবে।
থ্রি-হুইলার নিষিদ্ধ যে ২২ মহাসড়কে : এন ১-কাঁচপুর সেতু (ঢাকা)-মদনপুর-কুমিল্লা-ফেনী-চট্টগ্রাম-রামু (কক্সবাজার), এন ২-কাঁচপুর সেতু (ঢাকা)-ভেলানগর (নরসিংদী)-ভৈরব-সরাই-মাধবপুর-মিরপুর-শেরপুর-সিলেট বাইপাস, এন ৩-জয়দেবপুর চৌরাস্তা-ময়মনসিংহ বাইপাস পয়েন্ট, এন ৪-জয়দেবপুর চৌরাস্তা-টাঙ্গাইল-জামালপুর, এন ৫-আমিনবাজার সেতু (ঢাকা)- মানিকগঞ্জ-পাটুরিয়া ঘাট-খয়েরচর ঘাট-কাশিনাথপুর- হাটিকুমরুল-বগুড়া বাইপাস-রংপুর বাইপাস-সৈয়দপুর বাইপাস-দশমাইল (দিনাজপুর)-ঠাকুরগাঁও-পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা, এন ৬-কাশিনাথপুর (পাবনা)-পাবনা বাইপাস-দাশুড়িয়া-নাটোর বাইপাস-রাজশাহী বাইপাস-নবাবগঞ্জ-সোনামসজিদ-বালিয়াদীঘি স্থলবন্দর, এন ৭-দৌলতদিয়া-ফরিদপুর (রাজবাড়ী মোড়) মাগুরা-ঝিনাইদহ বাইপাস-যশোর বাইপাস-খুলনা সিটি বাইপাস-মংলা, এন ৮-তেঘরিয়া মোড় (ঢাকা)-মাওয়া-কাওড়াকান্দি-ভাঙ্গা-বরিশাল-পটুয়াখালী, এন ১০২- ময়নামতি (কুমিল্লা)-ব্রাহ্মণবাড়িয়া বাইপাস-সরাইল, এন ১০৫-মদনপুর-ভুলতা-মিরেরবাজার-ভোগড়া-কড্ডা (ঢাকা বাইপাস), এন ৪০৫-এলেঙ্গা-নলকা-হাটিকুমরুল, এন ৫০২-বগুড়া- নাটোর, এন ৫০৬-রংপুর-বড়বাড়ি-কুড়িগ্রাম, এন ৫০৭-হাটিকুমরুল-বনপাড়া, এন ৫০৯-বড়বাড়ি-লালমনিরহাট-বুড়িমারী, এন ৫৪০- নবীনগর- ইপিজেড- চন্দ্রা, এন ৭০২-যশোর-মাগুরা, এন ৭০৪ ঝিনাইদহ- কুষ্টিয়া- দাশুড়িয়া, এন ৭০৬-চাঁচড়া মোড় (যশোর)-বেনাপোল, এন ৮০৪ ও ৮০৮-ভাঙ্গা-ফরিদপুর বাইপাস-রাজবাড়ী মোড়, এন ৮০৫ ভাঙ্গা-ভাটিয়াপাড়া-মোল্লাহাট-ফকিরহাট-নোয়াপাড়া এবং এন ৮০৬-ভাটিয়াপাড়া-কালনা-লোহাগড়া-নড়াইল-যশোর।
মহাসড়কে বাজার : গত একযুগে দেশের সড়ক নেটওয়ার্ক বিস্তৃতির পাশাপাশি সড়কে বিশৃঙ্খলাও বেড়েছে। বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আদর্শ কোনো মহাসড়ক তৈরি হয়নি। যখন নতুন একটি সড়ক তৈরি হয় তার আগে থেকেই সড়ককে কেন্দ্র করে হাটবাজার, দোকান ও জনবসতি গড়ে ওঠে। মানুষ অবাধে মহাসড়কের ওপর দিয়ে পায়ে হেঁটে যায়। দেশের আঞ্চলিক সড়ক থেকে জাতীয় মহাসড়ক পর্যন্ত শত শত হাটবাজার সড়ক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি। এসব হাটবাজারের কারণে যানবাহনের নিরবচ্ছিন্ন গতি পাওয়া যায় না। যখন তখন যানজট লেগে স্থবির করে দেয় মানুষের চলাচল। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা, ফেনী, মিরেরসরাই, সীতাকুন্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় অনেক বড় বাজারের কারণে যানজট লাগছে। রাস্তা পারাপার করতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে মারা যাচ্ছেন পথচারীরা। এই পরিস্থিতি দেশের সবকটি মহাসড়কে। কঠোর সিদ্ধান্তের মাধ্যমে মহাসড়কের বাজারগুলো সরাতে না পারলে সড়ক দুর্ঘটনা কোনোভাবেই রোধ করা যাবে না।
সার্ভিস লেন জরুরি : দেশের অধিকাংশ সড়ক মহাসড়কে কোনো সার্ভিস লেন নেই। বিভিন্ন গতির সব ধরনের যানবাহন চলে একই রাস্তায়। ফলে দ্রুতগতির বাস বা ট্রাকের সঙ্গে অল্প গতির থ্রি-হুইলার, অটোরিকশার সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর পরিসংখ্যান বাড়ছে। পুলিশ প্রশাসন ও স্থানীয় রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতায় দেশের ২২ মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধ করা যাচ্ছে না। অন্যদিকে অনেক জেলা উপজেলায় মহাসড়কই একমাত্র পথ। বিকল্প কোনো সড়ক না থাকায় বাধ্য হয়েই মহাসড়কে সব ধরনের যানবাহন চলতে হয়। এ জন্য বিকল্প সড়ক তৈরি করে মহাসড়ককে নির্বিঘ্ন রাখতে হবে। যেসব এলাকায় বিকল্প সড়ক রয়েছে সেগুলোতে কঠোরভাবে মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধ করতে হবে।
