গ্রেড উন্নীতকরণের দাবি কর্মচারীদের : প্রত্যাহার হয়নি মাঠ প্রশাসনে কর্মবিরতি
ব্যাহত হচ্ছে সেবা কার্যক্রম : দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত
স্টাফ রিপোর্টার: কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীরা। শনিবার বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারী সমিতি (বাবিককাকস) এবং বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির (বাকাসস) এক যৌথ সভায় এই সিদ্ধান্ত হয়। ঢাকা ডিসি অফিসে এ বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়েছে। পদবির নাম পরিবর্তন ও বেতন গ্রেড উন্নীতকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে ১ মার্চ থেকে মাঠ প্রশাসনের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীদের ধর্মঘট কর্মসূচি শুরু হয়েছে। ফলে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক (ডিসি), উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের সেবা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। নাম জারি, জলমহাল, চলমান টেন্ডার কার্যক্রম, ইজারা মূল্য আদায়, অর্পিত সম্পত্তির লিজমানি আদায়, মিসকেস ও গণশুনানির মতো গুরুত্বপূর্ণ সেবা বন্ধ। এতে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে মাঠ প্রশাসনে। তবে মার্চ মাসের জাতীয় দিবস সংক্রান্ত কার্যক্রম ধর্মঘটের আওতার বাইরে রাখার সিদ্ধান্তও নিয়েছে সংগঠন দুটি। শনিবার বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আকবর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেন। সভায় বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয়ের কর্মচারী সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. রফিকুল ইসলামসহ অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপস্থিত একজন নেতা বলেন, চলমান কর্মসূচির বিষয়ে সভায় উপস্থিত বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতারা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি পরিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাওয়ার জন্য দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সভায় বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মচারী সমিতি এবং বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও মহাসচিবের কর্মসূচি স্থগিত রাখার প্রস্তাব শতভাগ উপস্থিত নেতাদের কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়।
কালেক্টরেট সহকারী সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আকবর হোসেন বলেন, গত ২ মার্চ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় আমাদের ডেকেছিল। তারা আমাদের দাবি বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলো। জবাবে আমরা বলেছি, নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বসে শনিবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব। তিনি বলেন, আজকে (শনিবার) আমরা ঢাকা কালেক্টরেট রিক্রিয়েশন ক্লাবে বসেছিলাম, দীর্ঘ সময় মিটিং করেছি। মিটিংয়ে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের অফিস, ইউএনও অফিস, এসিল্যান্ড অফিসের সবাইকে নিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
সিদ্ধান্তগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সভায় সর্বসম্মতিক্রমে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আরও সিদ্ধান্ত হয়েছে, মার্চ মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ, জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস এবং মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস থাকায় ওই দিবসের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা রেখে দিবসগুলো পালনে সার্বিক সহায়তা করা হবে।’ বাকাসস সভাপতি আরও জানান, সভায় একটি পর্যবেক্ষণ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কর্মসূচি বাস্তবায়নে এই কমিটি তদারকি করবে।
মাঠ প্রশাসনের কর্মচারী নেতৃবৃন্দ জানান, গত বছরের ২৪ জানুয়ারি মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের পদনাম পরিবর্তন ও গ্রেড উন্নীতকরণে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে গত বছরের ৩১ মার্চ পাঠানো প্রস্তাব এবং ৩০ জুন পাঠানো ব্যাখ্যার আলোকে প্রস্তাব দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্মতি দিতে অর্থ বিভাগের সিনিয়র সচিবকে অনুরোধ করা হয়। তারপরও এ বিষয়ে ফল না আসায় মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে তারা কর্মবিরতিতে গেছেন।
সভায় সব বিভাগ ও জেলা থেকে আসা বাবিককাকস ও বাকাসস’র কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা কমিটির নেতারা জানান, আমরা সরকারের প্রশাসনিক কাজে, আইনশৃঙ্খলা, মোবাইল কোর্ট, দেশে দুর্যোগ-বন্যা, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের নির্বাচন, মহামারি কোভিড-১৯সহ সব ধরনের উন্নয়ন কাজে মাঠ পর্যায়ে বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী কমিশনারদের (ভূমি) সহযোগী হিসাবে আদেশ নির্দেশ পালন করে থাকি। অথচ এ পর্যন্ত ৩২টি দপ্তর ও অধিদপ্তরের ১৬তম গ্রেডের কর্মচারীদের পদবি পরিবর্তনসহ ১০তম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। সম্প্রতি গত ৩১ জানুয়ারি ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা (প্রাক্তন তহশিলদার) এবং ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা (প্রাক্তন সহকারী তহশিলদার) পদ পরিবর্তনসহ বেতন গ্রেড ৫ ধাপ এগিয়ে অর্থাৎ ১৬ ও ১৭তম গ্রেড থেকে ১১ এবং ১২তম গ্রেড দিয়ে আদেশ জারি করা হয়। সবকিছু বিবেচনা করে মাঠ প্রশাসনে কর্মরত সংক্ষুব্ধ কর্মচারীরা কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের চাপ সৃষ্টি করেন।
সভায় বাংলাদেশ বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মচারী সমিতির মহাসচিব কাজী মনিরুজ্জামান বলেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে আমরা আশান্বিত, কিন্তু বছরের পর বছর এমন আশ্বাসে কাজ না হওয়ায় মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ অবস্থায় আছেন, তাই কর্মবিরতি প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিলেও কেউ সেটা গ্রহণ করেনি। তাই বাধ্য হয়ে কর্মবিরতি চালিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে।