কী বার্তা দিয়ে গেলেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর
মোদির আমন্ত্রণে দিল্লি সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী : ঈদের পর বাস ও ট্রেন চালু
স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফর করছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। গতকাল দুপুরে বিশেষ বিমানে ঢাকা আসেন তিনি। বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নয়াদিল্লি সফরের জন্য ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণপত্র তুলে দিয়েছেন তিনি। আমন্ত্রণপত্র পেয়ে সুবিধাজনক সময়ে সফরের সম্মতিও জানিয়ে দেয়া হয়েছে জয়শঙ্করকে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা হয়েছে। পাশাপাশি জয়শঙ্করের এ সফরে সিদ্ধান্ত হয়েছে, প্রায় দুই বছর বন্ধ থাকা মৈত্রী চ্রেন ও বাস আবার চলাচল শুরু করবে আসন্ন ঈদুল ফিতরের পর। গতকালই সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করা ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আজ সকালে ভুটানের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করবেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বহনকারী ভারতীয় বিমানবাহিনীর বিশেষ বিমান গতকাল দুপুরে কুর্মিটোলায় বিমান বাহিনী ঘাঁটি বঙ্গবন্ধুতে এলে তাঁকে স্বাগত জানান বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। এ সময় পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন, ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। পরে গণভবনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে। এই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে পারস্পরিক স্বার্থে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সাক্ষাতের পর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। প্রেস সচিব জানান, বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে ১৯৬৫ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়া আন্তসীমান্ত রুটগুলো পুনরায় চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কারণ আমাদের যোগাযোগ বাড়াতেই হবে। যদি দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধি পায়, তবে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ আসাম ও ত্রিপুরা চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। বৈঠকে তারা দেশ দুটির মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশগুলোর মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের সফর সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রেরণা জোগাবে। ভারতীয় মন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে এবং ভালোভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা, কুশিয়ারা ও ফেনী নদীর পানি বণ্টন, বর্তমান কভিড পরিস্থিতি এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব আলোচনায় এসেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে কভিড-১৯ পরিস্থিতি ভালো রয়েছে এবং জয়শঙ্কর বলেন, ভারতে স্বাভাবিকতা ফিরে আসছে। পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন মিয়া এবং বাংলাদেশে ভারতীয় হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামী উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশে আসতে পারা সবসময় আনন্দের। এক বছরের? কিছুটা বেশি? সময় পর আবার ঢাকায় এলাম। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, কোভিড-১৯ মহামারির এই চ্যালেঞ্জের সময়েও আমরা নিয়মিতভাবে একে অন্যের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত থেকেছি। আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে অগ্রগতি হয়েছে। গত বছর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ভারতের রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফর করাকে সম্পর্কের এক মাইলফলক হিসেবে বর্ণনা করে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী কাকতালীয়ভাবে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী।’ প্রতিবেশী হিসেবে নিয়মিত, অনানুষ্ঠানিক ও আন্তরিক আলোচনা দুই দেশের মধ্যে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্কের প্রতিফলন বলেও মন্তব্য করেন জয়শঙ্কর। তিনি বলেন, আমাদের নেতাদের মধ্যে যোগাযোগ আছে। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পক্ষে আমি তাঁর কাছে শুভেচ্ছা পৌঁছে দিয়েছি। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সুবিধাজনক সময়ে আমরা তাকে ভারতে স্বাগত জানানোর অপেক্ষায় রয়েছি। এ সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেন,? ‘দুই দেশের? সম্পর্কের সোনালি অধ্যায় চলছে। গত বছর আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি… বাংলাদেশ ও ভারত ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। দুই দেশ একসঙ্গে যেভাবে কাজ করেছে, তা ইতিহাসে অনন্য। বড় বড় সমস্যা আমরা সমাধান করেছি।’ যে ছোটখাটো সমস্যা আছে, সেগুলো সমাধানের জন্য উভয় পক্ষ থেকে অঙ্গীকার করা হয়েছে বলে জানান এ কে আবদুল মোমেন। পরে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে ইফতার ও নৈশভোজের আয়োজনে যোগ দেন জয়শঙ্কর। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন আয়োজনে এ সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. শাম্মি আকতারসহ দেশের গণ্যমান্য ব্যক্তিগত এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র কর্মকর্তা, ভারতীয় হাইকমিশনের শীর্ষস্থানীয় কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।