মহাসড়ক থ্রি-হুইলারের দখলে : ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ভটভটিসহ থ্রি-হুইলার চলছে অবাধে। ব্যস্ততম এই মহাসড়কে নিষিদ্ধ যানবাহন চলাচলের কারণে বেড়েছে দুর্ঘটনা। কুমিল্লা অংশে দুর্ঘটনার অর্ধেকই তিন চাকার এসব গাড়ির কারণে। মহাসড়কটির কুমিল্লা অংশের ১০৫ কিলোমিটার এলাকায় চলছে ইঞ্জিনচালিত ভটভটি, সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, রিকশা ও ভ্যান। এসব গাড়ির চালকরা ডেকে ডেকে যাত্রী তুলছেন বিভিন্ন গন্তব্যের। এরপর মহাসড়ক হয়েই এসব যানবাহন চলছে বিভিন্ন স্থানে। এই এলাকায় ঢাকা ও চট্টগ্রামগ্রামী দুটি লেনই থ্রি-হুইলারের দখলে। এতে মহাসড়কের এই অংশে প্রায়ই যানজট লেগে থাকে, ঘটে দুর্ঘটনাও। মহাসড়কে চৌদ্দগ্রামের মিয়াবাজার, সুয়াগাজী, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, কোটবাড়ি বিশ্বরোড, আলেখারচর বিশ্বরোড, ময়নামতি, নিমসার, চান্দিনা, গৌরিপুর ও দাউদকান্দি এলাকায় বিভিন্ন ক্রসিং দিয়ে প্রতি মুহূর্তেই এপার-ওপার চলাচল করছে নিষিদ্ধ থ্রি-হুইলার। কয়েকজন চালক বলেন, মহাসড়ক দিয়ে গেলে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছা যায়। এ ছাড়া এমন কিছু জায়গা আছে যেগুলো মহাসড়ক দিয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই। তারা মহাসড়কে তিন চাকার গাড়ির জন্য আলাদা লেন চান।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কয়েকজন বাসচালক জানান, অবৈধ এসব থ্রি-হুইলারের অনেক চালক জানেই না কীভাবে মহাসড়কে গাড়ি চালাতে হয়। তারা হুট করে দ্রতগতির গাড়ির সামনে চলে আসে। যখন ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার গতিতে একটি বাস চলে তখন এসব নিষিদ্ধ যান হুট করে সামনে চলে আসলে আমাদের ব্রেক করে গাড়ি থামাতেও বেকায়দায় পড়তে হয়। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
দেশের ২২টি জাতীয় মহাসড়কে অবৈধ এসব যানবাহনসহ তিন চাকার পরিবহন চলাচল নিষিদ্ধ করা হলেও তা কার্যকর করা যাচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বেড়ে যাওয়ার বড় কারণ নিষিদ্ধ ও অননুমোদিত নসিমন, করিমন, আলমসাধু ও ভটভটির মতো দেশি প্রযুক্তিতে তৈরি যানবাহন। সাম্প্রতিক সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতের সিংহভাগই ছোট ছোট মোটরযানের যাত্রী। সার্বিক প্রেক্ষাপটে এ ধরনের যানবাহন মহাসড়কে চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। তবে ব্যাপক জনগোষ্ঠীর সাশ্রয়ী পরিবহন হিসেবে ব্যবহৃত এসব যানকে পৃথক লেনে চলাচলের ব্যবস্থা করার দাবি উঠেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় যানের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ খসড়া নীতিমালা তৈরি করেছে। তবে সড়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসব যানবাহন নিবন্ধন ও চলাচলের অনুমোদন দেয়া হলে সড়কে প্রাণহানি বাড়বে। থ্রি-হুইলার ও সমজাতীয় যানের ব্যবস্থাপনা ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা-২০২১-এর খসড়ায় নিষিদ্ধ যানবাহনের বৈধতা দেয়ার বিষয়টি যুক্ত রয়েছে।
বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সড়কে কোনো আইনের প্রয়োগ হচ্ছে বলে মনে হয় না। নসিমন, করিমন, আলমসাধু ও ভটভটির মতো যানবাহন চলাচল করার কারণে সড়ক দুর্ঘটনা বাড়ছে। ২২ মহাসড়কে থ্রি-হুইলার বন্ধ করতে পারেনি সরকার। অনেক জেলায় একমাত্র সড়কই হচ্ছে মহাসড়ক। তাই বিকল্প যাতায়াতের ব্যবস্থা না করে শুধু আইন প্রয়োগ করে এসব যানবাহন বন্ধ করা যাবে না।
