স্টাফ রিপোর্টার: ঘূর্ণিঝড় অশনি ক্রমশ শক্তি হারাচ্ছে। এতে সাগরে দুর্বল হয়ে পড়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি। আর এ কারণে গতি কমে আসছে ঘূর্ণিঝড় অশনি। এ কারণে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের উপকূলে আছড়ে পড়ার পূর্বাভাস থাকলেও তা বিলম্ব হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড়টির বর্তমানে যে গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে বুধবার সকালের মধ্যে দুর্বল হয়ে ভারতের অন্ধ্র ও ওড়িশা উপকূলের দিকে আঘাত হানতে পারে। আঘাত হানার আগে গতি কমে সাধারণ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। অথবা বঙ্গোপসাগরের অবস্থানরত এই ঘূর্ণিঝড়টি উপকূলে আঘাত না হেনে, বৃষ্টি ঝরাতে ঝরাতে সাগরেই এর শেষ পরিণতি হতে পারে বলে বলছেন আবহাওয়াবিদরা। এদিকে ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে মঙ্গলবার সারাদেশে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করেছে।
মঙ্গলবার প্রবল ঘূর্ণিঝড় আসানি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর ও দুর্বল হয়ে পরবর্তী ১২ ঘণ্টার মধ্যে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। মঙ্গলবার মধ্যরাতে এটি ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে ভারতের অন্ধ্র প্রদেশ ও ওড়িশার দিকে ধাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হলেও কোলকাতাসহ পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে ঘূর্ণিঝড় আসানি নিয়ে বাংলাদেশের উৎকণ্ঠার হওয়ার মতো কোনো কারণ নেই। কোনো রকম বিপদের সম্ভাবনা নেই। উপকূলে জলোচ্ছ্বাসেরও সম্ভাবনা নেই। পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত প্রবল ঘূর্ণিঝড় আসানি উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আসানির প্রভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে। বিশেষ করে উপকূলীয় এলাকায় ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। তাই সমুদ্রবন্দরে আগের মতোই দুই নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত এবং নদী বন্দরে দুই নম্বর নৌ হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় আসানি কেন্দ্রের কাছাকাছি এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় আসানির প্রভাবে কক্সবাজারের উপকূল উত্তাল রয়েছে। দুইদিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। মাছ ধরার সব ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি
নিরাপদে অবস্থান করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। সতর্ক বার্তা দেওয়া হয়েছে পর্যটকদেরও। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ৫৭৬ আশ্রয়কেন্দ্র।
আবহাওয়াবিদ ডক্টর আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, বাংলাদেশের উপকূলে এ ঝড়ের আঘাত হানার আশঙ্কা কম। তবে আসানির প্রভাবে বাংলাদেশে ভারী বর্ষণ হচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় আসানি গতিপথ বদলে পশ্চিম বঙ্গের দিকে কিছুটা সরে যাচ্ছে। মঙ্গলবার রাতে ক্রমান্বয়ে দুর্বল হয়ে আসানি প্রথমে আঘাত হানতে পারে অন্ধ প্রদেশের উপকূলে। এর পর তা বাঁক নিয়ে ঢুকতে পারে ওড়িশায়। আসানির প্রভাবে বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, কক্সবাজার খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগে ভারী বর্ষণ হচ্ছে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বুলেটিন-১৩ অনুযায়ী, এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৮৯ কিলোমিটার; যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১১৭ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।
ঘূর্ণিঝড়টি সোমবার চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ১৭০ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে এক হাজার ৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে।
ভারতের আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার মধ্যরাত নাগাদ ভারতের উত্তর অন্ধ্র উপকূল এবং ওড়িশার কাছাকাছি পৌঁছবে আসানি। এরপর বাঁক নিয়ে উত্তর অন্ধ্র এবং ওড়িশা উপকূল ছুঁয়ে এগোতে পারে উত্তর- উত্তরপূর্ব দিকে।
শুক্রবার দক্ষিণ আন্দামান সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর তা ঘনীভূত হয়ে শনিবার নিম্নচাপ এবং পরে গভীর নিম্নচাপের রূপ নেয়। এরপর দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করে রোববার ভোরে পরিণত হয় ঘূর্ণিঝড়ে। তখন এটি ‘অশনি’ নাম পায়। এর পর থেকে বারবার গতিবেগ পরিবর্তন করে শক্তি হারিয়ে দুর্বল হয় ঘূর্ণিঝড় আসানি। আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের নাম দেয় বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার সাইক্লোন-সংক্রান্ত আঞ্চলিক সংস্থা এসকাপ। এ অঞ্চলের ১৩টি দেশের দেয়া নামের তালিকা থেকে পর্যায়ক্রমে নতুন ঘূর্ণিঝড়ের নাম ঠিক করা হয়। অশনি নামটি প্রস্তাব করে শ্রীলংকা। সিংহলী ভাষায় এর অর্থ ক্রোধ।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