স্টাফ রিপোর্টার: ডিজেল, বিদ্যুৎসহ বিভিন্ন খাতে সরকার বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখেছেন সরকার আর কতো ভর্তুকি দেবে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এই প্রতিক্রিয়া জানান। সাম্প্রতিক ইউরোপ সফর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংবাদ সম্মেলন করেন। লিখিত বক্তব্যে সফরের বিস্তারিত তুলে ধরার পর প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশ নেয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, তিনি নির্বাহী ক্ষমতাবলে খালেদা জিয়াকে বাসায় থাকার ব্যবস্থা করেছেন। বাকিটা এখন আদালতের বিষয়। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংঘাত সহিংসতার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী অতীতের বিভিন্ন বিষয় সামনে এনে বলেন, যারা সংঘাত সহিংসতা সৃষ্টি করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে এবং হবে।
খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বাসায় থাকতে দিয়েছি, এটাই কি বেশি নয়? আপনাকে যদি কেউ হত্যার চেষ্টা করতো, আপনি তাকে গলায় ফুলের মালা দিয়ে নিয়ে আসতেন?’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘আপনার পরিবারকে যদি কেউ হত্যা করতো, আর সেই হত্যাকারীকে যদি কেউ বিচার না করে পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিতো, তার জন্য আপনি কি করতেন? প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রেনেড হামলার পর খালেদা জিয়া বললেন, আমি নাকি ভ্যানিটি ব্যাগে করে গ্রেনেড নিয়ে আত্মহত্যা করতে গিয়েছিলাম।
কোটালিপাড়ায় বোমা যখন পুঁতে, এর আগে তার বক্তব্য কি ছিলো? শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না। ভেবেছিলো মরেই তো যাব। মারে আল্লাহ, রাখে কে? আমার বেলায় হচ্ছে, রাখে আল্লাহ, মারে কে। তারপরও আবার খালেদা জিয়ার জন্য এত দয়া দেখাতে বলেন? কেউ এই প্রশ্ন করলে আমার মনে হয় অন্তত একটু লজ্জা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, আমরা অমানুষ নই। অমানুষ নই দেখেই আমার এক্সিকিউটিভ অথরিটি দিয়ে তাকে বাসায় থাকার, চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। বাকিটা আইনগত ব্যাপার। তারপরও দুর্নীতি করে দেশটাকে একেবারে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে। গ্রেনেড হামলায় আমাদের এতজন আহত হন, ২২ জন মারা যান, সংসদে বিষয়টি নিয়ে একদিনও আলোচনা করতে দেয়নি। বিষয়টি নিয়ে আমরা আলোচনা করতে পারিনি। শেখ হাসিনা বলেন, এত বড় অমানবিক যে, তাকেও আমি মানবতা দেখিয়েছি। আমার হাতে যেটুকু পাওয়ার, সেটুকু আমি দেখিয়েছি। আর কত চান, এখন সে অসুস্থ, এই আমি বললাম না, রাখে আল্লাহ মারে কে; মারে আল্লাহ রাখে কে। সেটিই মনে করে বসে থাকুন। এখানে আমার কিছু করার নেই। আমার যতটুকু করার আমি করেছি। এরপর সাংবাদিকরা আরও প্রশ্ন করতে চাইলে সংবাদ সম্মেলন শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি আর প্রশ্নের উত্তর দেবো না। ধন্যবাদ সবাইকে।
সংবাদ সম্মেলনে জ্বালানি তেল, বিদ্যুৎ, সারসহ বিভিন্ন খাত মিলিয়ে সরকারকে বছরে ৫৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখেছেন-আর কতো টাকা ভর্তুকি সরকার দিতে পারবে? ডিজেলের দাম বৃদ্ধির কারণে বাসের ভাড়া বেড়েছে এবং বাজারেও তার প্রভাব পড়েছে জানিয়ে একজন সাংবাদিক প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চেয়েছিলেন, ডিজেলের দাম কমানোর কোনো পরিকল্পনা সরকারের আছে কিনা? প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে বিদেশ থেকে ডিজেল কিনে আনতে হয়। বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে গেছে বলেই দেশেও দাম বাড়াতে হয়েছে। কিন্তু তারপরও অনেক খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে। কেবল জ্বালানি তেলেই ২৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়ার তথ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কতো টাকা ভর্তুকি দেবো? বাজেটের সব টাকা তাহলে ভর্তুকিতে দিয়ে দেবো। তাহলে কিন্তু সব উন্নয়ন প্রকল্প বন্ধ হয়ে যাবে। এটাও দেখতে হবে। কারণ উন্নয়নের টাকাটাই তো তাহলে চলে যাবে ভর্তুকি দিতে। বাস ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে সরকারপ্রধান বলেন, স্বাভাবিকভাবে যখন তেলের দাম বেড়েছে, তারাও একটু সুযোগ নিয়েছে দাম বাড়ানোর। সেই দাম বাড়ানো নিয়ে তাদের যে দাবি ছিল, আমি কিন্তু বিদেশে ছিলাম ঠিক, দেশ থেকে দূরে ছিলাম তা কিন্তু না। এখন ডিজিটাল যুগ, কাজেই আমার সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ ছিল, আলোচনা হয়েছে। তারপর তাদের সঙ্গে অনেক বৈঠক করে, আলোচনা করে একটা সমঝোতায় নিয়ে আসা হয়েছে। বাসের ভাড়া একটা যৌক্তিক পর্যায়ে নিয়ে আসা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, জনগণের প্রতি দায়িত্ব সম্পর্কে আমরা সবসময় সচেতন। করোনার মধ্যে এমন কোনো শ্রেণি-পেশার মানুষ নাই, যাদের আমরা নগদ অর্থ দিয়ে সহায়তা করি নাই। একবার না বার বার দিয়েছি। তিনি বলেন, আমাদের উপায়টা কি? উপার্জনটা কি? আমাদের কি সম্পদ আছে? উন্নত দেশে যান, খাদ্যের জন্য হাহাকার। সুপার মার্কেট খালি, খোদ লন্ডনের কথা বলছি। আমাদের দেশে তো খাদ্যের অভাব হয় নাই। কর না দেয়া এবং কর ফাঁকি দেয়ার প্রবণতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ট্যাক্সটা ফাঁকি দেয়ার দিকেই সবার নজর। তাহলে টাকাটা আসবে কোথা থেকে? তাহলে কি দেউলিয়া হয়ে যেতে হবে?” গ্যাসের সংকট মেটাতে সরকার এলএনজি আমদানি করছে এবং সেখানেও বড় অঙ্কের ভর্তুকি দিতে হচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, মানুষের যাতে কষ্ট না হয়, খাবারের যাতে কষ্ট না হয়, সেদিকে আমাদের নজর আছে। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারের দাম থেকে শুরু করে সবকিছুর দাম কমিয়েছি। যে সার ৯০ টাকা ছিল, সেই সার ১৫-১৬ টাকায় আমরা পৌঁছে দিচ্ছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে সব রকম সহায়তা দিচ্ছি।