সড়কে প্রতিদিন গড়ে ১৭ মৃত্যু: দেশে গত এক বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় গড়ে প্রতিদিন ১৭ জনের প্রাণহানি হয়েছে। গত ১০ বছরে সড়কে প্রতিদিন গড়ে মারা গেছেন ১৪ জন। গতকাল রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ ইনিশিয়েটিভ, সেবক ও ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টার আয়োজিত ‘সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সংলাপে’ এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
এ সময় গবেষক কাজী আবুল আল আতাহিয়া বলেন, গত এক বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫ হাজার ৩৭১টি। এতে আহত হয়েছেন ৭ হাজার ৪৬৮ জন, শারীরিকভাবে অক্ষম হয়েছেন ১২ হাজার ৫০০ জন এবং মারা গেছেন ৬ হাজার ২৮৪ জন। তিনি বলেন, চালকদের নিরাপদে গাড়ি চালানোর প্রশিক্ষণ দিতে হবে এবং তাদের সুষ্ঠু-সুন্দর জীবনের ব্যবস্থা করে দিতে হবে।
সংলাপে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. শামছুল হক বলেন, দুর্ঘটনাগুলো আমাদের হাতেই তৈরি। তাই এগুলোকে দুর্ঘটনা বলা যায় না। চালক প্রশিক্ষিত ও দক্ষ না হলে দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। তাই চালকদের দক্ষ বানাতে হবে। দুর্ঘটনা রোধে বিআরটিএ’র দায়িত্ব অনেক উলে¬খ করে তিনি বলেন, চালককে আগে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। গাড়ির ফিটনেস প্রক্রিয়া ও চালককে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে বিআরটিএকে আরও সচেতন হতে হবে।
সংলাপে সেবকের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি খান মোহাম্মদ বাবুলের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন, ড্রাইভার্স ট্রেনিং সেন্টারের পরিচালক নুরুন্নবী শিমুল, রোড সেফটি এলায়েন্সের প্রতিনিধি আবদুল ওয়াহেদ, মোটর ড্রাইভিং অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আবুল বাশার, শাহীন হোসেন মোল্লা, সোনিয়া শিব্রা প্রমুখ।
সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক সহায়তার দাবি : সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। বাংলাদেশ শিশু কল্যাণ পরিষদ মিলনায়তনে গতকাল সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যান অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ৮ হাজারের বেশি প্রাণহানির তথ্য পাওয়া গেছে। দেশের কর্মক্ষম ব্যক্তিরাই সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাচ্ছেন। এর প্রভাব পড়ছে জাতীয় অর্থনীতিতে। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত ব্যক্তি এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের আর্থ-সামাজিক ক্ষতি হচ্ছে।
তিনি বলেন, সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনায় একজন কর্মক্ষম ব্যক্তি প্রাণ হারানোর কারণে ২৪ লাখ ৬২ হাজার ১০৬ টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়। সেই হিসাবে প্রত্যেক নিহত ব্যক্তির পরিবার এ পরিমাণ অর্থ রাষ্ট্র থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়ার হকদার। সেখানে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮তে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তির পরিবারকে ৫ লাখ টাকা ও আহত ব্যক্তিকে ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধান থাকলেও আইন কার্যকরের তিন বছরেও এ ক্ষতিপূরণ প্রদানের কার্যক্রম শুরু হয়নি।
সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের আর্থিক সহায়তা কার্যক্রম জরুরিভিত্তিতে চালুর দাবি জানান তিনি। একই সঙ্গে দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতি কমাতে জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল কার্যকর করার দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্য ও আহত কয়েকজন নিজেদের অভাব অনটন, বঞ্চনার কথা তুলে ধরে সড়ক নিরাপত্তা তহবিল থেকে সাহায্য কামনা করেন।