চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ ২০ জেলায় আ.লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী আ.লীগ
জেলায় বিদ্রোহীদের নিয়ে কী করবে আ.লীগ : বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হচ্ছেন ১৯ জন
স্টাফ রিপোর্টার: জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ১৯ জন। তারা সবাই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। মোট ৪২ জেলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে চেয়ারম্যান পদে। এই প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগ নেতা। ফলে বেশির ভাগ জেলায় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বি আওয়ামী লীগ। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় বলা যায়, আওয়ামী লীগের নেতারাই একে অন্যের বিরুদ্ধে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন। ফলে দলের ভেতরে-বাইরে প্রশ্ন উঠেছে, এত বিদ্রোহী নিয়ে কী করবে আওয়ামী লীগ। গতকাল মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিনে ১৯ জেলায় চেয়ারম্যান পদে একক প্রার্থী। তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। আর অন্যান্য জেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের বসিয়ে দেয়া হলে অনেকটা একতরফা নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা হতে পারে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ীর সংখ্যা অনেক বেড়ে যাবে। বিদ্রোহীদের নিয়ে কী করবে আওয়ামী লীগ এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, ‘আমরা নির্বাচন থেকে কাউকে সরিয়ে দিতে চাই না। যে কেউ নির্বাচন করতে পারবে। এ অধিকার সবার আছে। কিন্তু দল করলে দলের শৃঙ্খলা সবাইকে মেনে চলতে হবে।’ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চায় আওয়ামী লীগ। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক করতে আওয়ামী লীগ কি শেষ পর্যন্ত ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের’ ব্যাপারে নমনীয় থাকবে?- এমন প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া দু-একটি জেলায় আগের বিদ্রোহীদের মনোনয়ন দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে যে কোনো নির্বাচনই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হওয়া উচিত। সেক্ষেত্রে সবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ রাখতে হবে।
বিদ্রোহী প্রার্থী যেখানে রয়েছে মাগুরায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন পংকজ কুমার কুন্ডু। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বিদ্রোহী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন শ্রীপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিহাদ মিয়া। চট্টগ্রামে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন এ টি এম পেয়ারুল ইসলাম। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন কৃষক লীগ নেতা ফয়েজুর রহমান। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন আল মামুন সরকার। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম। কিশোরগঞ্জে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন মো. জিল্লুর রহমান। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন তিন আওয়ামী লীগ নেতা। তারা হলেন- অ্যাডভোকেট হামিদুল আলম চৌধুরী, আজিজুল হক, মো. সেলিম। খুলনায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন শেখ হারুনুর রশীদ। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এস এম মোর্ত্তজা রশিদী দারা, বিএমএ জেলা সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. শেখ বাহারুল আলম। বগুড়ায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মকবুল হোসেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন পৌর আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মান্নান। ফরিদপুরে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন মো. ফারুক হোসেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় অর্থ সম্পাদক মো. শাহাদাৎ হোসেন। পাবনায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন আ স ম আব্দুর রহিম পাকন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক কামিল হোসেন। পিরোজপুরে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন সালমা রহমান হ্যাপী। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বর্তমান জেলা পরিষদ প্রশাসক ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন মহারাজ, নেছারাবাদ উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হাসিনা মনি, ভান্ডারিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন।
