ঘূর্ণিঝড় মোখা আঘাত হানতে পারে ১২ বা ১৩ মে

উপকূলে উঁচু জলোচ্ছ্বাসের আশঙ্কা : প্রস্তুতির তাগিদ

স্টাফ রিপোর্টার: এপ্রিলে অসহনীয় তাপদাহে অতিষ্ঠ ছিলো জনজীবন। চলতি মে মাসে আরও তীব্র তাপপ্রবাহের আশঙ্কা ছিলো। কিন্তু মাসের শুরুতেই ভোল বদলেছে আবহাওয়ার। এক ধাক্কায় তাপমাত্রা কমে বিরাজ করছে এক ধরনের নাতিশীতোষ্ণ পরিস্থিতি। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার জেরে কিছুটা অস্বস্তি থাকলেও ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি অনেকটাই স্বস্তি দিচ্ছে। কিন্তু বঙ্গোপসাগরে তৈরি হয়েছে ঘূর্ণাবর্ত, যার জেরে বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝরেছে বৃষ্টি। এর মধ্যেই বঙ্গোপসাগরে মাথাচাড়া দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় মোখা।

বিশ্বের বিভিন্ন আবহাওয়া মডেল পর্যবেক্ষণ করেন কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ুবিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ। তিনি জানান, ইউরোপীয় মডেল অনুসারে ১২ মে দুপুর ১২টার পর কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। তবে আবহাওয়ার আমেরিকা মডেল বলছে, ১৩ মে দুপুর ১২টার পর উত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ভোলা জেলার উপকূল দিয়ে ঘূর্ণিঝড়টি স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। গত ২৪ ঘণ্টায় আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলের মধ্যে পার্থক্য কমে এসেছে। এই সময়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’ এর স্থলভাগে আঘাতের সময় প্রায় এক দিন এগিয়েছে। তবে দুটি মডেলের মধ্যে স্থলভাগে আঘাতের সময়ের পার্থক্য ১৮ ঘণ্টা রয়েছে, এখন যা প্রতিদিন কমতে থাকবে। উপকূলে সরকারিভাবে দ্রুত বার্তা পৌঁছুনো, আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা, দ্রুত ধান কাটাসহ নানা প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে জারি করা সতর্কবার্তায় বলা হয়, আগামী ৭ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা পরবর্তী সময়ে ঘনীভূত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি নিয়মিত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ২ মে বঙ্গোপসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৩০ বছরের গড় তাপমাত্রা অপেক্ষা স্থানভেদে ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিলো। সবচেয়ে দুঃসংবাদ হলো, পুরো বঙ্গোপসাগরের মধ্যে সমুদ্রের পানির তাপমাত্রার বিচ্যুতি সর্বোচ্চ চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের উপকূলে। প্রায় ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যে স্থানের সমুদ্রের পানির তাপমাত্রার বিচ্যুতি যত বেশি, সেই স্থানে ঘূর্ণিঝড় শক্তিশালী হওয়ার শঙ্কা তত বেশি।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চলতি মে মাসে সামগ্রিকভাবে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। এ মাসে দেশে ১-৩ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ মাঝারি/তীব্র কালবৈশাখী ঝড় এবং ৩-৫ দিন বজ্র ও শিলাবৃষ্টিসহ হালকা/ মাঝারি ধরণের কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। পাশাপাশি চলতি মাসে দেশের পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ক্কসে.) এবং দেশের অন্যত্র ১-২টি মৃদু (৩৬-৩৮ক্ক সে.)/মাঝারি (৩৮-৪০ক্ক সে.) ধরণের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। সেই সঙ্গে এ মাসে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা সামান্য বেশি থাকতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

এদিকে, বুধবার বিকেলে আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত এক সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে সে বিষয়ে আমরা সতর্কবার্তা জারি করেছি। লঘুচাপটি তৈরি হতে পারে আগামী ৭ মে। সেটি প্রথমে নিম্নচাপ এবং তার পর ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিলে এর নাম হবে মোখা। আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক আরও জানিয়েছেন, লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। তবে এখনই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা যাচ্ছে না।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, লঘুচাপটি ক্রমে শক্তিশালী হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপ, নিম্নচাপ, গভীর নিম্নচাপ ও শেষে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হলে এর নাম হবে ‘মোচা’। আবহাওয়া অধিদপ্তরের মে মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বঙ্গোপসাগরে একটি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে।

অন্যদিকে, দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী এবং কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট অঞ্চলের ওপর দিয়ে পশ্চিম বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে এক নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More