কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে হঠাৎ চড়া মসলার বাজার
বাজার তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো বাড়াচ্ছেন পণ্যের দাম
স্টাফ রিপোর্টার: কোরবানি ঈদের এখনো ছয় দিন বাকি। এরই মধ্যে মসলা জাতীয় পণ্যগুলোর দাম ঊর্ধ্বমুখী। দ্বিগুণ বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। চড়া দাম গুণতে হচ্ছে আদা-রসুন, এলাচ এবং দারুচিনি ক্রেতাদের। এমনিতেই নিত্যপণ্যের বাজার দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীল। এর ওপর নতুন করে মসলার দাম বাড়ায় নিম্ন ও মধ্যমআয়ের মানুষের ত্রাহি অবস্থা। তবে ব্যবসায়ীরা মানুষের এই ভোগান্তিকে আমলে না নিয়ে বলছেন, করোনার পর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে পণ্য আমদানিতে খরচ বেড়েছে। দেশের ভেতর পণ্য আনা-নেয়ার খরচও বেড়েছে। এ অবস্থায় ব্যবসায়ীদের টিকে থাকার স্বার্থে অন্য পণ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দাম বৃদ্ধি হতেই পারে। মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েত উল্লাহ দাবি করেন, পাইকারি বাজারে তারা মসলার দাম বাড়াননি। খুচরা ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাবের) ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইনের মতে, বর্তমানে দেশে যে পরিমাণ মসলা মজুত রয়েছে, এতে আরও চার মাস চলবে। তার দাবি, আন্তর্জাতিক বাজারে মসলার দাম বাড়েনি। কিন্তু বাজার তদারকি না থাকার কারণে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছেমতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। খুচরা বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজিতে। একই পেঁয়াজ এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ৩৫-৪০ টাকা দরে। আগের সপ্তাহে রসুনের দাম কেজিপ্রতি ৮০-১২০ টাকা থাকলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০-১৪০ টাকা দরে। আগের সপ্তাহে ৬০ টাকা থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হওয়া আদা এখন বিক্রি হচ্ছে ৮০-১৪০ টাকায়। আমদানি করা শুকনা মরিচের কেজি এখন ৩৭০-৩৯০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে একই মরিচ বিক্রি হয়েছে ৩৬০-৩৮০ টাকা কেজিতে। দেশি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২৩০-২৬০ টাকা কেজিতে। লম্বা জিরা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪৫০ টাকায়।
খুচরা বাজারে শুকনা মরিচের গুঁড়া প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩৮০ টাকা। অথচ এক মাস আগে এই দাম ছিলো ২৮০-৩৬০ টাকা। বিদেশি শুকনা মরিচের গুঁড়া বিক্রি হচ্ছে ৩৪০-৩৮০ টাকা দরে। ১০ টাকা বেড়ে দেশি হলুদের গুঁড়া কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৮০-৩৫০ টাকা দরে। ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে জিরা ও ধনিয়ার গুঁড়া। দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকা কেজিতে। ২২০০ টাকার এলাচ খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ২৩০০-২৪০০ টাকা কেজিতে। গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। কালো গোলমরিচ বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা কেজিতে। কাজু বাদাম বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা দরে। সরকারিভাবে বাজার মনিটরিং প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) মসলার দর বৃদ্ধির বিষয়টি স্বীকার করেছে। তবে তাদের দর-সংক্রান্ত তথ্য কিছুটা গরমিল রয়েছে।
টিসিবির তথ্য মতে, রাজধানীতে দেশি পেঁয়াজ কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ৪৫-৫৫ টাকায়। যা এক সপ্তাহে আগেও বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪৫ টাকা। বিদেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা কেজিতে। যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা কেজিতে। দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ৬০-৮০ টাকায়। এক সপ্তাহ আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৫০-৮০ টাকা কেজিতে। বিদেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১১০-১৪০ টাকায়। মসলার মধ্যে জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০-৪৫০ টাকা। দারুচিনির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০-৪৬০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিলো ৪০০-৪৫০ টাকা কেজিতে। বাজারগুলোতে লবঙ্গের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০০-১২০০ টাকা। এলাচ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকা থেকে ৩০০০ টাকায়। এ ছাড়াও ধনে বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৫০ টাকা কেজিতে এবং তেজপাতা বিক্রি হচ্ছে ১৫০-২০০ টাকায়। যা আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ১২০-১৬০ টাকা কেজিতে। টিসিবির তথ্য মতে, শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২২০-৩০০ টাকা কেজিতে। বিদেশ থেকে আমদানি করা শুকনা মরিচ বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৩৫০-৩৬০ টাকায়। যা এক সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ৩২০-৩৮০ টাকা কেজিতে। ১০ টাকা বেশি দরে দেশি হলুদের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০-২৫০ টাকায়। আমদানি করা হলুদ বিক্রি হচ্ছে ১৬০-২৪০ টাকায়। দেশি আদা বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা কেজিতে। যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৯০-১২০ টাকা।