ময়মনসিংহে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন ইউসুফ খান পাঠান। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের উপকমিটির নেতা নুরুল ইসলাম রানা। চাঁদপুরে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন ইউসুফ গাজী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি ওসমান গনি। রাজশাহীতে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন মীর ইকবাল। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ সম্পাদক মো. আখতারুজ্জামান। নোয়াখালীতে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু। এখানে দলীয় প্রার্থীকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আলাবক্স টিটু, মুসফিকুর রহমান। সুনামগঞ্জে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন খায়রুল কবির রুমেন। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট। গাজীপুরে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন মোতাহার হোসেন মোল্লা। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক এস এম মোকসেদ আলম। জয়পুরহাটে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন খাজা শামসুল আলম। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল আজিজ মোল্লা, রফিকুল ইসলাম রফিক। রাজবাড়ীতে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন এ কে এম শফিকুল মোর্শেদ। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন পাংশা পৌর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি দিপক কুন্ডু। চুয়াডাঙ্গায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন মাহফুজুর রহমান। বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান জেলা পরিষদের প্রশাসক শেখ সামসুল আরেদীন খোকন, যুবলীগের নেতা আরেফিন আলম রঞ্জু। দিনাজপুরে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন আজিজুল ইমাম চৌধুরী। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক তৈয়ব উদ্দিন চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ফরিদুল ইসলাম। নেত্রকোনায় দলীয় সমর্থন পেয়েছেন অসীত সরকার। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সাবেক যুবলীগ নেতা আবু সাঈদ খান জ্যোতি। নরসিংদীতে দলীয় সমর্থন পেয়েছেন আব্দুল মতিন ভূইয়া। বিদ্রোহী প্রার্থী মনির হোসেন ভূইয়া।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ১৯ জন: সিরাজগঞ্জে আব্দুল লতিফ বিশ্বাস, নারায়ণগঞ্জে চন্দন শীল, লালমনিরহাটে অ্যাডভোকেট মতিয়ার রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে রুহুল আমিন, গোপালগঞ্জে অ্যাডভোকেট মুন্সী মো. আতিয়ার রহমান, বাগেরহাটে শেখ কামরুজ্জামান টুকু, মাদারীপুরে মুনির চৌধুরী, টাঙ্গাইলে ফজলুর রহমান খান ফারুক, ঝালকাঠিতে অ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির, সিলেটে নাসির উদ্দিন খান, বরগুনায় জাহাঙ্গীর কবির, নওগাঁয় অ্যাডভোকেট এ কে এম ফজলে রাব্বি, ঠাকুরগাঁওয়ে মু. সাদেক কোরাইশী, ফেনীতে খায়রুল বশর মজুমদার, ভোলায় আবদুল মমিন টুলু, মুন্সীগঞ্জে মো. মহিউদ্দিন, মৌলভীবাজারে মিছবাহুর রহমান, লক্ষ্মীপুরে মো. শাহজাহান, শরীয়তপুরে ছাবেদুর রহমান খোকা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা জানিয়েছেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে পারত। দলীয় সাংগঠনিক কাঠামোতে কতটা শৃঙ্খলা সেটাও ঝালাই করার সুযোগ পেত। অন্যদিকে এটি নির্বাচন কমিশনের অধীনে প্রথম নির্বাচন। তাও আবার ইভিএমএ। সেক্ষেত্রে সরকার এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারত। যেমন- জেলা পরিষদ নির্বাচন উন্মুক্ত করে অবাধ নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনকে গ্রহণযোগ্য হিসেবে দেশে-বিদেশে তুলে ধরার সুযোগ থাকতো। আবার ভোটার যেহেতু জনপ্রতিনিধিরা এবং ৯০% জনপ্রতিনিধিই আওয়ামী লীগের সেক্ষেত্রে জেলা পরিষদে নির্বাচিত চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগের ঘরেই আসতো। আওয়ামী লীগের একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের সিদ্ধান্ত কোনো বিদ্রোহীকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে বাস্তবায়ন হয়েছে। তবে দুটি জায়গায় মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে না। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন করতে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে দল নমনীয় মনোভাব দেখাতে পারে। তিনি বলেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। সে কারণে দলের সর্বস্তরের শক্তি দরকার। যারা জনপ্রিয় তারাই নির্বাচিত হয়ে আসুক, সেটাই চাই।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেন, কেউ নির্বাচনে না এলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হবে-এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দলের কেউ বিপক্ষে গেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তফসিল অনুযায়ী, ১৭ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে। গতকাল ছিল মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন। ১৮ সেপ্টেম্বর বাছাইয়ের পর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৫ সেপ্টেম্বর।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, চেয়ারম্যান পদে ১৯ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন। ৬১ জেলায় চেয়ারম্যান পদে ১৬২ জন, সংরক্ষিত আসনে ৭১৫ ও সাধারণ সদস্য পদে ১৯৮৩ জন মনোনয়ন দাখিল করেছেন।