কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান হলো মোবারকগঞ্জ চিনিকল। এই চিনিকলে যে সব চাষিরা আখ সরবরাহ করেন তাদের প্রাপ্য চিনিও এবার কমিয়ে দেয়া হলো। ফলে আখচাষিগণ ও চিনিকলের সাথে সংশ্লিষ্ট শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে ব্যাপক অসন্তোষ। গত ২১ মার্চ ২০২২ তারিখ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের বিপণন বিভাগের প্রাধান মাযহার উল হক খান স্বাক্ষরিত একপত্রের মাধ্যমে চিনিকলসম‚হে ২০২১-২০২২ আখমাড়াই মরসুমে আখচাষি খাতে প্রাপ্য চিনি বিক্রির নতুন এ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। চিনি বিক্রিবিলি/বন্টন নীতিমালা মোতাবেক ১৮/১০/৯৯ ইং তারিখের আদেশে বলা হয়েছে, চিনি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষে ইক্ষু চাষখাতে চিনি বরাদ্দের প্রথা প্রবর্তন করা হয়। ইক্ষু চাষিগণ চিনিকলসমূহে সরবরাহকৃত প্রতি ৩০ মণ আখের বিপরীতে ১২ কেজি হারে চিনিকলের ইস্যুকৃত কূপন প্রাপ্তি সাপেক্ষে কর্পোরেশনের নির্ধারিত দরে প্রাপ্য হবেন। এই বরাদ্দের পরিবর্তে এবার টনপ্রতি ৮ কেজি নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে বর্তমানে একজন আখচাষি টন প্রতি প‚র্বে থেকে ২ কেজি চিনি কম পাবেন। চাষিদের আখ চিনিকলে নেয়ার সময় চিনির কুপন দেয়া হয়েছে ও চিনি সংগ্রহের জন্য ৬০ দিন সময়ও বেঁধে দেয়া হয়েছে। অনেক চাষি তাদের চিনি সংগ্রহ করতে পারছেন না নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে। এই মরসুমে মোবারকগঞ্জ চিনিকলে চাষিখাতে কৃষকদের চিনি পাওনা রয়েছে ৬৩৬ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের এরুপ সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে লক্ষ্য করে দেখা যায়, স্থানীয় বাজারে খোলা চিনি ৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ আমাদের চিনিকলে উৎপাদিত দেশি চিনি বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র ৭৫ টাকায়। চিনিকলে ‘প্যাকেট চিনি’ তৈরির খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় কম ম‚ল্যে তা বিক্রি না করা প্রসঙ্গে একটি আবেদনপত্র পাঠায় ২৩ মার্চ ২০২২ তারিখ মোবারকগঞ্জ চিনিকলের শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়ন। উক্ত আবেদনপত্রে উল্লেখ করা হয়, সদর দপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত খোলা চিনির ম‚ল্য প্রতি কেজি ৭৪ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি প্রতি কেজি ৭৫ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। অটো প্যাকেজিং মেশিনের মাধ্যমে ১ কেজি চিনি প্যাকেট করলে তার ম‚ল্য দাঁড়ায় ৭৯.৮৭ টাকা। কিন্তু মোবারকগঞ্জ চিনিকল থেকে প্রতি কেজি প্যাকেট চিনি বিক্রি করা হচ্ছে মাত্র ৭৫ টাকা ম‚ল্যে। এখানে প্রতি কেজি চিনিতে লোকসান গুনতে হচ্ছে ৪.৮৭ টাকা। এ কারণেই মোবারকগঞ্জ চিনিকলের প্যাকেট চিনির ম‚ল্য বৃদ্ধি ব্যতীত বিক্রি না করার বিশেষ অনুরোধ জানানো হয় মোচিক শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের পক্ষ থেকে। মোবারকগঞ্জ চিনিকল শ্রমিক ও কর্মচারী ইউনিয়নের এই আবেদন প্রসঙ্গে ২৯ মার্চ বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের বিপণন বিভাগের প্রধান মো. মাযহারুল উল হক খান স্বাক্ষরিত আর একটি পত্র মারফত জানান, মাহে রমজানকে সামনে রেখে স্পর্শকাতর সময়ে মোবারকগঞ্জ চিনিকলের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের উত্থাপিত প্রস্তাব চিনি শিল্পের সুরক্ষার পরিপন্থী। এ কারণে সদর দপ্তরে প্যাকেটজাত চিনির চাহিদার বিপরীতে নির্বিঘেœ সরবরাহ অব্যাহত রাখার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। একদিকে চিনিকলের ম‚ল নিয়ামক হলো আখ। সোনার বাংলা গড়ার রূপকার এই কৃষক ভাইয়েরা তাদের জমিতে আখ রোপণ করে যখন নিজেদের প্রাপ্য চিনি প্রাপ্তি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন তখন তাদের মনে এই প্রশ্নের উদ্বেগ হচ্ছে যে, কেনো আমরা আখ রোপণ করবো? আমাদের আখ রোপণে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির পরিবর্তে ন্যায্য পাওনা কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে দেশের চিনিকলগুলতে উৎপাদিত দেশীয় প্যাকেট চিনি ৪.৮৭ টাকা লসে বিক্রি করা হচ্ছে। বাজারে এই প্যাকেট চিনিরও রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তবুও কেনো লসে চিনি বিক্রি করা হবে? সুগারমিলসম‚হের প্যাকেট চিনি ঢাকায় নিয়ে খোলাবাজারে বিক্রির কথা বলে তা খাদ্য সরবরাহকারী বড় বড় প্রতিষ্ঠানের আউটলেটে বিক্রি করা হচ্ছে। প‚র্বে যখন খোলা চিনির ম‚ল্য ৬০ টাকা নির্ধারিত ছিলো তখন প্যাকেট চিনির ম‚ল্য ছিলো ৬৫ টাকা।
পরবর্তীতে সরকার চিনির ম‚ল্য ৭৪ টাকা নির্ধারণ করলে প্যাকেট চিনির ম‚ল্য নির্ধারণ করে মাত্র ৭৫ টাকা। ফলে প্রতি কেজি চিনি ৪.৮৭ টাকা লসে বিক্রি করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় সুগার কর্পোরেশনের অন্তর্ভুক্ত চিনিকলগুলোতে উৎপাদিত দেশীয় চিনির চাহিদার ভিত্তিতে ম‚ল্যবৃদ্ধি না করে বরং লস করে চিনি বিক্রি করে চিনি শিল্পকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে সুগার কর্পোরেশনের মধ্যে থাকা একটি চক্র। কালীগঞ্জে অবস্থিত মোবারকগঞ্জ সুগার মিলের চিনিও পাওয়া যাচ্ছে না স্থানীয় খোলাবাজারে।