স্টাফ রিপোর্টার: একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী ইন্তেকাল করেছেন (ইন্নালিল্লাহে……….রাজেউন)। গতকাল সকালে রাজধানীর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৪ বছর। আবু ওসমান চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরেই বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছিলেন। মুক্তিযুদ্ধকালীন ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরীর মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে গত ১২ দিনের মধ্যে দুজন সেক্টর কমান্ডারের জীবনাবসান ঘটলো। গত ২৫ আগস্ট মৃত্যু হয় ৪ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার সি আর দত্তের।
পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে অসুস্থ অবস্থায় আবু ওসমান চৌধুরীকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। সেখানে পরীক্ষার পর তার করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিলো। এর মধ্যে তার ব্রেন টিউমারও ধরা পড়ে। গতকাল বাদ আসর ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জের পাশে সেন্ট্রাল মসজিদে নামাজে জানাজা শেষে বনানী সামরিক কবরস্থানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়েছে। সেক্টরের কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী চাঁদপুর জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক। তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার জয়লাভ করেছেন।
১৯৩৬ সালের ১ জানুয়ারি চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার মদনেরগাঁও গ্রামে জন্ম হয় আবু ওসমান চৌধুরীর। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে বিএ পাস করার পর ১৯৫৮ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কমিশন পান তিনি। ১৯৬৮ সালের এপ্রিল মাসে তিনি পদোন্নতি পেয়ে মেজর হন। একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে যখন ঢাকায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞ অপারেশন সার্চ লাইট শুরু হয়, সেই খবর আবু ওসমান চৌধুরী পান কুষ্টিয়া সার্কিট হাউসে বসে। সে সময় তিনি ছিলেন ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের চতুর্থ উইংয়ের কমান্ডার হিসেবে চুয়াডাঙ্গার দায়িত্বে।
পরদিন সকালে তিনি কুষ্টিয়া থেকে চুয়াডাঙ্গায় পৌঁছান এবং বিদ্রোহ ঘোষণা করে একদল সৈনিক নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। পরে তাকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধের ৮ নম্বর সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব দেয়া হয়।
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ গঠিত হলে আবু ওসমান চৌধুরী এক প্লাটুন সৈন্য নিয়ে মন্ত্রিপরিষদকে গার্ড অব অনার দেন। তার স্ত্রী নাজিয়া খানমও সে সময় রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারকে খাবার ও পানীয়, টাকা-পয়সা পৌঁছে দেয়া এবং প্রয়োজনে ওষুধপত্রের ব্যবস্থা করা, অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ পাহারা দেয়ার মতো কাজ করেছেন সাহসিকতার সঙ্গে। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবু ওসমান চৌধুরীকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল হিসেবে পদোন্নতি দেয়া হয়, বঙ্গবন্ধু তাকে আর্মি সার্ভিস কোরের (এএসসি) পরিচালকের দায়িত্ব দেন। বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সেনা অভ্যুত্থানের সময় একদল সেনাসদস্য আবু ওসমান চৌধুরীকে হত্যার জন্য তার গুলশানের বাড়িতে হামলা করে। বাড়িতে না থাকায় তিনি সেদিন প্রাণে বেঁচে গেলেও নিহত হন তার স্ত্রী নাজিয়া খানম।
পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন আবু ওসমান চৌধুরী। তিনি সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের জ্যেষ্ঠ ভাইস চেয়ারম্যানের পদেও ছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে আবু ওসমান চৌধুরীকে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন-বিজেএমসির চেয়ারম্যান করা হয়। পরে তাকে চাঁদপুর জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।